

রোহিঙ্গা সংকটের উৎপত্তি মিয়ানমারে। এর সমাধানও সেখানে আছে মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘অবিলম্বে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই মিয়ানমার ও আরাকান সেনাবাহিনীর ওপর কার্যকর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। রাখাইনে তাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের জন্য কাজ শুরু করতে হবে। এটাই সংকটের একমাত্র সমাধান। মিয়ানমারের বৃহত্তর সংস্কারের অজুহাতে এটি আটকে রাখা উচিত নয়।’
মঙ্গলবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে ‘মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুর পরিস্থিতিবিষয়ক’ উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে এসব কথা বলেন অধ্যাপক ইউনূস। এ সময় তিনি রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সাতটি পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। খবর বাসসের।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘গণহত্যা শুরু হওয়ার আট বছর পরও রোহিঙ্গাদের দুর্দশা অব্যাহত রয়েছে। সংকট নিরসনে উদ্যোগের অভাব রয়েছে। আন্তর্জাতিক অর্থায়নও ভয়াবহ ঘাটতির মুখে পড়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অর্থায়ন কমতে থাকায় একমাত্র শান্তিপূর্ণ বিকল্প প্রত্যাবাসন শুরু করা। চলমান আন্তর্জাতিক সুরক্ষা ব্যবস্থার চেয়ে এতে অনেক কম সম্পদ প্রয়োজন হবে। রোহিঙ্গারা ধারাবাহিকভাবে মাতৃভূমিতে ফেরার ইচ্ছা প্রকাশ করছেন। তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ হিসেবে যারা সম্প্রতি সংঘাত থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন, তাদের প্রত্যাবাসনের অনুমতি দিতে হবে।’
বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সংকটের শিকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের ওপর বিপুল আর্থিক, সামাজিক ও পরিবেশগত চাপ এসে পড়েছে। রাখাইন হয়ে বাংলাদেশে মাদক প্রবাহসহ বিভিন্ন অপরাধ আমাদের সামাজিক কাঠামোকে হুমকির মুখে ফেলছে। আমাদের উন্নয়নগত চ্যালেঞ্জ, যেমন– বেকারত্ব ও দারিদ্র্যের কারণে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের কর্মসংস্থান দেওয়ার সুযোগ নেই।’
সংকটের টেকসই সমাধানের জন্য প্রধান উপদেষ্টা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সাত দফা পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব দেন। সেগুলো হলো– রাখাইনে যুক্তিসংগত স্থিতিশীলতার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য একটি বাস্তব রোডম্যাপ প্রণয়ন করা; রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধ করতে মিয়ানমার ও আরাকান সেনাবাহিনীর ওপর কার্যকর চাপ প্রয়োগ করা এবং সম্প্রতি যারা বাংলাদেশে এসেছেন ও যারা অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, তাদের ফেরত নেওয়ার মাধ্যমে টেকসই প্রত্যাবাসন শুরু করা; রাখাইনকে স্থিতিশীল করতে আন্তর্জাতিক সমর্থন জোগাড় এবং স্থিতিশীলতা পর্যবেক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক বেসামরিক উপস্থিতি নিশ্চিত করা; রাখাইন সমাজ ও শাসনে রোহিঙ্গাদের টেকসই সংহতকরণে আস্থা তৈরির পদক্ষেপে সহায়তা করা; যৌথ প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনার সম্পূর্ণ তহবিলের জন্য দাতাদের সহায়তা একত্র করা; জবাবদিহি ও পুনরুদ্ধারমূলক ন্যায়বিচার অনুসরণ করা; মাদকদ্রব্য-সংশ্লিষ্ট অর্থনীতি ধ্বংস করা এবং আন্তঃসীমান্ত অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই করা।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরার জন্য বিশ্ব আর অপেক্ষা করতে পারবে না। আসুন, আজ আমরা এই সংকট সমাধানের জন্য একসঙ্গে কাজ করার শপথ নিই। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ সর্বাত্মক সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত রয়েছে।’