
চট্টগ্রাম নগরীর জামালখানে ধর্ষণের পর শিশু বর্ষা হত্যা মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দিয়েছে পুলিশ। গত ২৭ সেপ্টেম্বর তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার এসআই নওশের কোরেশী অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
এতে বলা হয়েছে, ডিএনএ রিপোর্টে বর্ষাকে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি। তবে ময়নাতদন্ত রিপোর্টে ধর্ষণের প্রমাণ মিলেছিল। আসামি লক্ষ্মণ কান্তি দাশও আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে বর্ষাকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।
এ ব্যাপারে এসআই নওশের কোরেশী বলেন, ধর্ষণের পর বর্ষাকে হত্যার মামলা তদন্ত শেষে আসামি লক্ষ্মণ কান্তি দাশকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দিয়েছি। ডিএনএতে কেন ধর্ষণের আলামত আসেনি, তা সংশ্লিষ্টরা বলতে পারবেন।
২০২২ সালের ২৪ অক্টোবর প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী বর্ষা নিখোঁজ হয়। তিন দিন পর নালা থেকে তাঁর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তদন্তে সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করে লক্ষ্মণ কান্তিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে আদালতে জবানবন্দি দেন তিনি।
এ ঘটনায় বর্ষার মা মামলা করেন। ডিএনএ রিপোর্টে ধর্ষণের আলামত মেলেনি– জানতে পেরে বাদী ক্ষুব্ধ। তিনি বলেন, আমার মেয়েকে ধর্ষণের পর খুন করেছে লক্ষ্মণ কান্তি। এটি দুনিয়ার সবাই জানে। তাহলে ডিএনএ রিপোর্টে কেন আলামত আসবে না? এখানে কোনো কারসাজি থাকতে পারে। আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেব।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জাফর ইকবাল বলেন, বর্ষা হত্যাকাণ্ডের শিকার– এটি প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত। ধর্ষণের ঘটনা ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এবং আসামির জবানবন্দিতে এসেছে। ফলে শুধু ডিএনএ রিপোর্টের অজুহাতে মামলা ক্ষতিগ্রস্ত করার কোনো সুযোগ নেই।
জাতীয় ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরি ঢাকার ডিএনএ বিশ্লেষক হামিদ আহমেদ বলেন, আমরা লক্ষ্মণ কান্তি দাশ থেকে সম্পূর্ণ ডিএনএ প্রোফাইল পেয়েছি। কিন্তু বর্ষার দেহ থেকে সঠিকভাবে নমুনা না আসায় প্রোফাইলে অনিশ্চিত ফলাফল এসেছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক ডা. চিন্ময় বড়ুয়া বলেন, মাথা থেকে রক্তক্ষরণ ও শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।
ডিএনএতে ধর্ষণের আলামত না আসার বিষয়ে অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্ষার লাশ বস্তাবন্দি অবস্থায় তিন দিন নালার পানিতে ছিল। ফলে ভুক্তভোগীর শরীরে আসামির শুক্রাণু থাকলেও, তা পানিতে মিশে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি। এ জন্য ডিএনএ রিপোর্টে অনিশ্চিত ফলাফল এসেছে।
এ ব্যাপারে ক্রাইম সিন বিশেষজ্ঞ মো. কামরুজ্জামান বলেন, বর্ষার ডিএনএ রিপোর্ট নেগেটিভ আসার মূল কারণ ভুক্তভোগী নালার পানিতে কয়েক দিন ডুবে ছিল। স্রোতে তার শরীর থেকে রক্ত ও শুক্রাণু পানিতে মিশে গেছে। যে গুদাম ঘরে বর্ষা ধর্ষণের শিকার, সেখান থেকে প্রোফাইল করা গেলে সঠিক ফলাফল আসত।
তিনি বলেন, দেশে এখনও ডিএনএ প্রোফাইলের নমুনা সংগ্রহ করার মতো দক্ষ জনশক্তি তৈরি হয়নি। ফলে নানা দুর্বলতায় মামলা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ভুক্তভোগীরা।
চার্জশিটে বলা হয়, ২০২২ সালের ২৪ অক্টোবর বিকেলে মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে চিপস কিনতে গিয়ে নিখোঁজ হয় বর্ষা। ২৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় জামালখানের সিকদার হোটেলের পেছনের নালা থেকে তার বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তদন্তে পুলিশ শিশুটির বাসার অদূরে শ্যামল স্টোরের কর্মচারী লক্ষ্মণ কান্তি দাশের সম্পৃক্ততা পায়। ২৮ অক্টোবর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে লক্ষ্মণ জানান, ২৪ অক্টোবর বিকেলে ১০০ টাকা দেওয়ার লোভ দেখিয়ে বর্ষাকে দোকানের গুদাম ঘরে নিয়ে যান তিনি। সেখানে নাক-মুখ চেপে ধরে ধর্ষণ করেন। যোনিপথ দিয়ে রক্ত আসতে থাকে। কোনোভাবে বন্ধ হচ্ছিল না। ভয় পেয়ে শ্বাসরোধ ও মাথায় আঘাত করে বর্ষাকে হত্যা করেন লক্ষ্মণ। পরে গুদামে রাখা টিসিবির সিলযুক্ত প্লাস্টিকের একটি বস্তায় লাশ ভরে; অন্যটিতে ভুক্তভোগীর পোশাক ও স্যান্ডেল পেঁয়াজের খোসাসহ ভরে নালায় ফেলে দেন লক্ষ্মণ।