অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারেই কি আপনার আঙ্গুলে ব্যথা হবে

এখন আমাদের অনেকেরই দিন শুরু হয় মুঠোফোন চেক করতে করতে। আবার অনেকের তো মুঠোফোন স্ক্রল না করলে ঠিকভাবে ঘুমই ভাঙে না। শুধু কি তাই? আমাদের দিনের শেষও হয় মুঠোফোন হাতে নিয়েই। মাঝেমধ্যে তো ঘুমচোখে রিল দেখতে দেখতে মুঠোফোন হাত ফসকে মুখের ওপর এসে পড়ে। এভাবে মাত্রাতিরিক্ত মুঠোফোন চালানোর জন্য বিশ্বজুড়ে দেখা দিচ্ছে হাত ও আঙুলের নানা ধরনের সমস্যা। এ সমস্যাকে গেমার্স থাম্ব, টেক্সট ক্ল, ট্রিগার ফিঙ্গার, স্মার্টফোন পিঙ্কিসহ দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন নাম। জাপানি ভাষায় একে বলা হচ্ছে ‘সুমাহো ইউবি’।  

দীর্ঘ সময় এক হাতে স্মার্টফোন ব্যবহার করা অথবা শুধু বুড়ো আঙুল দিয়ে টাইপ করলে আঙুল ও কবজির টেন্ডন এবং সন্ধিগুলোতে চাপ সৃষ্টি করে

সুমাহো ইউবি কেন হয়

টোকিওর হিগাশি-শিনজুকু অর্থোপেডিক অ্যান্ড রিহ্যাব ক্লিনিকের প্রধান চিকিৎসক তাতসুনোবু ইকেদা জানান, সুমাহো ইউবি হলো টেন্ডোনাইটিস বা আর্থ্রাইটিসের মতো অবস্থার একটি সাধারণ নাম।

দীর্ঘ সময় এক হাতে স্মার্টফোন ব্যবহার করা অথবা শুধু বুড়ো আঙুল দিয়ে টাইপ করলে আঙুল ও কবজির টেন্ডন এবং সন্ধিগুলোতে চাপ সৃষ্টি করে। এসব লক্ষণ নিয়ে আসা মানুষদের বয়স ২০, ৩০ অথবা ৪০–এর কোঠায়। এই সমস্যা ক্রমেই বাড়ছে বলেই মনে হচ্ছে।
তাতসুনোবু ইকেদা, হিগাশি-শিনজুকু অর্থোপেডিক অ্যান্ড রিহ্যাব ক্লিনিক, টোকিও, জাপান

১০ বছর বা তার বেশি বয়সী ৫০০ ব্যক্তির ওপর সম্প্রতি জাপানে করা এক জরিপ অনুসারে, প্রায় ৯০ শতাংশই দীর্ঘ সময় স্মার্টফোন ব্যবহারের কারণে সরাসরি বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। অতিরিক্ত মুঠোফোন ব্যবহারের ফলে আঙুল এবং কবজিতে ব্যথা হয়।

১০ বছর বা তার বেশি বয়সী ৫০০ ব্যক্তির ওপর সম্প্রতি জাপানে করা এক জরিপ অনুসারে, প্রায় ৯০ শতাংশই দীর্ঘ সময় স্মার্টফোন ব্যবহারের কারণে সরাসরি বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন

এ ছাড়া ঘাড়, কাঁধ ও কনুইয়ে হতে পারে অস্বস্তি। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৭৬ শতাংশ জানিয়েছেন, তাঁরা প্রতিদিন দুই ঘণ্টার বেশি সময় মুঠোফোনে ব্যয় করেন। ১০ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা মুঠোফোনে সময় ব্যয় করেন ছয় ঘণ্টার বেশি।

আরও কিছু সমস্যা

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, একজন শিক্ষার্থী দিনে গড়ে ১০ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে স্মার্টফোন ব্যবহার করেন, যার মধ্যে মাত্র ৬৫ মিনিট পড়াশোনার জন্য।

দিনে দুই ঘণ্টা মুঠোফোন ব্যবহার করার কথা শুনলে খুব একটা চিন্তিত হওয়ার মতো কিছু নয় বলে মনে হতে পারে। তবে সারা বছর এর পরিমাণ গিয়ে ঠেকবে ৭৩০ ঘণ্টায়, যা ৩০ দিনের সমান।

২০২১ সালে করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, দিনে দুই ঘণ্টা বা তার বেশি সময় মুঠোফোন ব্যবহার করলে কবজির স্নায়ুতে কার্পাল টানেল সিনড্রোমের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

আর প্রতিদিন ৬–৮ ঘণ্টা ফোনে কথা বলা ডি কোয়ারভেইনস সিনড্রোম বা কবজি ও বুড়ো আঙুলের পাশে ব্যথার ঝুঁকি বাড়ে।

মুঠোফোনে কিছু টাইপ করার সময় উভয় হাতের আঙুল ব্যবহার করুন

চিকিৎসা কী

  • মুঠোফোনের কারণে হওয়া ব্যথা যদি তীব্র হয় এবং কয়েক দিনের বেশি স্থায়ী হয়, পাশাপাশি হাতে ফোলাভাব, লালভাব অথবা জ্বালাপোড়া দেখা দেয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
  • এ ধরনের সমস্যার চিকিৎসা সাধারণত ব্যান্ডেজ দিয়ে হাত স্থির রাখার মাধ্যমে শুরু হয়।
  • এ ছাড়া ব্যথার ওষুধ, স্টেরয়েড ইনজেকশন ও বিভিন্ন থেরাপিও নিতে হতে পারে।
    এতেও কোনো উন্নতি না হলে অস্ত্রোপচারই শেষ ভরসা।

প্রতিকারে কী করবেন

বৃদ্ধাঙ্গুল ছাড়া অন্য আঙুলগুলো দিয়ে মুঠোফোনের পর্দা স্পর্শ করুন

বর্তমান দুনিয়ায় মুঠোফোন ছেড়ে থাকা সম্ভব নয়। তবে কিছু সহজ নিয়ম মেনে চললে সুমাহো ইউবির মতো সমস্যা থেকে দূরে থাকা যায়।

  • মুঠোফোন উভয় হাত দিয়ে ধরে ব্যবহার করুন এবং কিছু টাইপ করার সময় উভয় হাতের আঙুল ব্যবহার করুন।
  • বৃদ্ধাঙ্গুল ছাড়া অন্য আঙুলগুলো দিয়ে মুঠোফোনের পর্দা স্পর্শ করুন।
  • মুঠোফোন ব্যবহারের সময় চোখের সরাসরি বা এর চেয়ে কিছুটা নিচে রেখে ব্যবহার করুন।
  • হাতের ওপর চাপ কমাতে ফোন রিং হোল্ডার ও ফোন স্ট্যান্ডের মতো অনুষঙ্গ ব্যবহার করতে পারেন।
  • সম্ভব হলে মুঠোফোনে ভয়েস কমান্ড ব্যবহার করুন।

Scroll to Top