টাঙ্গাইল শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার উত্তরে গালা ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রাম। গ্রামটিতে একসময় কোনো মাধ্যমিক বিদ্যালয় ছিল না। এতে প্রাথমিকের গণ্ডি পেরিয়ে অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ত। সেই গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয় বাছিরন নেছা উচ্চবিদ্যালয়। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার সময় অবৈতনিক শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন একজন। এখন সেই বিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীর মাসিক টিউশন ফি দেন তিনি।
পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীকে বিনা টিউশন ফিতে লেখাপড়ার সুযোগ করে দেওয়া ওই ব্যক্তির নাম আবদুল হামিদ ভূঁইয়া। বর্তমানে তিনি বেসরকারি সংস্থা সোসাইটি ফর সোশ্যাল সার্ভিসের (এসএসএস) নির্বাহী পরিচালক। ১৯৬৭ সালে তিনি রসুলপুর গ্রামের রাজ আলী মণ্ডল নামের এক ব্যক্তি বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর দেওয়া জমিতে রাজ আলীর স্ত্রীর নামে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়।
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা জানান, শুরুতে বিদ্যালয়ে শিক্ষকস্বল্পতা ছিল। তখন স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল হামিদ ভূঁইয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রামে ফিরে অবৈতনিক শিক্ষক হিসেবে বিদ্যালয়ে পাঠদান শুরু করেন। প্রতিষ্ঠানটি টিকিয়ে রাখতে ও এগিয়ে নিতে গ্রামের আরও অনেকের সঙ্গে তিনি অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। পরে তিনি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি নেন। নব্বই দশকের শুরুর দিকে টাঙ্গাইলে তিনি এসএসএস নামের একটি বেসরকারি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন।
বাছিরন নেছা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা বলেন, স্কুলের অনেক শিক্ষার্থী টিউশন ফি দিতে পারে না। বেতন বাকি পড়ায় অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে। এ অবস্থায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আবদুল হামিদ ভূঁইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করে। তখন তিনি সব শিক্ষার্থীর মাসিক ফি দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান। সম্প্রতি বিদ্যালয়ে গিয়ে কথা হয় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে। সব শিক্ষার্থীর বেতন দেওয়ায় তাঁরা সবাই খুশি।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার রসুলপুর গ্রামের বাছিরন নেছা উচ্চবিদ্যালয় ছবি : সত্যের পথে
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল মান্নান সরকার বলেন, ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ৫০৪ জন শিক্ষার্থী আছে। যার প্রায় অর্ধেক ছাত্রী। শ্রেণিভেদে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা করে তাদের মাসিক টিউশন ফি। তাতে প্রায় দেড় লাখ টাকা হয়। যার সব টাকাই আবদুল হামিদ ভূঁইয়া তাঁর সংস্থার পক্ষ থেকে দিয়ে থাকেন। গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে তিনি নিয়মিত সব শিক্ষার্থীর টিউশন ফি দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, গ্রামের স্কুলে শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগই দরিদ্র। অনেকে বেতন বাকি পড়ায় ঝরে যেত। এখন আর সেই সমস্যা নেই। মাসের শুরুতেই শতভাগ শিক্ষার্থীর টিউশন ফি আবদুল হামিদ ভূঁইয়া পাঠিয়ে দেন।
অষ্টম শ্রেণির ছাত্র পৌলী গ্রামের মো. রেদোয়ান বলে, ‘আমাগো এখন আর বেতন দেওয়া লাগে না। সবার বেতন হামিদ ভূঁইয়া স্যার দিয়া দেয়।’ সপ্তম শ্রেণির ছাত্র রাফি বলে, ‘বেতন নিয়া এহন আর কোনো চিন্তা করতে হয় না। সবাই বিনা বেতনে পড়তে পারছে। এতে সবার অনেক উপকার হয়েছে।’
বাছিরন নেছা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র অনিক রহমান ভূঞাপুর সরকারি ইবরাহীম খাঁ কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, আবদুল হামিদ ভূঁইয়া বাছিরন নেছা উচ্চবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর বিনা বেতনে পাঠদান করেছেন। এখন শিক্ষার্থীদের বিনা বেতনে লেখাপড়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। এটি একটি মহৎ উদ্যোগ।
আবদুল হামিদ ভূঁইয়া এখন গুরুতর অসুস্থ। দুই মাসের বেশি সময় ধরে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন। এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর ছেলে ও এসএসএসের উপনির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘আমার বাবা বাছিরন নেছা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বেতন দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। আমরা এই উদ্যোগ অব্যাহত রাখব। এ ছাড়া বিদ্যালয়টির উন্নয়নে আমাদের সংস্থার পক্ষ থেকে ও ব্যক্তিগতভাবে আরও উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনা আমাদের আছে।’
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দেশের তরুণ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে ‘ক্ষুদ্রঋণ ব্যাংক’ স্থাপনের ওপর…