সব শ্রেণির মানুষ রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনের যে কোনো শাখায় উত্তম আদর্শ পাবে। আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন, ‘যা দিয়েছেন তোমাদের রাসুল, সুতরাং তা তোমরা ধারণ কর, আর যা থেকে তোমাদের বারণ করেছেন, তা থেকে বিরত থাকো।’ (সুরা হাশর-৭)।
মানবজীবনে এমন কোনো অধ্যায় নেই, যার দিকনির্দেশনা আমাদের নবীজির জীবন থেকে পাওয়া যাবে না। তাঁর জীবনে এমন কোনো বাক্য নেই, যাতে কারও উপদেশ নেই। এমন কোনো কর্ম নেই, যাতে কারও শিক্ষা নেই। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন, ‘তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসুলের মাঝে রয়েছে উত্তম আদর্শ।’ (সুরা আহজাব-২১)।
মহানবী (সা.) একদিকে ছিলেন মুসলিম জাহানের সফল রাষ্ট্রনায়ক, অপরদিকে ছিলেন তিনি শ্রেষ্ঠ সমাজসেবক। তিনি খাদিজা (রা.)-এর স্বামী, ফাতেমা (রা.)-এর পিতা এবং হাসান-হুসাইন (রা.)-এর নানা। তিনি রণাঙ্গনের সেনাপতি ছিলেন, ছিলেন মক্কার মরুভূমিতে একজন এতিম রাখাল। তাঁর মধ্যে রয়েছে সমাজের প্রতিটি স্তরে অনুসরণের জন্য উত্তম আদর্শ। ব্যক্তি, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে প্রবর্তন করেছিলেন মানবতার উজ্জ্বল নমুনা। মুহাম্মদ (সা.)-এর সিরাত এতই বিস্তৃত ও ব্যাপক যে তাঁর আনীত ধর্মের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা সব ধর্ম রহিত ঘোষণা করেছেন। তাঁর আনীত ধর্মই একটি নিখুঁত ও পূর্ণাঙ্গ ধর্ম হিসেবে গ্রহণযোগ্য। তিনি এসেই একদিকে পার্থিব জীবনব্যবস্থা সংশোধনের ঘোষণা দিলেন। অপরদিকে পারলৌকিক জীবনে অফুরন্ত সুখ-শান্তি প্রাপ্তির মূলনীতিগুলো বাতলে দিলেন বিশ্বমানবকে। তাই তাঁর ধর্ম বিশ্বজনীন, সর্বজনীন। আর তিনি হলেন বিশ্বনবী, শ্রেষ্ঠ নবী ও শেষ নবী। তাঁর প্রতিটি কথা ও আদর্শ, সবার জন্য অনুসরণীয়, অনুকরণীয়। কিয়ামত পর্যন্ত দেশ দেশান্তরে, যুগ-যুগান্তরে, বর্ণ, গোত্র-বংশনির্বিশেষে সবার কাছে মহানবী (সা.)-এর সিরাত হবে আদর্শ এবং তাঁর আনীত সুমহান ধর্ম হবে অনুসৃত ও প্রতিপালিত। তাই তাঁর ভালোবাসার দাবি হলো, জীবনের যাবতীয় অধ্যায়ে তাঁর অনুসরণ করা তাঁর সুন্নতকে আঁকড়ে ধরা। এ পরিসরে একটি ঘটনা সংযোজন করার কৌতূহল হয়, জামাম ইবনে সালাবাহ (রা.) মহানবী (সা.)-এর মসজিদে একদিন উপস্থিত হয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে সম্বোধন করে বলেন, আমি আপনাকে আপনার প্রভু, অতীত প্রভু এবং পরবর্তীদের প্রভুর শপথ দিয়ে বলছি, আপনাকে কি আল্লাহতায়ালা প্রেরণ করেছেন? রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, হ্যাঁ! অতঃপর তিনি এভাবেই শপথ দিয়ে বলেন, আমাদের এক আল্লাহর ইবাদতের প্রতি নির্দেশনা দেওয়ার জন্য আল্লাহ আপনাকে নির্দেশ দিয়েছেন? রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, হ্যাঁ! অতঃপর তিনি এভাবেই শপথ দিয়ে বললেন, আমাদের এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের প্রতি নির্দেশনা দেওয়ার জন্য আল্লাহ আপনাকে নির্দেশ দিয়েছেন? রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, হ্যাঁ! এভাবে তিনি জাকাত, রোজা ও হজ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। অতঃপর তিনি কালিমায়ে শাহাদাত উচ্চারণ করে ইসলাম গ্রহণ করেন। আর বলেন, আমি এসব পালন করব। এতে কোনো কম বেশি করব না। তিনি ফেরত চলে যান। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, সে যদি যথাযথ বলে থাকে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। ইহ ও পরকালে কল্যাণজনক বিষয়ে সাহাবাদের জানা ও আমল করার কৌতূহল ছিল। আগ্রহ ছিল আমল করার প্রতি। আমাদের জন্য এতে শিক্ষা রয়েছে। রয়েছে মহানবী (সা.)-কে ভালোবাসার যথাযথ নীতিমালা।