দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় কার্যালয়ের রশি টানাটানির মাঝে বিপাকে পড়েছেন কয়েক হাজার গ্রাহক। তাদের অভিযোগ, ইন্স্যুরেন্সের মেয়াদ পূর্ণ হলেও সঞ্চিত অর্থ ও মুনাফা বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে না তাদের।
ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মেয়াদ পূর্ণ হওয়ায় নিয়ম মেনে তারা টাকা নিতে আসেন। কিন্তু তাদের টাকা বুঝিয়ে না দিয়ে স্থানীয় অফিস ঢাকায় যোগাযোগ করতে বলছে। আবার ঢাকায় যোগাযোগ করলে বলা হচ্ছে, স্থানীয় অফিস যা সিদ্ধান্ত দেবে তাই। এসব কাজ তারাই করবে। গ্রাহকদের নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির এই রশি টানাটানির খেলা চলছে পাঁচ-ছয় বছর ধরে।
সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্দিষ্ট মেয়াদের পর গ্রাহকের অর্থ বুঝিয়ে দিতে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি বাধ্য। যা মানা হচ্ছে না। এদিকে জানা গেছে, গ্রাহকের টাকা নিয়ে গড়িমসির মাঝে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ফুলবাড়ী অফিসের একাধিক কর্মকর্তা। এ ছাড়া একাধিক গ্রাহককে চেক দেওয়া হলেও প্রতিষ্ঠানের হিসাব নম্বরে টাকা না থাকায় তা ভাঙাতে পারেননি কেউ। এমন পরিস্থিতিতে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন ইন্স্যুরেন্স অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
উপজেলার মূল সড়ক-সংলগ্ন মধ্যগৌরী পাড়ার একটি তিনতলা ভবনের নিচতলায় স্থানীয় অফিস প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির। এ ছাড়া পার্বতীপুর, বিরামপুর, চিরির বন্দর, দিনাজপুর সদর, বিরল, হাকিমপুর, ঘোড়াঘাট, আমবাড়ী ও দাউদপুর এলাকা নিয়ে কাজ করে অফিসটি।
ভুক্তভোগী বীমাগ্রাহক আব্দুল কাদের জানান, ২০০৯ সালে বছরে দুটি কিস্তির শর্তে প্রতি কিস্তি এক হাজার ১০০ টাকা করে জমা দিয়েছেন ১২ বছর। তাঁর ইন্স্যুরেন্সের মেয়াদ পূর্ণ হয় ২০২১ সালে। এ সময়ের মধ্যে মোট সঞ্চয় জমা হয় ২৪ হাজার ৮০০ টাকা। এখন সঞ্চয়সহ মুনাফার টাকার জন্য ২০২১ সাল থেকে কোম্পানির অফিসে ঘুরে কোনো সাড়াই পাচ্ছেন না তিনি।
সৈয়দ ইমাম হাসান নামের আরেক গ্রাহকের অভিযোগ, অনেককে চেক দিলেও সেই চেক ব্যাংকে গিয়ে টাকা না থাকায় ভাঙাতে পারেননি তারা। এখানকার অফিসের কথা শুনে ঢাকার অফিসে গেলে তারা বলছেন, যা কিছু করার সব স্থানীয় ফুলবাড়ীর অফিসই করবে।
রাধানগর গ্রামের জাহানারা বেগম জানান, তাঁর স্বামী থেকেও নেই। অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। ২০২২ সালে মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়। তিন বছর ধরে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
কোম্পানির ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) শাখার জিএম ও ইনচার্জ আনিছুর রহমান বলেন, করোনা মহামারির পর থেকে চাপে আছে প্রতিষ্ঠান। গ্রাহকের চেক দিতে না পারায় তিনি হতাশ।
ইউএনও মো. ইসহাক আলী বলেন, গ্রাহক হয়রানির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে।