কেনাবেচার অভিযোগে কনস্টেবল, সাত মাসে চারবার বদলি


চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থানা থেকে খোয়া যাওয়া পিস্তল উদ্ধারের মামলায় অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দিয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গত রোববার চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে এ চার্জশিট দাখিল করা হয়।

এতে পেশাদার অস্ত্র ব্যবসায়ী মো. বাবুলসহ চক্রের সাত সদস্যকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। বাকি অভিযুক্ত হলেন– সাতকানিয়ার কাঞ্চনার বাসিন্দা আবদুল গণি, সাতকানিয়া পৌরসভার ছমদরপাড়ার আবু বক্কর, মধ্যম কাঞ্চনার ফরহাদ হোসেন, একই এলাকার কনস্টেবল মো. রিয়াদ, সাতকানিয়া পশ্চিম ঢেমশার মোস্তাফিজুর রহমান সুরুজ ও রূপকানিয়ার মো. ইসহাক। আসামিরা সবাই চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দি।
লুণ্ঠিত অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় গত ২১ মার্চ নগরীর পতেঙ্গা থানায় মামলা করেন কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক আফতাব হোসেন। তদন্ত কর্মকর্তা সিএমপি ডিবি পশ্চিমের এসআই কামরুল ইসলাম বলেন, অস্ত্র লুটের হোতা বাবুলসহ সাতজনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেছি। পিস্তলটি বেচাকেনায় রিয়াদ নামে এক কনস্টেবলও জড়িত। অস্ত্রটি পেশাদার ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত পাঁচ লাখ টাকায় বিক্রি হয়।

গত বছরের ৫ আগস্ট লোহাগাড়া থানা থেকে পিস্তলটি লুট হয়। ডিবি জানায়, থানা থেকে পিস্তলটি আসে বাবুলের হাতে। তার কাছ থেকে পান মো. ইসহাক। পিস্তল বিক্রির জন্য ইসহাক সাতকানিয়া পৌরসভার মোস্তাফিজুর রহমান সুরুজের সঙ্গে পরামর্শ করেন। তারা অস্ত্রের ক্রেতা খুঁজতে থাকেন। পরে এক লাখ ৮০ হাজার টাকায় আবু বক্কর ছিদ্দিকের কাছে বিক্রি করেন।
কেনার পর আবু বক্কর বিক্রির জন্য নিকটাত্মীয় কনস্টেবল রিয়াদের সঙ্গে আলোচনা করেন। রিয়াদ বিক্রির জন্য জামায়াত কর্মী সাতকানিয়ায় গণপিটুনিতে নিহত নেজাম উদ্দিনকে প্রস্তাব দেন। নেজাম ছবি দিতে বললে, হোয়াটসঅ্যাপে ছবি পাঠান রিয়াদ। আবু বকর এরই মধ্যে ফরহাদ হোসেনের মধ্যস্থতায় পতেঙ্গার বাসিন্দা আবদুল গণির কাছে পাঁচ লাখ টাকায় পিস্তলটি বিক্রি করেন।

লোভে পড়ে ফেঁসে যান কনস্টেবল রিয়াদ
তদন্ত সূত্র জানায়, অর্থের লোভে সরকারি অস্ত্র কেনাবেচায় ফেঁসে যান কনস্টেবল রিয়াদ। গত বছরের ৫ আগস্টের সময় তিনি ছিলেন কক্সবাজার র‍্যাবে। সেপ্টেম্বরে খুলনায়, সেখান থেকে বদলি হন চাঁদপুরে। এ সময় তিন মাস বেতন না পেয়ে সংকটে পড়ে আত্মীয় আবু বক্করের কাছে কিছু টাকা ধার চান। ধার না দিয়ে বক্কর পিস্তল বিক্রির প্রস্তাব দেন। বিক্রি হলে অনেক টাকা কমিশনের লোভ দেখান।
এর পর রিয়াদ পিস্তলটি বিক্রির জন্য জামায়াতকর্মী নেজামকে প্রস্তাব দেন। কেনার কথা বলে চাঁদপুর থেকে রিয়াদকে সাতকানিয়ায় আনেন নেজাম। শেষ পর্যন্ত না কিনে রিয়াদকে চার হাজার টাকা দিয়ে রাগ করতে নিষেধ করেন নেজাম। পরে গণপিটুনিতে নেজাম মারা যাওয়ার পর তার মোবাইল থেকে পাঠানো ছবি ও ভয়েস মেসেজ ফাঁস হলে অস্ত্র মামলায় জড়িয়ে যান রিয়াদ।

জানা যায়, লোহাগাড়া থানা থেকে ব্রাজিলের তৈরি পিস্তলটি লুটের হোতা বাবুল পেশাদার অস্ত্র ব্যবসায়ী। তার বাবুলের বিরুদ্ধে লোহাগাড়ায় নয়, বোয়ালখালীতে ডাকাতির একটি ও খাগড়াছড়ির পানছড়ি থানায় একটি মামলা রয়েছে। বাবুলের অস্ত্র চক্রের সদস্যরা চট্টগ্রামের কোতোয়ালি ও লোহাগাড়া থানা থেকে মোট তিনটি পিস্তল লুট করে।

Leave a Reply

Scroll to Top