
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) বিদেশি শিক্ষার্থীর ভর্তির হার দিন দিন কমছে। মূলত টিউশন ফি বৃদ্ধি, সেশনজট, ভর্তি প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা এবং সুযোগ-সুবিধার ঘাটতিই বিদেশি শিক্ষার্থীদের অনাগ্রহের বড় কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, গত দুই শিক্ষাবর্ষে এই সংকট স্পষ্টভাবে ধরা পড়েছে। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে মাত্র দুজন বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও চলতি ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে একজনও ভর্তি হয়নি। অথচ ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে শুরু করে গড়ে প্রতিবছর প্রায় আটজন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে আসছিলেন।
গত ছয় বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক, স্নাতকোত্তর, এমফিল ও পিএইচডি পর্যায়ে মোট ২৪ জন বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও বর্তমানে অধ্যয়নরত আছেন মাত্র ১৭ জন।
শিক্ষার্থীদের দাবি, কর্তৃপক্ষ যে সুযোগ-সুবিধার আশ্বাস দিয়েছিল তার অর্ধেকও বাস্তবায়ন হয়নি। হলে ইন্টারনেট সমস্যার কারণে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগে ভোগান্তি, সেশনজটের কারণে ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর ঝামেলা, রেজাল্ট প্রকাশে বিলম্ব, এমনকি শিক্ষকদের বাংলায় ক্লাস নেওয়ার কারণে পাঠ বুঝতে অসুবিধাসহ নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাদের।
নেপাল থেকে আসা ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী দিলকাস রেইন বলেন, আমাদের অভিযোগ জানালেও কর্তৃপক্ষ দ্রুত কোনো পদক্ষেপ নেয় না। চার বছরের অনার্স শেষ করতে ছয় বছর লেগে যাচ্ছে। রেজাল্ট বিলম্ব, সেশনজট আর ভাষাগত সমস্যার কারণে বিদেশি শিক্ষার্থীরা দিন দিন হতাশ হয়ে পড়ছে।
ফরেন সেলের কর্মকর্তা এস. এম. সাহদৎ হোসেন জানান, নির্দিষ্ট লোকবল ও অফিস না থাকায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগে সমস্যা হচ্ছে। উপরন্তু বাংলায় ক্লাস, সেশনজট, দেরিতে রেজাল্ট প্রকাশ, হলের অতিরিক্ত ফি, আলাদা ডাইনিং ও টিউটর না থাকা, হলের মান খারাপ হওয়া এসব কারণে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে অনাগ্রহী হয়ে পড়ছেন। তিনি আরও জানান, কর্মকর্তাদের ভাতা না থাকায় অনেকেই দায়িত্ব নিতে আগ্রহী নন।
শাহ আজিজুর রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা ব্যয়ে সুপেয় পানির ব্যবস্থা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রতিটি ফ্লোরে ৬০ হাজার টাকা ব্যয়ে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।
তবে তিনি স্বীকার করেন যে, পূর্ববর্তী প্রশাসন মৌখিকভাবে যে সুযোগ-সুবিধার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তার সবকিছু শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে না। এতে তারা ক্ষুব্ধ হলেও শিগগিরই বিদেশি ও অমুসলিম শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা ডাইনিং চালুর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
হলের অতিরিক্ত ফি প্রসঙ্গে তিনি জানান, বছরে ১০০ ডলার ফি পূর্ববর্তী প্রশাসনের শর্ত অনুযায়ী নেওয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা বারবার ফি কমানোর দাবি জানালেও বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।