মুক্তি পেয়েছে সিনেমা, জানেন না দর্শকরা।

কোলাজ: সত্যের পথে

ঢাকাই সিনেমা যখন মুক্তির মাঠে পা রাখে, তখন দর্শকপ্রেম ও আগ্রহ ছড়িয়ে দেওয়ার প্রধান হাতিয়ার ছিল প্রচারণা। কিন্তু বর্তমানে সিনেমা থাকলেও সেই প্রচারণা নেই, ফলে দর্শকও নেই। বাংলা প্রবাদ আছে, প্রচারেই প্রসার। ঢাকাই সিনেমার বর্তমান দূর্বল অবস্থার পেছনে এই প্রচারের দৈন্য অনেকাংশে দায়ী। একসময় সিনেমার মুক্তি ছিল উৎসবের মতো। নায়ক-নায়িকা থেকে শুরু করে নির্মাতা-প্রযোজক সবাই মুক্তির আগে প্রচারণায় অংশ নিতেন। সিনেমায় নায়ক-নায়িকাদের দম ফেলার ফুরসত ছিল না। তেমন প্রচারণা এখন কেবল দেখা যায় ঈদকেন্দ্রিক মুক্তি পাওয়া সিনেমাগুলোতে। এর বাইরে অনেকটা চুপিসারেই মুক্তি পায় সিনেমাগুলো। অথচ নব্বই দশকের সিনেমার প্রচার-প্রচারণা ছিল চোখে পড়ার মতো। পত্রিকা, টেলিভিশন ও রেডিওতে নিয়মিত বিজ্ঞাপন চলত। শহরজুড়ে মাইকিং করা হতো, রিকশা, ট্রাক ও ঘোড়ার গাড়িতে পোষ্টার লাগানো হতো, ব্যান্ড পার্টির আয়োজন হতো। প্রতিটি প্রচারণা সিনেমার

খবর সাধারণ দর্শকের ঘরে পৌঁছে দিত। এখন সামাজিক মাধ্যমে শুধু পোষ্টার বা কয়েকটি স্টিল প্রকাশ করলেই প্রচারণা শেষ, মনে করা হচ্ছে। ফলে প্রেক্ষাগৃহে দর্শকশূন্যতার সমস্যা ক্রমেই বাড়ছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে আটটি সিনেমা। বড়ুয়া সুনন্দা কাঁকন পরিচালিত ‘ডট’, মোহাম্মদ ইসলাম পরিচালিত ‘আমার শেষ কথা’, সোয়াইবুর রহমান রাসেল পরিচালিত ‘নন্দিনী’, মুর্তজা অতাশ জমজম পরিচালিত ‘ফেরেশতে’, লিসা গাজী পরিচাললিত ‘বাড়ির নাম শাহানা’, মোস্তাফিজুর রহমান মানিক পরিচালিত ‘স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা’, মাকসুদ হোসেনের ‘সাবা’ ও শফিউল আযম শফিক পরিচালিত ‘উদীয়মান সূর্য’। ঈদের বাইরে গত মাসে সর্বাধিক সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। তবে প্রচারণা দেখা গেছে মাত্র ‘ফেরেশতে’ ও ‘সাবা’ সিনেমার ক্ষেত্রে এবং সেটাও অপ্রতুল। প্রচারণার অভাবে সিনেমাগুলো দর্শকদের কাছে পৌঁছাতে পারেনি। ফলে মুখ থুবড়ে পড়েছে সিনেমাগুলো। আগামী ১৭ অক্টোবর মুক্তি পেতে যাচ্ছে সাদেক সিদ্দিকীর ‘ডাইরেক্ট অ্যাটাক’। এ সিনেমা দিয়ে ছয় বছর পর পর্দায় আসতে চলেছেন পপি। সিনেমাকে ঘিরে এ পর্যন্ত তাঁকে কোনো প্রচার-প্রচারণায় দেখা যায়নি।

প্রচারণা ছাড়া আরও দুই সিনেমা

বিগত মাসের হতাশা কাঁধে নিয়েই চলতি মাসের শুরুতেই দুটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে প্রচারণা ছাড়াই। সুজন বড়ুয়ার ‘বান্ধব’ ছয়টি হলে প্রদর্শিত হচ্ছে, ঢাকার লায়ন সিনেমাস ও উত্তরা ম্যাজিক মুভি থিয়েটারের পাশাপাশি দেশের আরও চারটি প্রেক্ষাগৃহে। নাসিম সাহনিকের ‘ব্যাচেলর ইন ট্রিপ’ ঢাকাসহ দেশের ১১টি প্রেক্ষাগৃহে চলছে, যার মধ্যে পাঁচটি মাল্টিপ্লেক্স- ব্লকবাস্টার সিনেমাস, লায়ন সিনেমাস, গ্রান্ড রিভারভিউ সিনেপ্লেক্স, স্বপ্নীল সিনেপ্লেক্স ও আনন্দ সিনেপ্লেক্স। পরিচালক ও প্রযোজক জানিয়েছেন, তারা সাধ্যমতো প্রচারণা চালাচ্ছেন, কিন্তু বাস্তবে ফেসবুকের বাইরে চোখে পড়ার মতো প্রচারণা দেখা যায়নি।

ছোট হয়ে এসেছে প্রচারণার মাধ্যম

 নব্বই দশকের সিনেমার প্রচারণা আজও সিনেপ্রেমীদের নস্টালজিক করে তোলে। শহরজুড়ে মাইকিং, রিকশা ও ট্রাক, ব্যান্ড পার্টি, বিশাল ফেস্টুন- সবই সিনেমার খবর সাধারণ দর্শকের কাছে পৌঁছে দিত। এখন সেই দৃশ্য অতীত। প্রচারণার মাধ্যম অনেক ছোট হয়ে গেছে। এখন সবাই অনলাইনে বুঝুঁকছেন, সামাজিক মাধ্যম একমাত্র প্রচারের মাধ্যম। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় সীমিত প্রচারণা কতটা কার্যকর হচ্ছে, তা প্রশ্নবিদ্ধ। মফস্বল শহরে সাধারণ দর্শক খবর পাচ্ছেন না। তাই প্রেক্ষাগৃহে সিনেমা দেখতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে না।

প্রেক্ষাগৃহ মালিকরা যা বলছেন

প্রেক্ষাগৃহ মালিকদের মতে, দর্শক প্রেক্ষাগৃহে আসেন সিনেমা দেখতে। কিন্তু বর্তমানে মুক্তি পাওয়া সিনেমাগুলোতে দর্শকের আগ্রহ কম। বাধ্য হয়ে প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শন করা হচ্ছে, ফলে মালিক ও প্রদর্শক উভয়ই লোকসানের মুখোমুখি। চলচ্চিত্র প্রযোজক ও প্রদর্শক মিয়া আলাউদ্দীন বলেন, আগে একটি সিনেমা সফল করতে শুধু অভিনব প্রচারণা নয়, নানা কৌশলও ব্যবহার করা হতো। এখন প্রচারণায় দৈন্য দেখা যায়।

 

 

Leave a Reply

Scroll to Top