[caption id="attachment_5976" align="alignnone" width="600"]
—প্রতীকী ছবি [/caption]
মৌসুমের শুরুতে হিমাগারে আলু রেখে এখন বড় লোকসানের মুখে পড়েছেন নওগাঁর কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। গত বৃহস্পতিবার হিমাগার পর্যায়ে জাতভেদে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ১৪ থেকে ১৫ টাকায়। অথচ উৎপাদন থেকে শুরু করে হিমাগারে রাখা পর্যন্ত প্রতি কেজিতে খরচ পড়েছে ২৫ থেকে ২৬ টাকা। ফলে কেজিপ্রতি প্রায় ১০ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীদের। আর বস্তাপ্রতি হিসাব করলে (৬০ কেজি) লোকসান দাঁড়াচ্ছে ৬০০ থেকে ৬৬০ টাকা। এ কারণে অনেকে এখন হিমাগার থেকে আলু তুলছেন না।
বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএসএ) হিসাবে, নওগাঁর আটটি হিমাগারে এবার সংরক্ষণ করা হয়েছে ২ লাখ ৪০ হাজার বস্তা আলু। প্রতি বস্তার ওজন ৬০ কেজি ধরে সংরক্ষিত মোট আলুর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১৪ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন। এর বাইরে নওগাঁর কৃষক ও ব্যবসায়ীরা বগুড়া, জয়পুরহাট ও রাজশাহীর হিমাগারেও আলু রেখেছেন। প্রতি কেজিতে ১০ টাকা লোকসান ধরলে শুধু নওগাঁর হিমাগারেই ক্ষতির অঙ্ক দাঁড়ায় ১৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নওগাঁ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় ২৫ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। গত বছর ২৩ হাজার ৬৬০ হেক্টর জমিতে আলু উৎপাদন হয়েছিল ৪ লাখ ৫১ হাজার মেট্রিক টন। এবার আলু উৎপাদন থেকে শুরু করে হিমাগারে রাখা পর্যন্ত প্রতি কেজিতে খরচ পড়েছে ২৫ থেকে ২৬ টাকা।
নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার কাস্টডোম গ্রামের কৃষক রাসেল রানা এবার ৭ বিঘা জমিতে কার্ডিনাল ও গ্রানোলা জাতের আলু চাষ করেন। উৎপাদন পেয়েছেন ৬৩০ মণ। এর মধ্যে লাভের আশায় ২০০ বস্তা (৩২০ মণ) আলু হিমাগারে রেখেছেন। তিনি বলেন, মৌসুমে খুচরা বাজারে এসব আলুর কেজি খুচরায় ২৫–২৭ টাকা, পাইকারিতে ১৭–১৮ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। এখন খুচরা বাজারে মিলছে ২০–২২ টাকা, আর হিমাগারে বিক্রি হচ্ছে ১৪–১৫ টাকায়। প্রতি বস্তায় হিমাগার ভাড়া ৩৫০ টাকা, বস্তার দাম ৮৫ টাকা, পরিবহন ও শ্রমিক খরচ ১০০ টাকাসহ মোট খরচ পড়েছে ১ হাজার ৫০০ টাকার মতো। অথচ এখন এক বস্তা আলু বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকায়। তাতে প্রতি বস্তায় লোকসান হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা।
সদর উপজেলার বোয়ালিয়া এলাকার ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম ১ হাজার ৭০০ বস্তা আলু মজুত করেছেন। মৌসুমে কেজি ১৬–১৭ টাকা দরে কিনে হিমাগারে রেখেছিলেন তিনি। জাহাঙ্গীর আলম সত্যের পথেকে বলেন,
এখন তুললে কেজিপ্রতি ১০–১১ টাকা লোকসান গুনতে হবে। দাম বৃদ্ধির আশায় এত দিন আলু তুলিনি। কিন্তু ৩০ অক্টোবরের মধ্যে হিমাগার থেকে আলু না তুললে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। তিনি আশঙ্কা করছেন, ১৭ লাখ টাকায় কেনা আলুতে লোকসান গুনতে হবে প্রায় ১০ লাখ টাকা।
[caption id="attachment_5978" align="alignnone" width="600"] নওগাঁ সদর উপজেলার পার নওগাঁ এলাকায় মাহমুদ হোসেন কোল্ড স্টেরেজে আলু বাছাই করছেন শ্রমিকেরা । ছবি: সত্যের পথে[/caption]
সদরের তিলকপুর এলাকার আরেক ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম জানান, তিনি ১ হাজার ২০০ বস্তা আলু হিমাগারে রেখেছেন। এখনো এক বস্তাও তোলেননি। হিমাগারের কর্মীরা বারবার ফোন করলেও ভাড়া দেওয়ার ভয়ে ফোন ধরছেন না। তাঁর হিসাবে, বস্তাপ্রতি কমপক্ষে ৫০০ টাকা লোকসান হবে। এখন পাইকারিতে এক বস্তা আলু বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়, এর মধ্যে ভাড়াই ৫০০ টাকা।
নওগাঁর কাঁঠালতলী এলাকার মাহমুদ হোসেন কোল্ডস্টোরেজের ব্যবস্থাপক মাসুদ হোসেন জানান, তাঁদের হিমাগারটির ধারণক্ষমতা ৩২ হাজার বস্তা। সাধারণত জুলাই থেকে আলু তোলা শুরু হয়। কিন্তু এবার এখনো ৮৫ শতাংশ আলু রয়ে গেছে। একাধিকবার তাগাদা দিলেও কৃষক-ব্যবসায়ীরা আলু তুলছেন না। তাঁর ভাষায়, ‘ভাড়া দেওয়ার ভয়ে কৃষক-ব্যবসায়ীদের অনেকেই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।’