

ফুলতলা চা-বাগানে ঢুকতেই রোদেলা আকাশ মুহূর্তেই ঢেকে গেল কালো মেঘে। ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি। বৃষ্টি থেকে বাঁচতে কেউ কেউ আশ্রয় নেন বাগানের বন্ধ কার্যালয়ের বারান্দায়। সেখানেই দেখা মিলল শ্রমিক রাজকুমার রবিদাসের (৪০)।
পিত্তথলির রোগে আক্রান্ত হয়ে রাজকুমার রবিদাস এক মাস হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। চিকিৎসকের পরামর্শ, সেরে উঠতে অস্ত্রোপচার করাতেই হবে। এ জন্য দরকার ৩০ হাজার টাকা। কিন্তু পাঁচ মাস ধরে কাজ না থাকায় টাকা জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি।
প্রায় পাঁচ মাস ধরে ফুলতলা বাগানটি বন্ধ। ফলে শ্রমিকেরা কর্মহীন; মজুরি ও রেশন পাচ্ছেন না। গত রোববার কথা হয় রাজকুমার রবিদাসের সঙ্গে। আক্ষেপ নিয়ে তিনি বললেন, ‘ভালোই চলছিল বাগানটা। হঠাৎ করি কোম্পানি (বাগান পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান) মজুরি-রেশন বন্ধ করি দিল। তবুও কয়েক মাস কাজ করি গেলাম। পেট খালি রাখি আর কত চলে। পরে নিজেরাই কাম বন্ধ করি দিলাম। কেউ বাগানটা খুলে দেয় না। চোখের সামনে বাগানটা নষ্ট হচ্ছে দেখে কষ্ট লাগে।’
আপাতত মালিকপক্ষের কেউই শ্রমিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন না উল্লেখ করে প্রধান করণিক আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ভরা মৌসুমে (জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) বাগানের শুধু শ্রমিকদের প্রতি সপ্তাহের মজুরি পরিশোধে ২২-২৩ লাখ টাকা লাগে। বাকি সময়ে সপ্তাহে লাগে ১৭-১৮ লাখ টাকা। কাজ শুরু হলেও চা প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং নিলামে বিক্রিতে মাসখানেক সময় লেগে যায়। এ সময়ে শ্রমিকদের চার সপ্তাহের (এক মাসে চার সপ্তাহ হিসাবে) মজুরি লাগে। ওই টাকার জোগান কীভাবে হবে, সেটিই বড় বিষয়।
বাগান চালু করার উদ্যোগ
ফুলতলা বাগানটি চালুর ব্যাপারে জানতে চাইলে ব্যবস্থাপক শিহাব উদ্দিন চৌধুরী গতকাল সোমবার দুপুরে মুঠোফোনে বলেন, রোববার ফুলতলাসহ কয়েকটি চা-বাগানের ব্যবস্থাপকদের ঢাকায় চা-বোর্ডের চেয়ারম্যানের বৈঠক হয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ফুলতলা বাগানের সমস্যার সমাধানে তিনি ২৭ মে জুড়ী উপজেলা পরিষদের অডিটরিয়ামে বৈঠকে বসবেন। এ সময় চা-শ্রমিকের প্রতিনিধি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
তবে ওই বৈঠকের বিষয়ে লিখিতভাবে কিছু জানেন না বলে উল্লেখ করেছেন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বাবলু সূত্রধর। তিনি বলেন, এ বিষয়ে তাঁদের লিখিতভাবে কিছু জানানো হয়নি। তবে ফুলতলা বাগানটি আবার চালুর ব্যাপারে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।