[caption id="attachment_7132" align="aligncenter" width="600"]
‘দ্য স্ম্যাশিং মেশিন’ সিনেমায় সহশিল্পীদের সঙ্গে ডোয়াইন জনসন ও এমিলি ব্লান্ট[/caption]
ডোয়াইন জনসন ‘দ্য রক’ নামটাই যেন এক ব্র্যান্ড। তাঁর নাম শুনলেই চোখে ভাসে পাহাড়সম পেশির এক মানুষ, যিনি এক হাতে গাড়ি উল্টিয়ে দিতে পারেন, ভবন ধসিয়ে দিতে পারেন, আবার বিশ্ব উদ্ধার করতে পারেন নির্দ্বিধায়। বক্স অফিসেও সাফল্যের ঝড় তোলাটা তাঁর জন্য রুটিন কাজ। এবার সেই পরিচিত ছক ভেঙে হাজির হলেন ৫৩ বছর বয়সী এই তারকা। বেনি সাফদি পরিচালিত ‘দ্য স্ম্যাশিং মেশিন’ সিনেমায় দ্য রককে দেখা যাবে একেবারে নতুন এক রূপে। যাঁর লক্ষ্য কেবল বক্স অফিস নয়; বরং দর্শকের হৃদয় ও সমালোচকদের প্রশংসা। সম্প্রতি ইতালির ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে যখন ‘দ্য স্ম্যাশিং মেশিন’-এর প্রিমিয়ার হলো, তখনই বোঝা গেল কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে। লালগালিচায় দাঁড়িয়ে ডোয়াইন জনসন তাঁর চিরচেনা বিদ্যুৎ গতির হাসি হাসলেও চোখে ছিল এক ভিন্ন ধরনের দীপ্তি। কারণ, সিনেমাটি তাঁর ক্যারিয়ারের একটি মাইলফলক হতে যাচ্ছে। ‘দ্য স্ম্যাশিং মেশিন’ নির্মিত হয়েছে সাবেক মিশ্র মার্শাল আর্টস [এমএমএ] তারকা ও রেসলার মার্ক কেরের জীবনকাহিনি অবলম্বনে। কেরের জীবনে যেমন ছিল সাফল্য, তেমনি ছিল মাদক আর উত্থান-পতনের গল্প। ছিল জটিল সম্পর্কের এক জাল। এই ক্ষতবিক্ষত, কিন্তু অত্যন্ত মানবিক চরিত্রটিকেই ফুটিয়ে তুলেছেন ডোয়াইন জনসন। সিনেমাটি প্রসঙ্গে জনসন বলেন, ‘অনেক বছর ধরেই ভিন্নধর্মী এবং জটিল চরিত্রে অভিনয়ের ক্ষুধা বয়ে বেড়াচ্ছিলাম।’ ‘দ্য স্ম্যাশিং মেশিন’-এর সুযোগটি তাঁর কাছে এসেছিল সেই দীর্ঘদিনের ক্ষুধা মেটানোর এক স্বর্গীয় আহ্বান হিসেবেই। ডোয়াইন জনসন জানান, তিনি এই সিনেমাটিতে অভিনয় করে কাউকে কিছু প্রমাণ করতে চাননি; বরং নিজের ভেতরের সেই শিল্পীকে তৃপ্তি দিতে চেয়েছেন, যে বছরের পর বছর অপেক্ষা করছিল। তাঁর ভাষ্যে, ‘অনেক দিন ধরেই মনে হচ্ছিল, আমি কি নিজের স্বপ্নে বাঁচি, নাকি অন্যের চোখে দেখা স্বপ্নে? এই সিনেমা হলো নিজের কাছে করা নিজেরই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার একটা যাত্রা।’
এই যাত্রায় জনসনের সঙ্গী হয়েছেন প্রতিভাবান অভিনেত্রী এমিলি ব্লান্ট, যিনি মার্ক কেরের প্রেমিকা ডন স্ট্যাপলসের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। ব্লান্টের চোখে তাঁর সহশিল্পীর এই রূপান্তর ছিল এক ‘শিহরণ-জাগানিয়া’ অভিজ্ঞতা। তিনি বলেন, ‘ সেটে ডোয়াইন সম্পূর্ণ অন্য মানুষে রূপান্তর হয়ে যেতেন। তিনি চরিত্রে এতটাই হারিয়ে যেতেন যে, ক্যামেরা কাটের পরও তাঁকে কিছুক্ষণের জন্য সেই আবেগ থেকে বেরিয়ে আসতে হতো। পাশে থেকে তা দেখাটা সত্যিই অবিশ্বাস্য এক অভিজ্ঞতা ছিল। এটি শুধু একটি চরিত্রই নয়, এটি এক আত্মসমর্পণ।’ ব্লান্টের মতে, সিনেমাটি শুধু একটি এমএমএ ফাইটারের গল্পই বলে না; এটি ভালোবাসা, দ্বন্দ্ব, অস্থিরতা এবং নিবেদনের গল্প। দুজন মানুষ নিজস্ব ক্ষত, দুর্বলতা আর অপূর্ণতার ভেতর থেকেও একে অপরকে আঁকড়ে ধরে। সেই জটিল বন্ধন কখনও সান্ত্বনা দেয়, কখনও আবার আরও অশান্ত করে তোলে। ফলে দর্শক শুধু তাদের যাত্রা দেখবেন না; বরং চরিত্রগুলোর গভীরে প্রবেশ করবেন, তাদের স্বপ্ন আর বেদনার ভার যেন নিজের ভেতরেও অনুভব করবেন।’
যদিও বিনোদন অঙ্গনের সঙ্গে ডোয়াইন জনসনের রয়েছে এক দীর্ঘ যাত্রা। ৯০-এর দশকে রেসলিংয়ের রিংয়ে ‘দ্য রক’ হিসেবে তিনি হয়েছিলেন এক কিংবদন্তি। ২০০৪ সালে রেসলিং থেকে সরে এসে তিনি ‘দ্য স্করপিয়ন’ সিনেমার মাধ্যমে রুপালি পর্দায় নাম লেখান। এরপর ধাপে ধাপে ‘জুমানজি’, ‘সান আন্দ্রেয়াস’, ‘ব্ল্যাক অ্যাডাম’ এবং ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস’ ফ্র্যাঞ্চাইজির মতো ব্লকবাস্টার সিনেমাগুলো তাঁকে হলিউডের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও বাণিজ্যিকভাবে সফল তারকাদের একজন বানিয়েছে।