রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির ৭১ শতাংশ শিক্ষক-শিক্ষার্থীর এখনও ঘুমে সমস্যা হচ্ছে। মানসিক রোগে ভোগা শিশুর বড় অংশ বাড়িতে অবস্থান করছে।
গতকাল শনিবার বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএমইউ) বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে গবেষণার বরাত দিয়ে এসব তথ্য জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলেন, দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা মানসিকভাবে অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে শিশুদের ওপর এর মারাত্মক প্রভাব দেখা দিয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে তাদের চিকিৎসা দেওয়া দরকার।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের রেজিস্ট্রার ডা. আরিফুজ্জামান জানান, বিমান দুর্ঘটনার পর মাইলস্টোনের ২৫৫ শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের ওপর করা গবেষণায় দেখা গেছে, ৭১ শতাংশের ঘুমে সমস্যা হচ্ছে। খিটখিটে মেজাজ ২৯ শতাংশ, ফ্ল্যাশব্যাক ২৬, ক্ষুধামান্দ্য ২৬, মনোযোগের ঘাটতি ২০ ও কাজের প্রতি অনাগ্রহ দেখা গেছে ২০ শতাংশের।
তিনি বলেন, এ দুর্ঘটনায় মানসিক রোগে ভোগা শিশুর বড় অংশ বাড়িতে অবস্থান করছে। তারা রাতে ঘুমাতে পারছে না। জরুরি প্রয়োজন হলেও এসব শিশু চিকিৎসার আওতায় আসছে না। গবেষণার কাজ করতে গিয়ে আমরা দেখেছি, অনেকের মধ্যে আত্মহত্যা করার চিন্তা পর্যন্ত কাজ করছে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সচেতনতামূলক নাটিকা প্রদর্শন হয়। এর পর জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতের মানসিক স্বাস্থ্য ও মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ১২৭ জনের ওপর করা গবেষণার তথ্য জানিয়ে অনুষ্ঠানে ডা. নাজমুল হুদা বাপ্পি বলেন, আহতদের ৮২.৫ শতাংশ মাঝারি থেকে গুরুতর বিষণ্নতায় ভুগছেন। ট্রমা বা আঘাত-পরবর্তী পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডারে (পিটিএসডি) ভুগছেন ৬৪.১ শতাংশ।
তিনি জানান, এ গবেষণায় যুক্ত ৬৯.৬ শতাংশ নিম্ন ও মধ্যবিত্ত। তাদের মধ্যে ৮৯.৪ শতাংশ বন্দুকের গুলিতে আহত। ৮১.১ শতাংশ সময়মতো চিকিৎসা পেয়েছেন; ১০.১ শতাংশ আহতের চিকিৎসা হয়েছে বিলম্বে।
অনুষ্ঠানে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জিয়াউল আলম বলেন, বিমান বিধস্তের ঘটনায় আমরা তৃতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণির ২৮ শিশুকে হারিয়েছি। তিন শিক্ষিকা, তিন অভিভাবক, এক আয়া ছাড়াও পথচারীসহ দুজন নিহত হয়েছেন।
শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে ঘুমাতে পারে না জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা এমন শিক্ষার্থী পেয়েছি, যারা ঘটনার দিন স্কুলে ছিল না। তারপরও মানসিক সমস্যায় ভুগছে। চোখ বন্ধ করলে নিজের ওপর বিমান পড়ছে দেখতে পায় বলে তারা ঘুমাতে পারছে না জানিয়েছে। খেতে পারছে না। এমন এক শিক্ষার্থীকে আমরা চিকিৎসা দিয়ে কিছুটা সুস্থ করতে পেরেছি।
অধ্যক্ষ আরও বলেন, আমরা সাইমন নামে আরেক শিক্ষার্থী পেয়েছি। সে ঘটনার দিন উদ্ধারকাজ করেছিল। সে এখন বিমানের শব্দ নিতে পারছে না। স্কুলের নাম শুনলে আঁতকে উঠছে।
অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, আমাদের সমাজে যাদের জানাবোঝা নেই, তাদের সঙ্গে শিক্ষিত মানুষও মানসিক স্বাস্থ্যসেবার বাইরে থাকছেন। এ তালিকায় চিকিৎসক পরিবারের সদস্যও রয়েছেন। এদের চিহ্নিত করে মানসিক চিকিৎসা দেওয়া দরকার।