

গাজীপুরের টঙ্গী থেকে ৬ দশমিক ৪৪ কেজি মাদক কেটামিনের একটি চালান জব্দ করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। পাচারে জড়িত অভিযোগে চাঁদপুর ও ফরিদপুরে অভিযান চালিয়ে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কেটামিনের চালানটি কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ইতালি পাচারের চেষ্টা করা হচ্ছিল।
গতকাল রোববার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ডিএনসির প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির মহাপরিচালক হাসান মারুফ। গ্রেপ্তাররা হলেন– মাসুদুর রহমান জিলানী (২৮) ও আরিফুর রহমান খোকা (৪৩)। মাসুদের বাড়ি চাঁদপুরের মতলব ও আরিফুরের বাড়ি ফরিদপুরের সালথা উপজেলার আটঘর বাজারে।
ডিএনসির মহাপরিচালক হাসান মারুফ বলেন, গত শুক্রবার টঙ্গীতে খাকি রঙের কার্টনের ভেতর থেকে সাতটি সাদা তোয়ালে পাওয়া যায়। সেটি জব্দের পর ডিএনসির রাসায়নিক পরীক্ষায় তোয়ালেতে দ্রবীভূত অবস্থায় ৬ দশমিক ৪৪ কেজি মাদক কেটামিনের উপস্থিতি পাওয়া যায়। চালানটি ইতালিতে পাঠানো হচ্ছিল। তাতে প্রেরক হিসেবে নাম ছিল মাসুদের। তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে মাসুদকে চাঁদপুর ও আরিফুরকে ফরিদপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ অভিযান চালায় ডিএনসির গোয়েন্দা শাখার একটি দল।
মহাপরিচালক জানান, তোয়ালে বা মোটা কাপড় ব্যবহার করে এ মাদক পাচার একটি গোপন কৌশল। যেখানে তোয়ালের ভেতরে গঠন পরিবর্তন করে মাদক লুকানো হয়। কেমিক্যাল ইমপ্রেগনেশনে তোয়ালেকে মাদকের দ্রবণে ভিজিয়ে শুকানো হয়, ফলে মাদক ফাইবারে মিশে যায়। কাপড় বা তোয়ালেটি মাদক শোষণ করলে সেটি দেখতে স্বাভাবিক কাপড়ের মতোই মনে হয়। ফলে এটি সহজে শনাক্ত করা যায় না। পাচারকারীরা পরে বিশেষ কেমিক্যাল বা ল্যাব প্রসেস ব্যবহার করে ওই কাপড় থেকে পুনরায় মাদক উত্তোলন করে। এ পদ্ধতি কোকেন, হেরোইন ও কেটামিন পাচারে বেশি ব্যবহৃত হয়।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মাদক চক্রের নতুন নতুন কৌশল প্রতিরোধে কুরিয়ার সার্ভিস ও সংশ্লিষ্ট সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে নিয়মিত নজরদারি ও অভিযান অব্যাহত থাকবে। গ্রেপ্তার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আরও একাধিক ব্যক্তির তথ্য মিলেছে। তদন্ত সাপেক্ষে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
মানবদেহে কিটামিন ক্ষতিকর
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কিটামিন মূলত একটি ডিসোসিয়েটিভ অ্যানেসথেটিক ওষুধ, যা অতীতে চিকিৎসা ক্ষেত্রে অপারেশনের সময় অজ্ঞান করার জন্য ব্যবহৃত হতো। কিন্তু বর্তমানে এটি ব্যাপকভাবে মাদক হিসেবে অপব্যবহার করা হচ্ছে। বিশেষ করে ‘পার্টি ড্রাগ’ হিসেবে। কেটামিন একটি অত্যন্ত ক্ষতিকর মাদক, যা স্বল্প মেয়াদে বিভ্রান্তি, হ্যালুসিনেশন ও শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি করে। দীর্ঘ মেয়াদে এটি কিডনি ও মূত্রথলির গুরুতর ক্ষতি, মানসিক সমস্যা এবং আসক্তির দিকে ঠেলে দেয়। নিয়মিত সেবনে সহনশীলতা তৈরি হয়ে ডোজ বাড়ানোর প্রবণতা দেখা দেয়, যা জীবনের জন্য ভয়াবহ ঝুঁকি তৈরি করে।