‘গাছতলাতেই লালনের শান্তি’

১৩ সেপ্টেম্বর রাতে মারা গেছেন ফরিদা পারভীন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ৫৫ বছরের সংগীতজীবনে নজরুলগীতি, আধুনিক, দেশাত্মবোধক, প্লেব্যাকসহ অনেক ধরনের গানই করেছেন; তবে সব ছাপিয়ে দেশে-বিদেশে তাঁর মূল পরিচয় হয়ে ওঠে লালনকন্যা। গত রোববার দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফরিদা পারভীনকে শেষশ্রদ্ধা জানান শিল্পী, সাংস্কৃতিক কর্মীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা শেষে তাঁর মরদেহ কুষ্টিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। এশার নামাজের পর সেখানে তাঁকে সমাহিত করা হয়। ৫০ বছরের বেশি সময়ের সংগীতজীবনে তিনি অসংখ্যবার সত্যের পথকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। তাঁকে স্মরণ করে ২০০২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর সত্যের পথে আনন্দ পাতায় প্রকাশিত তাঁর একটি সাক্ষাৎকার পুনঃপ্রকাশ করা হলো।


২০০২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর সত্যের পথ আনন্দ পাতায় প্রকাশিত তাঁর একটি সাক্ষাৎকার পুনঃপ্রকাশ করা হলো । কোলাজ
শুরুতে নজরুলগীতি চর্চায় মগ্ন থাকলেও বাবার অনুপ্রেরণায় গাইতে শুরু করলেন লালনগীতি এবং হয়ে উঠলেন লালনসংগীতের বিশিষ্ট শিল্পী। ইতিমধ্যে তিনি লালনের গান নিয়ে গেছেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। সম্প্রতি (২০০২ সালে) ঘুরে এলেন জাপান। মাসব্যাপী গান গেয়ে মাতিয়েছেন জাপানের বিভিন্ন শহর। কয়েক দিন আগে আনন্দের মুখোমুখি হয়ে বলেছেন লালন, লালনের গান এবং নিজের কিছু কথা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাসুম অপু

সত্যের পথ : সম্প্রতি মাসব্যাপী সফরে জাপান ঘুরে এলেন। শুরুতে আপনার এই দীর্ঘ সফর সম্পর্কে কিছু বলুন।

ফরিদা পারভীন: এটা ছিল আমার জীবনে একটা স্মরণীয় সফর। জাপান-বাংলাদেশ সম্পর্কের ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষে জাপান ফাউন্ডেশন আয়োজন করে এই সফরের। যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ফরিদা পারভীন প্রজেক্ট কমিটি। জীবদ্দশায় বাইরের কোনো দেশ আমাকে দিয়ে একটি প্রজেক্ট কমিটি গঠন করল। এটা তো আমার জন্য একটা স্মরণীয় ব্যাপার। কোনো জীবিত শিল্পীকে নিয়ে প্রজেক্ট কমিটি গঠন করা শুধু আমাদের দেশেই নয়, বরং এশিয়া মহাদেশে এমন ঘটেছে বলে আমার জানা নেই। জাপানিরা লালনের গানের প্রতি বিশেষভাবে আগ্রহী ছিল। অনেকে আছে লালনের গান শুনে শুনে বাংলা শিখেছে। তারা চেয়েছিল জাপানের বড় শহরগুলোসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে আমার গান অর্থাৎ লালনগীতি ছড়িয়ে দিতে। আমি তা–ই করেছি। প্রতিটি দিন বিভিন্ন স্থানে গান করেছি। পেয়েছি প্রচণ্ড সাড়া। আবেগভরে মানুষ লালনের গান শুনেছে। চোখের পানি ফেলেছে। জাপানিদের লালনের গানের প্রতি অকৃত্রিম শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় আমি মুগ্ধ। যথেষ্ট সম্মান ও ভালোবাসা আমি পেয়েছি। রাস্তায় হাঁটছি একদিন। হঠাৎ এক জাপানিজ এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল। বলল, ‘তুমি ফরিদা পারভীন। তোমার গান শুনেছি। তোমার কাছে তো আধ্যাত্মিক শক্তি আছে।’ সত্যিকার অর্থে সফরটা ছিল পুরোপুরি সফল। যখন দেশে আসার জন্য রওনা দেব, তখন আয়োজকদের একজন বলছিলেন, ‘পারভীন, আপনার মাধ্যমে লালনের বীজ এই জাপানে বপন করলাম। আশা করি আপনি বেঁচে থাকতে থাকতে এর ফল ভোগ করে যাবেন।’

Scroll to Top