

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) এমফিল, পিএইচডি ও পোস্ট-ডক্টরাল প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়া ২০৫ গবেষক চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ভূতাপেক্ষ অনুমোদনের আবেদন দুবার ফিরিয়ে দেওয়ায় ডিগ্রি ঝুলে গেছে তাদের।
ইউজিসি গত ২০ এপ্রিল ও ৪ সেপ্টেম্বর চিঠি দিয়ে স্পষ্ট জানায়, ভূতাপেক্ষ অনুমোদনের কোনো সুযোগ নেই। এর ফলে অনেক গবেষক, যারা দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন বা ইতোমধ্যে থিসিস জমা দিয়েছেন, তারা সময় ও অর্থনৈতিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালে সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তে ইনস্টিটিউটটি গড়ে ওঠে এবং ২০১১ সালের নভেম্বরের সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১২ সালে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর ধাপে ধাপে বিভিন্ন সেশনে মোট ২০৫ জন ভর্তি হন।
গবেষকরা অভিযোগ করে বলেন, বিজ্ঞপ্তি দেখে নিয়ম মেনে ভর্তি হয়েছি আমরা। অনুমোদনের বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্ব। এখন আমাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুল হক বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতাপেক্ষ অনুমোদনের চিঠি পাঠানোই প্রকৃতপক্ষে আইনী অজ্ঞতা। ইউজিসির চিঠিই এর প্রমাণ। কোনো প্রতিষ্ঠান কখনো ভূতাপেক্ষ অনুমোদন পায় না; ভূতাপেক্ষভাবে কেবল শিক্ষার্থী বা ফেলোদের গবেষণাকর্ম গ্রহণ করা যায়, প্রতিষ্ঠানকে নয়। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় ইনস্টিটিউট কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিয়েছে, বেতন দিচ্ছে, বিজ্ঞাপন দিয়ে ভর্তি করেছে, এমনকি অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানের ফেলোদের ইউজিসি ফেলোশিপও দিয়েছে। এসবের দায় কোনোভাবেই গবেষকদের নয়। ফেলোদের সঙ্গে এসব নিছক প্রতারণা, ফৌজদারী অপরাধ। যেকোনো গবেষক বা ফেলো চাইলে আদালতে প্রতারণা ও ক্ষতিপূরণের মামলা করতে পারেন। ভর্তির নামে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করাও চরম অপরাধ। বাস্তবতা হলো, সব ভিসিরা এ প্রতিষ্ঠানের কেবল নাম পরিবর্তন ও আইন-বিধি নিয়ে রাজনীতি করেছেন, কিন্তু কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেননি। ফলেই আজকের এই পরিণতি, এবং এর জন্য সবাইকে এর দায়ভার নিতে হবে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক গবেষক ড. মো. ফেরদৌস রহমান বলেন, যেহেতু ভর্তির বিষয়ে আগে কোনো অনুমোদন ছিল না, উপাচার্য স্যার অনুমোদন নিয়ে আসছেন। তা এখন নতুন করে ভর্তি হতে হচ্ছে। দীর্ঘ ছয় থেকে আট বছর যারা গবেষণা করেছেন তাদের নতুন করে ভর্তির বিষয়ে তিনি বলেন, তুলনামূলক কম সময়ের মধ্যে যেন ডিগ্রি কমপ্লিট করা যায় এ বিষয়টা কনসিডার করা উচিত।
দীর্ঘ ছয় থেকে আট বছর গবেষণার পরেও নতুন করে ভর্তির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার ড. মো. হারুন-অর-রশিদ বলেন, যেহেতু গবেষকদের গবেষণাপত্র প্রকাশ করায় আছে তাই নতুনভাবে ভর্তির পর তুলনামূলক কম সময়ে ডিগ্রি কমপ্লিট হবে আশা করা যায়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শওকাত আলী বলেন, ‘আমি দুবার চেষ্টা করেও অনুমোদন পাইনি। এখন নতুন করে সার্কুলার দেওয়া হবে। কেউ চাইলে রি-অ্যাডমিশন নিতে পারবেন।’