পরিবেশ ধ্বংসের অভিযোগে হাসিনা আমলের প্রকল্প থামছে না কেন

বিগত সরকারের আমলে বিভিন্ন অবকাঠামোগত প্রকল্প নিয়ে উন্নয়নের নামে দেশব্যাপী প্রাণ, প্রকৃতি ও পরিবেশের ক্ষতি করা হয়েছে। সেই ধারা এখনো বন্ধ হয়নি। এ রকম একটি প্রকল্প নিয়ে লিখেছেন আনু মুহাম্মদ, গীতি আরা নাসরীন, শায়ের গফুর, ফিরোজ আহমেদ, সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন, পাভেল পার্থ, আদিল মুহাম্মদ খান, সামিনা লুৎফা, আমিরুল রাজিব ও নাঈম উল হাসান

রাজধানীর পান্থকুঞ্জ পার্ক ও হাতিরঝিল ধ্বংস করে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগ সড়ক নির্মাণকাজ বন্ধের দাবিতে বিভিন্ন সময় নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে ছবি: সত্যের পথে

বিগত কয়েক দশকে বিদেশি ঋণে নেওয়া বেশির ভাগ প্রকল্পে পরিবেশ ও জনজীবনের তোয়াক্কা না করেই স্বৈরাচারী কায়দায় ঋণের বোঝা জনগণের ওপর তুলে দিয়ে একের পর এক ‘উন্নয়ন’ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। কোনো রকম সার্বিক পরিকল্পনা ও অংশীজনের মতামত গ্রহণ না করেই নেওয়া এসব প্রকল্প জনজীবনে ভোগান্তি ও মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় নিয়ে আসছে।

সব ধরনের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নীতিমালা ভঙ্গ করে বিকল্প থাকা সত্ত্বেও ভারতীয় ঋণে সুন্দরবন ঘেঁষে তৈরি করা হয় রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র। বিদেশি বিনিয়োগে দেশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ইপিজেড, যেখানে পোশাক কারখানায় সস্তা শ্রম দিয়ে যান দেশের মানুষ। আর ভূগর্ভের পানির স্তর নিচে নামতে থাকে, বর্জ্যে দূষিত হতে থাকে দেশের মাটি, নদী–নালা, খাল–বিল।

পরিবেশ ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মধ্যে সব সময় এ ধরনের বিপরীতমুখিতা তৈরি করে দেশের জনজীবন পর্যুদস্ত করে তোলা হয়েছে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে হুমকির মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। অর্থনৈতিক যে লাভের কথা তুলে পরিবেশ ধ্বংসের যে ন্যায্যতা বা সমর্থন আদায় করা হয়েছিল, একটু গভীর পর্যালোচনা করলেই দেখা যায় যে এসব বয়ান আসলে জনগণের চোখে ধুলা দেওয়া ছাড়া আর কিছুই নয়। এমনকি বিশ্বব্যাংক পর্যন্ত তাদের গবেষণায় বাংলাদেশের সড়ক নির্মাণ ব্যয় ভারত ও চীনের থেকে বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে উচ্চমাত্রায় দুর্নীতি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়া ও দরপত্রে প্রতিযোগিতা না থাকাকে উল্লেখ করেছে।

ঋণ কিংবা বৈদেশিক সাহায্যের মাধ্যমে নেওয়া এসব প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধিতে লাভ হয় দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদ ও আমলা, প্রকল্প পরামর্শক, দেশি–বিদেশি কোম্পানি ও তাদের সহযোগীদের। আর ঋণের বোঝা এসে পড়ে জনগণের ঘাড়ে। বৈদেশিক সাহায্যের নামেও যেসব প্রকল্প আসে, সেগুলোর বিনিময়েও নানাবিধ আর্থিক কিংবা অন্যান্য সুবিধা দিতে হয় সরকারকে।

পরিবেশের কথা বাদ দিলেও শুধু অর্থনৈতিকভাবে অলাভজনক নানা প্রকল্পও কারচুপি করে লাভজনক দেখিয়ে কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। বিগত দশকগুলোতে নেওয়া প্রকল্পগুলোতে কী ধরনের অসাধু প্রক্রিয়ায় কাজ সম্পাদন করা হয়েছে, তার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প।

Scroll to Top