অন্য বাসের শ্রমিকদের মতো বেতন না পাওয়ায় বিদ্রোহ শ্রমিকদের।


রাজশাহী-ঢাকা পথের ভিআইপি কোচখ্যাত দেশ ট্রাভেলস, ন্যাশনাল, হানিফ ও গ্রামীণ পরিবহনের চালকরা প্রায় ১০ বছর ধরে একই বেতনে চাকরি করছিলেন। এর মধ্যে কখনও বেতন বৃদ্ধির দাবিতে কর্মবিরতি বা আন্দোলন হয়নি। কিন্তু গত দু-মাসে তারা তিন দফা কর্মবিরতি করেছেন।

এরপর মালিকরা শ্রমিকদের দাবি ‘অযৌক্তিক’ উল্লেখ করে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে বাস চলাচল বন্ধ করে দেন তারা। এতে যাত্রীরা পড়েছেন ভোগান্তিতে। তবে ‘একতা’ নামে আরেকটি পরিবহন সংস্থার কোচ চলছে স্বাভাবিকভাবে।

শ্রমিক ও মালিকরা বলছেন, একতা পরিবহনের মজুরি গ্রহণযোগ্য। সে রকম মজুরি না পাওয়ায় অন্য গাড়ির চালক ও শ্রমিকরা বিদ্রোহ করেছেন। তারা একতা পরিবহনের মতো বেতন-ভাতা চান। 

শ্রমিকরা জানান, প্রায় ১০ বছর ধরে রাজশাহী-ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেটের মতো দূরপাল্লার যাত্রায় একবার যাতায়াত করলে চালক এক হাজার ২৫০ টাকা বেতন পান। এই একট্রিপ যাতায়াত করতে একজন চালক ও শ্রমিকদের কমপক্ষে দুদিন চলে যায়। ২৪ ঘণ্টা কাজ করেও তারা খাবার বিল পান না। একই ধরনের ডিউটি করে একতা পরিবহনের একজন চালক ৫০০ টাকা বেশি মজুরি পান। অন্য শ্রমিকরাও আনুপাতিক হারে বেশি টাকা পান।

সংশ্লিষ্টরা জানান, একতা পরিবহন রাজশাহী-ঢাকা রুটে যাত্রী নিয়ে একবার যাতায়াত করলে চালক এক হাজার ৭৫০, সুপারভাইজার ৭৫০ এবং সহকারী পান ৭০০ টাকা। তবে ন্যাশনাল, হানিফ, গ্রামীণ, দেশ ট্রাভেলসের চালক এক হাজার ২৫০, সুপারভাইজার ৫৭৫ টাকা এবং সহকারী পান ৫৫০ টাকা।

রাজশাহী মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পাখি বলেন, একতা পরিবহন ন্যায্য মজুরি দেয়। কিন্তু অন্য সব গাড়ি শ্রমিকদের ঠকায়। বেতন বৃদ্ধির দাবি করলে মালিকরা লোকসানের কথা শোনায়। অথচ তারা প্রতিবছরই কোটি কোটি টাকায় নতুন গাড়ি নামাচ্ছেন। বিদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আর শ্রমিকদের ঘরে তিনবেলা খাবার জুটছে না।

রফিকুল ইসলাম বলেন, শ্রমিকরা গত ২২ সেপ্টেম্বর কর্মবিরতি পালন করেন। মালিকপক্ষ তখন বলেন, একতা পরিবহনের মতো করেই বেতন দেবেন। শ্রমিকরা আশ্বাসে কাজে যোগ দেন। নতুন বেতন ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে বাস্তবায়নের কথা ছিল। কিন্তু ওই দিন থেকেই মালিকরা বাস চলাচল বন্ধ করে দেন।

রাজশাহী মোটর মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম হেলাল বলেন, দেশের আর কোথাও এ ধরনের দাবি নিয়ে কর্মবিরতি পালন হচ্ছে না। এটা শুধু রাজশাহীতেই হচ্ছে। এখানে একটা গ্রুপ এ কাজটি করাচ্ছে।

তাঁর দাবি, শ্রমিকদের দাবি মালিকপক্ষ মেনে নিয়েছিল। কিন্তু তারা অযৌক্তিক আরও কিছু দাবি সামনে নিয়ে আসছে। শ্রমিকরা হোটেলের খাবার বিল, মোবাইল বিল, বিনামূল্যে দুজন যাত্রীর টিকিটের বিল চায়। এসব অযৌক্তিক দাবি মেনে নিলে মালিকপক্ষের লোকসান হবে।

নজরুল ইসলাম হেলাল বলেন, এ ঘটনা সমাধানের জন্য সোমবার বেলা ১১ টায় ঢাকার গাবতলীতে মালিক-শ্রমিকদের সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। দেখা যাক কী হয়।

রাজশাহী বিভাগের অন্য জেলাগুলোর মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিন জেলা ছাড়া বিভাগের রুটে প্রায় সব বাসের চালকদের বেতন কাছাকাছি। নওগাঁ-ঢাকা রুটে কেয়া, হানিফ, শ্যামলী, এসআই, এসআর পরিবহন একবার যাতায়াত করলে চালকরা পান এক হাজার ৪০০ টাকা। সুপারভাইজার পান ৬০০ এবং হেলপার পান ৫০০ টাকা। আর একতা পরিবহনের চালকরা পান এক হাজার ৫০০ টাকা। সুপারভাইজার ও হেলপার অন্যান্য বাসের সমপরিমাণ মজুরি পান। এ কারণে অন্য জেলায় এ ধরনের আন্দোলন নেই।

Leave a Reply

Scroll to Top