সিরামিক শিল্পপ্রতিষ্ঠানে দরকার হয় দক্ষ লোকের। সে জন্য সিরামিক প্রকৌশলী চেয়ে এসব প্রতিষ্ঠান প্রায়ই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে থাকে। কিন্তু ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও দেশে সিরামিক প্রকৌশলীর বেশ অভাব রয়েছে। দক্ষ সিরামিক প্রকৌশলীদের চাকরির নিশ্চয়তা আছে। সুতরাং, পেশাগত চাহিদা ও সম্ভাবনা থাকায় নবীনরা এ বিষয়ে পড়াশোনা করে হয়ে যেতে পারেন দক্ষ সিরামিক প্রকৌশলী। বিস্তারিত জানাচ্ছেন শামস্ বিশ^াস
পেশাজীবনে দ্রুত সাফল্য পেতে হলে কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নেই। তবে সে ক্ষেত্রে এমন বিষয়ই বেছে নিতে হয়, যাতে উজ্জ্বল হয়ে উঠতে পারে ভবিষ্যৎ পেশাজীবন। মাধ্যমিক পাস করেই যারা পেশাজীবনের প্রস্তুতি নিতে চায় তাদের জন্য সিরামিক প্রকৌশল তেমনই একটি বিষয়। বাংলাদেশে কাচ ও সিরামিক প্রকৌশলে চার বছরের ডিপ্লোমা প্রকৌশল কোর্স করার সুযোগ রয়েছে। দেশের অভ্যন্তরেই বিভিন্ন প্রাইভেট ও সরকারি-বেসরকারি গ্লাস ও সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছেন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার। তারা ভার্টিক্যাল মোবিলিটি পজিশন থেকে প্রধান নির্বাহী পদে কাজ করার সুযোগ পান। এ ছাড়া একজন সিরামিক ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার পড়াশোনার শেষ ভাগে এসে ছাত্র অবস্থায় বিশেষ ভূমিকা রাখেন স্যান্ড, সিমেন্ট, ফায়ার ব্রিক, গ্লাস অ্যান্ড সিরামিক প্রোডাকশনের দক্ষ আইই নিরীক্ষক হিসেবে। পেশাগত চাহিদা ও সম্ভাবনা থাকায় তরুণরা এ বিষয়ে পড়ালেখা করে হয়ে উঠতে পারেন দক্ষ সিরামিক প্রকৌশলী।
সম্ভাবনা : সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে চলছে সিরামিক সামগ্রীর ব্যবহার। সিরামিক এখন আর নিছক প্রয়োজনীয়তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। ঘর সাজানো ও অফিসের সৌন্দর্যবর্ধনের উপকরণ হিসেবে শৌখিন মানুষের কাছে রয়েছে নানা রকমের দৃষ্টিনন্দন সিরামিক পণ্যের কদর। যেমন- টাইলস ছাড়া বাড়ি নির্মাণ এখন আর অনেকে কল্পনাও করতে পারেন না। সেই বাড়িতে সিরামিকসের কমোড ও বেসিন স্থাপনও আজকাল যেন অতিপ্রয়োজনীয় এক অনুষঙ্গ। আর বাড়িতে ও অফিসে সিরামিকের টি-টেবিল ও ঘর সাজানোর শোপিস রাখা এবং বাসনকোসন, চায়ের পেয়ালাসহ নানা ধরনের তৈজসপত্রের ব্যবহার তো আজকাল ফ্যাশনেও পরিণত হয়েছে। আমাদের দেশের সিরামিকশিল্প দেশের অর্থনীতিতে এখন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাই পালন করছে। গত কয়েক বছরে এই শিল্পে এককথায় বিপ্লব ঘটেছে। বর্তমানে আমাদের দেশে ছোট-বড় সব মিলিয়ে শ দুয়েক সিরামিক পণ্য উৎপাদন প্রতিষ্ঠান রয়েছে। দেশি সিরামিক প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের দেশের চাহিদা পূরণ করছে প্রায় শতভাগ। এ ছাড়া অতিসম্প্রতি বাংলাদেশের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান তাদের উৎপাদিত পণ্য ইউরোপ, আমেরিকাসহ এশিয়া মহাদেশের কয়েকটি দেশে রপ্তানি করে চলছে। এভাবে বাংলাদেশের সিরামিকশিল্প প্রতিনিয়ত ব্যাপক চাহিদাসম্পন্ন হয়ে উঠছে বিভিন্ন দেশে। সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের শ্রমবাজার ও কাঁচামাল সস্তা হওয়ায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও এই শিল্পে বিনিয়োগ করতে উৎসাহ বোধ করছেন। তাই একদিকে পণ্যের ব্যাপক চাহিদা বৃদ্ধি, অন্যদিকে বিনিয়োগ বাড়ায় এই শিল্পে বেড়েছে দক্ষ সিরামিক প্রকৌশলীর চাহিদা। তাই যারা সিরামিকের ওপর পড়াশোনা করে বের হচ্ছেন, তাদের জন্য নিশ্চিত পেশা হয়ে আছে এই শিল্পে।
কাজের ধরন : এটি একটি সৃজনশীল পেশা। পণ্যের নকশা, কালার ম্যাচিং, গুণগত মান ঠিক আছে কিনা, তা দেখাই হচ্ছে সিরামিক প্রকৌশলীর কাজ। এ ছাড়া একজন সিরামিক প্রকৌশলী তার সৃজনশীল বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে নিত্যনতুন সিরামিক পণ্য উৎপাদন করতে পারেন। টাইলস, স্যানিটারি (কমোড, বেসিন) ও টেবিলওয়্যার (বাসনকোসন, ফুলদানি, শোপিস ইত্যাদি)- এই তিনটি বিভাগ আছে সিরামিকে। তবে বিভাগ তিন ধরনের হলেও মূল কাজ একই রকম।
কাজের ক্ষেত্র : বলা হয়ে থাকে সিরামিক প্রকৌশলের কোনো শিক্ষার্থী পড়াশোনা শেষে বসে থাকেন না। এই বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করে শতভাগ শিক্ষার্থীই কর্মে নিয়োজিত রয়েছেন। দেশে বর্তমানে দুই শতাধিক সিরামিক কারখানা আছে। এসব শিল্পে প্রাথমিক পর্যায়ে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কাজ শুরু করার অনেক সুযোগ রয়েছে। কাজে ভালো দক্ষতা দেখাতে পারলে দ্রুতই পদোন্নতি হয়। দেশের বাইরেও রয়েছে কাজ করার সুযোগ।
সিরামিক প্রকৌশলীদের জন্য বাংলাদেশ কউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ (বিসিএসআইআর) এবং বিএসটিআইয়েও কাজ ও গবেষণা করার সুযোগ আছে।
এই পেশায় ভালো করতে হলে : একজন প্রকৌশলীকে উৎপাদিত পণ্যের গুণগত মান যেন ভালো হয়, সর্বদা সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে। কাজের পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। আগেই বলা হয়েছে- কাজটি যেহেতু সৃজনশীল, তাই এ কাজে মেধা ও মননের সঠিক ব্যবহার খুবই জরুরি। এতে কাজ অনেক সহজ হয়ে যায়। নতুন পণ্য তৈরিতে প্রকৌশলীকে বর্তমান যুগের চাহিদার কথা মাথায় রাখতে হবে।
আয় : সৃজনশীল এই পেশায় পড়াশোনা চলাকালেও চাকরি করে আয়ের সুযোগ থাকে। চাকরির শুরুতে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা বেতন হলেও তা দ্রুত ৭০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা কিংবা এরও বেশি হয়।
পড়াশোনার সুযোগ : দেশের ব্যাপক চাহিদার কথা মাথায় রেখে ২০১১-১২ সেশনে রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) প্রথম Glass and Ceramics Engineering (GCE) বিভাগের শুভসূচনা ঘটে, যদিও বুয়েটে এই বিষয়ে এমএসসি কোর্স চালু আছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব গ্লাস অ্যান্ড সিরামিকসে চার বছর মেয়াদি সিরামিক টেকনোলজি ডিপ্লোমা কোর্স এবং দুই বছর মেয়াদি ট্রেড কোর্স চালু আছে। চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স আটটি সেমিস্টারে বিভক্ত। এই কোর্সে আসনসংখ্যা ৮০। দুই বছরের সিরামিক ট্রেড কোর্সে ছয় সপ্তাহ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিংয়ের জন্য। এসএসসি (ভোকেশনাল) সিরামিক ট্রেডে আসনসংখ্যা ৩০।
ভর্তির যোগ্যতা ও সময় : বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব গ্লাস অ্যান্ড সিরামিকসের জন্য প্রতিবছর এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের এক মাসের মধ্যেই সাধারণত ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এখানে ছেলে-মেয়ে উভয়েই ভর্তির সুযোগ পায়। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর এসএসসি অথবা সমমান পরীক্ষায় সর্বনিম্ন জিপিএ-৩ সহ গণিতে জিপিএ-৩ থাকতে হবে। এমসিকিউ পদ্ধতিতে ৫০ নম্বরের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থী মেধাক্রমে ভর্তির সুযোগ পান। এসএসসি ভোকেশনালের জন্য ১৫ শতাংশ, মেয়েদের জন্য ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৬ শতাংশ এবং ২ শতাংশ প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত।
যোগাযোগ : বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব গ্লাস অ্যান্ড সিরামিকস, তেজগাঁও, ঢাকা-১২০৮।
এ ছাড়া বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটেও এই প্রতিষ্ঠান, কোর্স এবং ভর্তির সব ধরনের তথ্য পাওয়া যাবে। ওয়েব ঠিকানা:www.bteb.gov.bd