এডিএ মিউজিক অ্যাপে অর্থ লোপ, ব্যবহারকারী বিভ্রান্ত।


অল্প শ্রমে অধিক আয়ের লোভে হালে বিভিন্ন ধরনের অনলাইন গেম ও জুয়ার অ্যাপে মজেছে সাধারণ মানুষ। শহরের গণ্ডি পেরিয়ে এই আসক্তিতে ছেয়ে গেছে প্রান্তিক অঞ্চলও। সম্প্রতি এমনই একটি অ্যাপে লাখ লাখ টাকা হারিয়ে এখন দিশেহারা বিশ্বম্ভরপুরের শতাধিক মানুষ।

জানা গেছে, এডিএ মিউজিক নামক ওই অ্যাপের মাধ্যমে প্রতারণার শিকার হয়েছেন উপজেলার শতাধিক মানুষ। এতে কয়েক লাখ টাকা খোয়ানোর আক্ষেপের কথা জানিয়েছেন ভুক্তিভোগী কয়েকজন। তারা জানান, সহজে অধিক উপার্জনের মিথ্যা আশ্বাসে অ্যাপটিতে যুক্ত হন তারা। বিভিন্ন প্যাকেজে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে এখন পথে বসার উপক্রম। প্রতারিতদের মধ্যে অনেক নারীও আছেন। এই অ্যাপে বিভিন্ন মাত্রার প্যাকেজ অফার করা হয় মুহূর্তে মোটা অংকের টাকা কামিয়ে নেওয়ার জন্য। এসব প্যাকেজের লোভে পড়ে প্রতারিত হয়েছেন স্থানীয় অনেকেই।

জানা যায়, প্রতারক চক্রটি এডিএ মিউজিক নামে অ্যাপের মাধ্যমে একটি অনলাইন গেম খেলার প্রস্তাব দেয়। সেখানে মোবাইল ফোনে মাত্র পাঁচ মিনিট গেম খেলে দৈনিক ১ থেকে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত উপার্জনের অফার থাকে। এ সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীকে প্রথমে বিভিন্ন মূল্যের প্যাকেজ কিনে যুক্ত হতে হয় গেমিং প্ল্যাটফর্মে।

উপজেলার মুক্তিখলা গ্রামের বাসিন্দা রাসেল আহমদ পেশায় রাজমিস্ত্রি এবং ওয়াটার সাপ্লাই কর্মী। এই প্রতারণার ফাঁদে পড়েছেন তিনিও। প্রথমে সেখান থেকে টাকা পাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। যখন কেউ বড় অংকের প্যাকেজ কেনে তখনই শুরু হয় কেটে নেওয়া। তিনিও একইভাবে কিছু টাকা জেতার পর ২৯ হাজার টাকার একটি প্যাকেজ কেনেন, যেখানে দৈনিক এক হাজার টাকা উপার্জনের কথা ছিল। এক পর্যায়ে লোভে পড়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ করে ৬৪ হাজার টাকার একটি বড় প্যাকেজে বিনিয়োগ করেন। ৯৩ হাজার টাকার সবটাই ঋণ করে এনেছিলেন। চোখের পলকে সব শেষ হয়ে যায় তাঁর।
উপজেলার মল্লিকপুর গ্রামের বাসিন্দা মনিরুজ্জামান বলেন, ১০ হাজার টাকা দিয়ে অ্যাপটিতে অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন। সেখানে প্রতি সোমবার ১ হাজার ৩০০ টাকা পাওয়ার কথা ছিল। একবার টাকা তুলতে পেরেছেন। টাকা লেনদেন পুরোটাই অ্যাপের মাধ্যমে বিকাশে করা হতো। দুই-তিন দিন আগে হঠাৎ অ্যাপে ঢুকলে সার্ভার সংক্রান্ত কাজ চলছে লেখা দেখায় এবং কোনো কাজ করা যাচ্ছিল না। পরে যখন সার্ভার ঠিক হয় তখন দেখা যায়, তাঁর নেওয়া প্যাকেজে ঢোকা যাচ্ছে না। তাদের ৯০ শতাংশই প্রতারণার শিকার হয়েছেন এখানে।

একই গ্রামের বাসিন্দা কফিল আকঞ্জি তাঁর ধানের ব্যবসা থেকে জমানো এক লাখ ৯০ হাজার টাকা খুইয়েছেন এখানে। তিনি জানান, জীবনে কখনও জুয়াতে যাননি। এখানে গিয়ে সব হারিয়ে তিনি এখন নিঃস্ব।
এই প্রতারণার ঘটনা বিশ্বম্ভরপুরে এখন সবচেয়ে আলোচনার বিষয়। এলাকার গণ্যমান্যরা বলছেন, লোভে পড়ে প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে শতাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেরিনা দেবনাথ বলেন, প্রশাসনের কাছে এ ধরনের খবর এসেছে। এ ক্ষেত্রে সাদারণ মানুষকে বেশি সচেতন হতে হবে। নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে এ ক্ষেত্রে অভিযোগ না থাকায় ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। সভা, সেমিনার ও আইনশৃঙ্খলা সভায় মানুষকে এসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে সচেতন করা হবে।

Leave a Reply

Scroll to Top