জুলাই সনদ কার্যকরে এখনো হয়নি ঐকমত্য

  • ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ বাড়ছে।
  • বুধবার আবার আলোচনা হতে পারে।
  • ৮৪টি বিষয়ে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত।
  • সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে ৩ দলের ৩ মত।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনা চলছে। ফাইল ছবি: সত্যের পথে

জুলাই জাতীয় সনদের সংবিধান-সম্পর্কিত সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দিনের আনুষ্ঠানিক আলোচনায়ও কোনো ফল আসেনি। গতকাল রোববার কমিশনের সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সামনে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) তাদের আগের অবস্থানই তুলে ধরেছে।

গতকালের আলোচনায় নির্বাচনের প্রসঙ্গও উঠে আসে। বিএনপি বলেছে, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতেই হবে। নির্বাচন নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হলে জাতীয় ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী বলেছে, তারাও ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন চায়। তবে জুলাই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচন হলে সেটা সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে। এনসিপি বলেছে, সংস্কার টেকসই করতে হলে দরকার গণপরিষদ নির্বাচন।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ আজ সোমবার শেষ হওয়ার কথা। তবে গতকালের আলোচনায় একাধিক দল প্রধান উপদেষ্টার কাছে কমিশনের মেয়াদ বাড়ানোর অনুরোধ করে।

দলগুলোর এই মতভিন্নতার মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘আমরা বারবার বলেছি, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচন হবে। সেটি হবে মহোৎসবের নির্বাচন, যদি আমরা ঐকমত্যের মাধ্যমে ফয়সালা করতে পারি। এই নির্বাচন শুধু নির্বাচন নয়, এটি হবে জাতির নবজন্ম।’

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ আজ সোমবার শেষ হওয়ার কথা। তবে গতকালের আলোচনায় একাধিক দল প্রধান উপদেষ্টার কাছে কমিশনের মেয়াদ বাড়ানোর অনুরোধ করে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ আরেক দফায় বাড়ানো হচ্ছে। সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে আগামী বুধবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের আবার আলোচনা হতে পারে।

এর আগে বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনাও করেছিল কমিশন। ২৯টি দল লিখিতভাবে তাদের মতামত কমিশনকে পাঠিয়েছিল। সংবিধান-সংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো আগামী জাতীয় সংসদ গঠনের দুই বছরের মধ্যে বাস্তবায়নের পক্ষে বিএনপি। জামায়াতে ইসলামী আগামী নির্বাচনের আগে রাষ্ট্রপতির বিশেষ আদেশের মাধ্যমে বা গণভোটের মাধ্যমে এবং এনসিপি গণপরিষদ গঠনের মাধ্যমে সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন চায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ আরেক দফায় বাড়ানো হচ্ছে। সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে আগামী বুধবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের আবার আলোচনা হতে পারে।

সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে গত বৃহস্পতিবার থেকে দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হয়। গতকাল বেলা তিনটায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দ্বিতীয় দিনের আলোচনা শুরু হয়। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আলোচনায় উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন এবং তিনটি দলের বক্তব্য শোনেন। সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি তাদের আগের অবস্থানের পক্ষেই যুক্তি তুলে ধরে। অবশ্য বিএনপি গতকালের আলোচনায় সাংবিধানিক বিষয়গুলো পরবর্তী সংসদ ছাড়া অন্য কোনো ফোরাম করতে পারে কি না, তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।

ছয়টি সংস্কার কমিশনের সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দুই পর্বের আলোচনায় ইতিমধ্যে ৮৪টি বিষয়ে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত হয়েছে। এগুলো নিয়ে তৈরি করা হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ।

গতকালের আলোচনায় আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল; শিল্প, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান; জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান উপস্থিত ছিলেন।

ছয়টি সংস্কার কমিশনের সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দুই পর্বের আলোচনায় ইতিমধ্যে ৮৪টি বিষয়ে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত হয়েছে। এগুলো নিয়ে তৈরি করা হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ। সনদের চূড়ান্ত খসড়া ইতিমধ্যে দলগুলোকে দেওয়া হয়েছে। বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে মতভিন্নতার কারণে সনদ আটকে আছে। অবশ্য বাস্তবায়নের পদ্ধতি সনদের অংশ হবে না। এ বিষয়ে সরকারকে একটি সুপারিশ দেবে ঐকমত্য কমিশন।

Scroll to Top