
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার চতুর্থ দিন আজ মহানবমী। অষ্টমীর পর আজ দেবী দুর্গার বিদায়ের সুর বয়ে আনছে মহানবমী তিথি। দশমীতে কৈলাসে ফিরে যাবেন দেবী, আর তাই আজকের দিনটি পূজার শেষ আয়োজনের এক গভীর আবেগের দিন।
সকালে দেবীর মহাস্নান ও ষোড়শ উপচারে পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয় মহানবমীর আনুষ্ঠানিকতা। পরে হয় বলিদান ও নবমী হোম। এদিন দেবীর চরণে নিবেদিত হয় ১০৮টি নীলপদ্ম, নীলকণ্ঠ ও অপরাজিতা ফুল।
নবমী তিথির সূচনা হয় সন্ধিপূজার মাধ্যমে, যা অষ্টমীর শেষ ২৪ মিনিট ও নবমীর প্রথম ২৪ মিনিটজুড়ে পালিত হয়। এই সময়েই বিশেষভাবে পূজা হয় দেবী চামুন্ডার। ১০৮টি মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে, ১০৮টি পদ্মফুল নিবেদনের মধ্য দিয়ে এই পূজা সম্পন্ন হয়।
মহানবমী উপলক্ষে মণ্ডপজুড়ে চলছে শেষ মুহূর্তের অঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ ও যজ্ঞ। যজ্ঞে ব্যবহৃত হচ্ছে ১০৮টি বেলপাতা, আম কাঠ ও ঘি। ভক্তরা দেবীর কাছে প্রার্থনা করছেন মানবকল্যাণ ও অশুভ শক্তির বিনাশের জন্য।
পুরান ঢাকার বাসিন্দা শ্রী অনিরুদ্ধ রায় বলেন, ‘নবমীর ১০৮ পদ্মের পূজা এক বিশেষ আচার। এটি শেষ পূজা, কারণ কাল দেবীকে বিদায় জানাতে হবে। তাই মনটা অনেক ভারাক্রান্ত হয়ে যায়।’
তিনি আরও জানান, নবমী পূজার মাধ্যমে মানবকুলে সম্পদ ও কল্যাণের কামনা করা হয়। বলিদান, শাপলা ও শালুকের মাধ্যমে দেবীর পূজা হয়। নীল অপরাজিতা ফুলও এই পূজার একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার বিজয়া দশমী। সকালেই হবে দশমীর বিহিত পূজা, এরপর দর্পণ বিসর্জনের মাধ্যমে শুরু হবে প্রতিমা বিসর্জনের প্রস্তুতি। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পূজা মণ্ডপে বাজবে বিদায়ের সুর। রাজধানীর অধিকাংশ প্রতিমা বিসর্জন হবে বুড়িগঙ্গা নদীতে।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, বিজয়া দশমী কেবল দেবীর বিদায় নয়, এটি মানুষের মন থেকে কাম, ক্রোধ, হিংসা, লালসা ইত্যাদি অশুভ প্রবৃত্তি বিসর্জনের দিন। এই আত্মশুদ্ধির মধ্য দিয়েই বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার বার্তা বহন করে বিজয়া।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্যমতে, এ বছর সারা দেশে ৩৩ হাজার ৩৫৫টি পূজামণ্ডপ হয়েছে। শুধু রাজধানীতেই মণ্ডপের সংখ্যা ২৫৯টি। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এই বছরের দুর্গোৎসব। তবে ভক্তদের আশা, দেবী আবারও আসবেন আগামি বছর- নতুন আনন্দ আর আশার আলো নিয়ে।