

রাশিয়ার দখলে চলে যাওয়া সব জায়গা ইউক্রেনের পক্ষে মূল রূপে ফিরে পাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গতকাল মঙ্গলবার নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প এমন কথা বলেছেন। এটিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে তাঁর অবস্থানের ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ট্রুথ সোশ্যাল পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, যেখান থেকে এই যুদ্ধ শুরু হয়েছিল, সেই মূল সীমানাগুলো ইউরোপ ও ন্যাটোর সহায়তা নিয়ে পুনরুদ্ধার করতে পারে ইউক্রেন। রাশিয়ার অর্থনীতির ওপর বাড়তে থাকা চাপ এ ক্ষেত্রে সহায়ক হবে বলে মনে করেন তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাম্প। এরপরই তিনি এ মন্তব্য করেন।
ট্রাম্প অনেকবারই ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে উদ্যোগ নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তবে ট্রাম্প তখন সতর্ক করেছিলেন, শান্তিপ্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ইউক্রেনকে কিছু ভূখণ্ড ছাড়তে হতে পারে। আর এমন প্রস্তাব জেলেনস্কি বারবারই প্রত্যাখ্যান করেছেন।
ট্রুথ সোশ্যাল পোস্টে ট্রাম্প আরও ইঙ্গিত দিয়েছেন, ইউক্রেন হয়তো এর চেয়েও বেশি কিছু অর্জন করতে পারে। তবে তিনি এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি।
রাশিয়ার দখলে চলে যাওয়া ক্রিমিয়া প্রসঙ্গে কোনো কথা বলেননি ট্রাম্প। ইউক্রেনের এ অংশটি ২০১৪ সালে রাশিয়া দখল করে এবং রুশ ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত করে। আর ২০২২ সালে রাশিয়া পুরোদমে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে।
ট্রাম্প বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়ার সামরিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ‘ভালোভাবে জানা–বোঝার’ পর তাঁর অবস্থান বদলেছে।
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘পুতিন এবং রাশিয়া বড় ধরনের অর্থনৈতিক সমস্যার মধ্যে আছে। আর এখনই ইউক্রেনের পদক্ষেপ নেওয়ার সময়।’ এ সময় ট্রাম্প রাশিয়াকে ‘কাগুজে বাঘ’ বলে উল্লেখ করেন।
ট্রাম্পের অবস্থানের এই ‘বড় পরিবর্তন’কে স্বাগত জানিয়েছেন জেলেনস্কি। জাতিসংঘ ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, তিনি বুঝতে পেরেছেন যে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছে।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে জেলেনস্কি বলেন, ‘আমি মিথ্যা বলতে চাই না। আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।’ তবে অস্ত্র, আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ও ড্রোন সরবরাহ করা হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
ফক্সের উপস্থাপক ব্রেট বায়ারের সঙ্গে আলাপকালে জেলেনস্কি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, পুতিন যে অনেকবার ট্রাম্পের সঙ্গে মিথ্যা কথা বলেছেন, এটিও আমাদের মধ্যে পার্থক্য গড়ে দিয়েছে।’
গতকাল জাতিসংঘে ভাষণ দেওয়ার পর ট্রাম্প আরও বলেন, ন্যাটোর সদস্যদেশগুলোর উচিত রাশিয়ার কোনো উড়োজাহাজ তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করলে তা গুলি করে ধ্বংস করা। সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি দেশের আকাশসীমায় রাশিয়ার যুদ্ধবিমান ও ড্রোন শনাক্ত হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে তিনি এ কথাগুলো বলেন।
গত সপ্তাহে এস্তোনিয়া ও পোল্যান্ড কর্তৃপক্ষ দাবি করেছিল, রাশিয়া তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে। এ ঘটনার পর ন্যাটোর অন্য সদস্যদেশগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসার আগ্রহ দেখিয়েছে তারা। ন্যাটোর আরেক সদস্যদেশ রোমানিয়াও বলেছে, রাশিয়ার ড্রোন তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে।
মঙ্গলবারের বৈঠকের পর ন্যাটো একটি বিবৃতি দিয়েছে। সেখানে রাশিয়ার কার্যকলাপের নিন্দা জানানো হয়েছে। আত্মরক্ষার্থে সামরিক-বেসামরিক সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে তারা।