নেতানিয়াহুর ভাষণ বাজানো হলো গাজার লাউডস্পিকারে

ইসরায়েল-গাজা সীমান্তে ইসরায়েলি অংশে ট্রাকের ওপর লাউডস্পিকার দেখা যাচ্ছে। ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ছবি: রয়টার্স

আন্তর্জাতিক চাপ ও নিন্দার পরও গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে অনড় অবস্থানে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। গতকাল শুক্রবার জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি বলেছেন, ইসরায়েল অবশ্যই গাজায় তার কাজ (হামাসকে নির্মূল) শেষ করবে।

নেতানিয়াহু এদিন ভাষণ দিতে গিয়ে বিশ্বনেতাদের চাপের মুখে পড়েন। তিনি বক্তব্য দেওয়ার জন্য মঞ্চে উঠতেই বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা গণহারে ওয়াকআউট করেন। তবে এরপরও গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন নেতানিয়াহু।

সমালোচকেরা বলছেন, গাজায় সর্বশেষ যুদ্ধবিরতি চুক্তি করতে নেতানিয়াহুর অনিচ্ছার কারণে জিম্মিরা মুক্তি পাচ্ছেন না। ইসরায়েলি পার্লামেন্টে বিরোধী সদস্যরাসহ অনেক রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী অভিযোগ করেছেন, নেতানিয়াহু তাঁর রাজনৈতিক স্বার্থে যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করছেন।

নেতানিয়াহুর এ ভাষণ গাজায় লাউডস্পিকারের মাধ্যমে সম্প্রচার করা হয়েছে। তিনি নিজেও ভাষণে কথাটি স্বীকার করেছেন। তিনি এ সময় গাজায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের হাতে জিম্মি থাকা ইসরায়েলিদের উদ্দেশে সরাসরি একটি বার্তা দেন।

নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা আপনাদের (জিম্মি) ভুলিনি, এক সেকেন্ডও না। ইসরায়েলের মানুষ আপনাদের সঙ্গে আছে। আমরা পিছপা হব না এবং আপনাদের সবাইকে বাড়ি ফিরিয়ে না আনা পর্যন্ত বিশ্রামও নেব না।’

বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ছবি: রয়টার্স

নেতানিয়াহু আরও দাবি করেছেন যে তাঁর ভাষণটি হামাসের নেতারাসহ গাজার মানুষদের সেলফোনে পৌঁছে যাচ্ছে। হামাসকে তিনি আল্টিমেটাম দেন, যদি তারা অস্ত্র সমর্পণ না করে ও জিম্মিদের মুক্তি না দেয়, তবে তাদের মরতে হবে।

সমালোচকেরা বলছেন, গাজায় সর্বশেষ যুদ্ধবিরতি চুক্তি করতে নেতানিয়াহুর অনিচ্ছার কারণে জিম্মিরা মুক্তি পাচ্ছেন না। ইসরায়েলি পার্লামেন্টে বিরোধী সদস্যরাসহ অনেক রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী অভিযোগ করেছেন, নেতানিয়াহু তাঁর রাজনৈতিক স্বার্থে যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করছেন।


আমরা আপনাদের (জিম্মি) ভুলিনি, এক সেকেন্ডও না। ইসরায়েলের মানুষ আপনাদের সঙ্গে আছে। আমরা পিছপা হব না এবং আপনাদের সবাইকে বাড়ি ফিরিয়ে না আনা পর্যন্ত বিশ্রামও নেব না।বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী

পুরো ভাষণ চলাকালে নেতানিয়াহু বারবারই ২০২৩ সালে ইসরায়েলে হামাসের হামলার প্রসঙ্গের উল্লেখ ও গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেছেন। তিনি আঞ্চলিক শত্রুদের বিরুদ্ধে চালানো যুদ্ধ সম্পর্কেও বিস্তারিত তুলে ধরেন। তাঁর হাতে একটি মানচিত্র ছিল, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘দ্য কার্স’। তিনি দেখান, গাজা, ইয়েমেন, ইরান, সিরিয়া, লেবানন, ইরাকি মিলিশিয়াসহ এ অঞ্চলে কার কার সঙ্গে ইসরায়েল লড়াই করেছে।

ভাষণে জাতিসংঘ সদস্যদেশগুলোর উদ্দেশে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা ভেতরে–ভেতরে ঠিকই জানেন, ইসরায়েল আসলে আপনাদের জন্যই লড়াই করছে।’

নেতানিয়াহুর ভাষণ চলাকালীন পুরোটা সময় অধিবেশনে উপস্থিত মার্কিন প্রতিনিধিদলের সদস্যদের হাততালি দিতে দেখা গেছে।

সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে নেতানিয়াহুর ভাষণের বড় অংশ ছিল গাজায় চলমান সংঘাত নিয়ে। দুই বছর ধরে গাজায় চলমান ইসরায়েলি নৃশংসতার পক্ষে সাফাই তুলে ধরেন তিনি। এ সময়ে উপত্যকাটিতে ইসরায়েলি বাহিনী সাড়ে ৬৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করলেও নেতানিয়াহু দাবি করেন, জাতিগত নিধনের সঙ্গে জড়িত নয় তাঁর দেশ।

পুরো ভাষণ চলাকালে নেতানিয়াহু বারবারই ২০২৩ সালে ইসরায়েলে হামাসের হামলার প্রসঙ্গ উল্লেখ ও গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন। তিনি আঞ্চলিক শত্রুদের বিরুদ্ধে চালানো যুদ্ধ সম্পর্কেও বিস্তারিত তুলে ধরেন।

গাজায় ইসরায়েলের জাতিগত নিধনের বিষয়টি উঠে এসেছে জাতিসংঘের গঠন করা একটি স্বাধীন কমিশনের তদন্তেও। একে ‘মিথ্যা অভিযোগ’ আখ্যা দিয়ে জাতিসংঘে নেতানিয়াহু বলেন, ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসই উল্টো বেসামরিক মানুষকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে।

আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধনের অভিযোগে মামলা করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। আর গাজায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আইসিসি। সে কারণে নিউইয়র্ক যাওয়ার পথে ফ্রান্সের আকাশসীমা এড়িয়ে গিয়েছিল তাঁর উড়োজাহাজ।

তবে যুক্তরাষ্ট্র যেহেতু ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় মিত্র আর আইসিসির সদস্য নয়, তাই সেখানে নেতানিয়াহুর গ্রেপ্তার হওয়ার শঙ্কা নেই।

Leave a Reply

Scroll to Top