

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মলচত্বরে রাত দশটার পরে এক ছাত্রী প্রবেশ করতে গিয়ে প্রক্টরিয়াল বডির বাধার মুখে পড়ার ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে পূর্ব ঘোষণা দিয়ে রোববার রাত দশটার পরে মলচত্বরে আড্ডায় অংশ নিয়েছেন একদল ছাত্রী। এ দিকে বাধা দেওয়ার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমেদ।
রোববার রাত সোয়া দশটার দিকে নারী শিক্ষার্থীরা মল চত্বরে ফোয়ারার সামনে আসেন। তারা একটি কেক কাটেন। পরে কিছু সময় আড্ডা দিয়ে তারা চলে যান।
তিনি বলেন, অনেক মেয়ের বাসা দূরে। যেমন উত্তরবঙ্গ থেকে যারা আসে, তাদের হলে পৌঁছাতে সাত-আট ঘণ্টা লাগে। কিন্তু হল গেট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে রাত দশটায়। এরপরে তারা কি করবে? তখন তো তাদের এই ইউনিভার্সিটিতে ঘুরতে হয়। এই সান্ধ্যকালীন আইনের মানেটা আসলে কি আমি জানি না।
গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় মুখপাত্র আশরেফা খাতুন বলেন, আমরা এখানে আড্ডা দিচ্ছি। এটা তো স্বাভাবিকভাবে আমরা আড্ডা দিতেই পারি।
এ দিকে রোববার প্রক্টর অফিসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শনিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মলচত্বরে প্রবেশের সময় এক নারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির ঘটনা ঘটে। আমি এই ঘটনার জন্য প্রক্টর হিসেবে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, নারী শিক্ষার্থীদের রাত ১০টার পর ক্যাম্পাসের বিভিন্ন এলাকায় প্রবেশে কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি। এ ধরনের কোনো বিজ্ঞপ্তি প্রক্টর দপ্তর থেকে দেওয়া হয়নি।
শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে বহিরাগত ও ভবঘুরেদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। এতে আরও জানানো হয়, শিক্ষার্থীরা যেন নিরাপদে ক্যাম্পাসে চলাচল করতে পারেন সে লক্ষ্যে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে এবং এ বিষয়ে সবার সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে।
এর আগে শনিবার রাতে এক শিক্ষার্থী মলচত্বরে প্রবেশ করতে গিয়ে নিরাপত্তাকর্মীদের বাধার মুখে পড়ার অভিযোগ তোলেন। ফেসবুকে একটি পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, মল চত্বরে আমরা ঢোকার সময় দুইজন গার্ড আমাদের ডেকে বারণ করেন ভিতরে ঢুকতে। তিনি জানালেন- নিয়ম হয়েছে উপরের অর্ডারে, মেয়েরা মলচত্বরে ১০টার পর ঢুকতে পারবে না।
তিনি আরও লেখেন, আমি এরপর প্রক্টরকে কল দেই। আমি জানালাম যে এই নিয়ম আমাদের অবগত করা হয় নাই কেনো। কারণ আমরা তো হয়রানিতে পড়ছি। তার জবাবে তিনি জানান আমরা যেহেতু নোটিশ করিনি আমাদের নিয়ম জানানো হবে, আর এতরাতে কল দেয়াতে তিনিও হয়রানি হচ্ছেন।
পোস্টে ওই শিক্ষার্থী জানান, প্রক্টর পরে নিরাপত্তাকর্মীদের তাকে এবং তার বান্ধবীকে প্রবেশের অনুমতি দিতে বলেন। তবে তাদের কার্ডের ছবি তুলতে হয় এবং অভিভাবকের ফোন নম্বরও চাইতে বলা হয়।
ঘটনা উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, আসলে মলচত্বরের এ নিয়ম কবে থেকে চালু হলো? আর যাদের জন্য এ নিয়ম তাদেরকে জানানো হইছে কী না? মেয়ে শিক্ষার্থীরা তার নিজের ক্যাম্পাসের মলচত্বরে ঢুকতে পারবে না বা নিয়মটা আসলে কী?
এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এতে ছাত্র ইউনিয়নের ঢাবি শাখার সভাপতি মেঘমল্লার বসু প্রতিক্রিয়া জানান।
এ ঘটনায় ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) এস এম ফরহাদ বলেছেন, এইসব অদ্ভুত নিয়মের অবশ্যই সমাধান করা হবে। হলে প্রবেশের সময়সীমা ও পরিচয় সনাক্তকরণ বিষয়ে পাঁচ ছাত্রী হলের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সাথে পরামর্শ করে সম্মিলিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সেই সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য করা হবে।