রিফর্ম ইউকের অভিবাসন নীতি বর্ণবাদী আখ্যায়িত করলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।


রিফর্ম ইউকের অভিবাসন নীতিকে ‘বর্ণবাদী ও অমানাবিক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার। লিভারপুলে অনুষ্ঠিত লেবার পার্টির বার্ষিক সম্মেলনের প্রথম দিন তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বৈধভাবে ব্রিটেনে বসবাসকারী মানুষদের অধিকার বাতিল করার চেষ্টা দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভিত্তিকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অবৈধ অভিবাসীদের নিয়ন্ত্রণ এক কথা, কিন্তু যারা বৈধভাবে এখানে বসবাস করছে তাদের বাধ্যতামূলকভাবে তাড়িয়ে দেওয়া সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। তারা আমাদের প্রতিবেশী, আমাদের অর্থনীতির অংশ এবং আমাদের সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এ ধরনের পদক্ষেপ দেশকে ছিন্নভিন্ন করতে পারে।’সম্মেলনের প্রথম দিনেই লেবার দলের বিভিন্ন মন্ত্রী ফারাজ এবং রিফর্ম ইউকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেন। অর্থমন্ত্রী র‍্যাচেল রিভস এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাবানা মাহমুদ সবাইকে সতর্ক করে বলেন, ফারাজের নীতি বাস্তবায়িত হলে ব্যবসায়িক স্থিতিশীলতা ও বাণিজ্য চুক্তি ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

শাবানা মাহমুদ আরও বলেন, যারা অসীমকাল অর্থাৎ ইন্ডেফিনিট লিভ টু রিমেইন-এ থাকার অধিকার চাইবেন, তাদের অবশ্যই সমাজে অবদান রাখতে হবে, যেমন জাতীয় বীমা প্রদান এবং স্বেচ্ছাসেবী কাজ, এবং কল্যাণভাতার ওপর নির্ভরশীল হতে পারবে না।

সম্মেলনে স্টারমার দলের সদস্যদের ভোটার ডেটা বিশ্লেষণ করে রিফর্মে আগ্রহী নতুন ভোটারদের খুঁজে বের করতে এবং অনিয়মিত ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে নির্দেশ দেন। তার মতে, তাদের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী নীরব ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণই আগামী নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।

বার্নহ্যাম, গ্রেটার ম্যানচেস্টারের মেয়র এবং দলের একটি গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বের ফিগার, বলেন তিনি কেবল নীতি নিয়ে আলোচনা শুরু করেছেন এবং স্থানীয় নির্বাচনের আগে দলের অভ্যন্তরীণ উদ্বেগ তুলে ধরতে চান। তিনি দলের ভেতরে ভয়ের পরিবেশ দূর করার আহ্বান জানান এবং সতর্ক করে বলেন, অন্ধ আনুগত্যের দাবি বিপজ্জনক হতে পারে।

স্টারমারের মন্তব্যে ইতিমধ্যেই কনজারভেটিভ ও রিফর্ম রাজনীতিবিদদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তবে লেবারের শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছে, ফারাজের নীতিকে ‘বর্ণবাদী’ হিসেবে চিহ্নিত করা দলের নৈতিক অবস্থান দৃঢ় করতে সাহায্য করবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বৈধভাবে বসবাসরত অভিবাসীদের অধিকার রক্ষা করা জনমতের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

তবে জরিপ অনুযায়ী, ভোটাররা অভিবাসন সমস্যাকে প্রধান ইস্যু মনে করছেন না। বেশিরভাগ মানুষ তাদের স্থানীয় সম্প্রদায়কে শান্তিপূর্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ হিসেবে বর্ণনা করছেন এবং ভিন্ন জাতি, ধর্ম ও পটভূমির মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখছেন। ফলে, লেবারের মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে—অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে দৃঢ় অবস্থান দেখানো হলেও জনমতকে ধরে রাখা।

Leave a Reply

Scroll to Top