
ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, যা বিশ্বজুড়ে প্রায় সবারই জানা। এটি শারীরিক কার্যক্ষমতা নিস্ক্রিয় করে মরণব্যাধি রোগ সৃষ্টি করে। হৃৎপিণ্ডের মতো শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ বিকল করে দেয়। স্বাস্থ্য সচেতন মানুষরা এ কারণে ধূমপান করেন না। কিন্তু জানেন, খাবার খাওয়া শেষ করার পরপরই বসে থাকা হৃদরোগের জন্য উল্লেখযোগ্য ক্ষতিকর।
এ বিশেষজ্ঞ বলেন, খাবারের পরপরই বসে থাকা ধমনীর জন্য ধূমপানের থেকেও খারাপ―এ দাবির কোনো প্রমাণ নেই। প্রকৃতপক্ষে শারীরিক কার্যক্রম ছাড়াই দিনে ৮ ঘণ্টার বেশি বসে থাকা খারাপ। যা ধূমপানের মতোই হৃদরোগের ঝুঁকির কারণ।
দাঁড়িয়ে থাকা বা হাঁটার তুলনায় বসে থাকায় বিপাক প্রায় ৩০ শতাংশ ধীর হয়। এ কারণে ওজন বৃদ্ধি পায় ও ধমনীতে চর্বি জমার সম্ভাবনা থাকে। এ থেকে এথেরোস্ক্লেরোসিস হওয়ার ঝুঁকিও থাকে।
সাধারণত, বসে কাজ করা মানুষরা প্রায়ই দীর্ঘক্ষণ নিরবচ্ছিন্নভাবে বসে থাকেন, যা তাদের শারীরিক কার্যকলাপকে সীমিত করে এবং বিপাকীয় কর্মহীনতা, স্থূলতা, গ্লুকোজ সহনশীলতা হ্রাস ও সিস্টেমিক প্রদাহে প্রভাব ফেলে। এসবই হৃদরোগের আগাম লক্ষণ।
দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলে কী হয়:
গবেষণায় দেখা গেছে যে, দিনে ৬-৮ ঘণ্টার বেশি থাকা অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়। অ্যানালাইসিস অব ইন্টারনাল মেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত এক বিশ্লেষণের উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, এতে দেখা গেছে, দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা সর্বজনীন মৃত্যু, হৃদরোগ, ক্যানসারের প্রকোপ এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
এ চিকিৎসকের মতে, দিনে ৮ ঘণ্টার বেশি বসে থাকার কারণে ৩৪ শতাংশ মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ে। অন্যদিকে প্রতিদিন ১ থেকে ৫টি সিগারেট পানে অধূমপায়ীদের তুলনায় হৃদরোগের ঝুঁকি ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। ধূমপান তাৎক্ষণিক ও গুরুতর স্বাস্থ্যগত পরিণতি ডাকে। আর দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার কারণে দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা দেখা দেয়।
উভয় আচরণই স্বাস্থ্যের জন্য ব্যাপক ক্ষতিকর। এরপরও সামগ্রিক সুস্থতার উন্নতির জন্য জীবনযাপনে পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রতিটি আচরণের সমাধান করা উচিত। অন্য একটি উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, দীর্ঘ সময় ধরে শারীরিক নিস্ক্রিয়তার জন্য এলডিএল কোলেস্টেরলের (খারাপ কোলেস্টেরল) বৃদ্ধি পায়। যা উচ্চ পরিমাণ হলে হৃদরোগের জন্য প্রধান ঝুঁকির কারণ।
হৃদরোগ জনিত নয় এমন ব্যাপারে কথা বলতে গেলে, দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার কারণে পেশীর ওপরও প্রভাব পড়তে পারে, যা থেকে পেশী শক্ত হতে পারে। বিশেষ করে ঘাড়, কাঁধ ও পিঠের নিচের অংশ। এটি রক্ত সঞ্চালন হ্রাসের সঙ্গে দুর্বল ভঙ্গিমা ও পেশীর ভারসাম্যহীনতার বিকাশের কারণ হতে পারে।
এটি পা এবং গ্লুটিয়াল পেশীকে দুর্বল করে দিতে পারে এবং ক্ষয় করতে পারে। পায়ের মতো বৃহৎ পেশীগুলো হাঁটা ও স্থিতিশীল করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পেশীগুলো দুর্বল হলে, তাহলে পড়ে যাওয়ার কারণে এবং ব্যায়ামের সময় স্ট্রেন থেকে আহত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার অভ্যাস ভাঙার উপায়:
যত গুরুত্বপূর্ণ কাজই হোক না কেন, প্রতি দুই ঘণ্টা পরপর বসে থাকার মাঝে উঠা-বসা ও ঘুরে বেড়াতে হবে। অন্তত ১৫ মিনিট হাঁটুন। এ সময় উঠে বোতলে পানি ভরে নিতে পারেন কিংবা পানি পান করতে পারেন। পিঠ ও মেরুদণ্ড সোজা রাখতে হবে। ঘোরাঘুরি বা হাঁটাচলা না করলে মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে। যা থেকে অনুপ্রেরণার অভাব ও মনোযোগ হারানোর মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া যেকোনো সমস্যায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।