ভুল চিকিৎসার কারণে শিশুর চোখের ক্ষতি, ৪ চিকিৎসকের কাছে ক্ষতিপূরণের নোটিশ পাঠানো হলো।

আবরার হোসেন ইভান

ভুল চিকিৎসায় ৪ বছরের শিশু আবরার হোসেন ইভানের দৃষ্টিশক্তি হারানোর ঘটনায় ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে চার চিকিৎসকের কাছে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন এক আইনজীবী। শিশু ইভানের বাবা মো. সাইফুল ইসলাম আইনজীবী মো. মবিনুল ইসলামের মাধ্যমে আজ মঙ্গলবার রেজিস্ট্রি ডাকযোগে এই আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন।

আইনি নোটিশের প্রাপক ৪ চিকিৎসক হলেন রাজধানীর ধানমন্ডির সাত মসজিদ রোডে অবস্থিত বাংলাদেশ আই হসপিটাল অ্যান্ড ইন্সটিটিউটের কনসালটেন্ট পেডিয়াট্রিক অ্যান্ড অপথালমোলজিস্ট ডা. কাজী সাব্বির আনোয়ার, কনসালটেন্ট ভিট্রিও-রেটিনা স্পেশালিস্ট অ্যান্ড ফ্যাকো সার্জন ডা. আইরিন হোসেন, হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. মাহবুবুর রহমান চৌধুরী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. নিয়াজ আব্দুর রহমান।

আইনি নোটিশের অভিযোগে বলা হয়, মো. সাইফুল ইসলামের ৪ বছরের সন্তান আবরার হোসেন ইভান জন্মলগ্ন থেকেই ডান চোখে একটু কম দেখত। ছেলের চোখের চিকিৎসার জন্য তিনি বাংলাদেশ আই হসপিটাল অ্যান্ড ইন্সটিটিউটের গত বছর ৩১ জুলাই ডাক্তার দেখাতে যান। সেখানে তিনি ডা. কাজী সাব্বির আনোয়ারকে দেখান। ডা. সাব্বির আনোয়ার চোখ পরীক্ষা করে শিশু ইভানের ডান চোখে ছানি আছে এবং অপারেশন করে চোখে লেন্স লাগানোর পরামর্শ দেন।

তার কথায় রাজি হয়ে সমস্ত পরীক্ষা করান সাইফুল ইসলাম। এরপর ওই বছর ১ আগস্ট ডা. সাব্বির শিশু ইভানের ডান চোখের ছানি অপারেশন করেন এবং কিছু ওষুধ লিখে দিয়ে ১৫ দিন পর দেখা করতে বলেন। এরপর শিশু ইভানকে নিয়ে গত বছর ১৭ আগস্ট ডা. সাব্বির দেখালে তিনি একটি ড্রপ লিখে দিয়ে ফের ২ সপ্তাহ পর দেখা করতে বলেন। সে অনুযায়ী ২ সপ্তাহ পর ২ সেপ্টেম্বর ডা. সাব্বিরের সাথে দেখা করলে তিনি কোনো ওষুধ না দিয়ে চোখে লেন্স না লাগিয়ে একটি চশমা প্রেসক্রাইব করেন এবং শিশু ইভানকে তা সারাক্ষণ পরে থাকার পরামর্শ দেন এবং ফের ৩ মাস পর দেখা করতে বলেন।

এরপর শিশু ইভানকে নিয়ে তার বাবা ওই বছর ৪ ডিসেম্বর ডা. সাব্বিরের সাথে দেখা করে চোখে লেন্স লাগানোর কথা বললে তিনি ডা. ইকবালের কাছে যেতে বলেন। ডা. ইকবালের সাথে দেখা করলে তিনি ডা. আইরিন হোসেনের কাছে যাওয়ার পরামর্শ (রেফার) দেন। ওইদিনই ডা. আইরিন হোসেনকে দেখান। তিনি চোখ পরীক্ষা করে বলেন, ডাক্তার চোখের ছানি অপারেশন করার সময় রেটিনা কেটে ফেলেছে। দ্রুত দুই-একটা অপারেশন করতে হবে। এরপর তিনি যথাক্রমে ওই বছর ৮ ডিসেম্বর, চলতি বছর ৮ জানুয়ারি ১ মাসের ব্যবধানে দুইবার অপারেশন করেন।

একই চোখে বারবার অপারেশন করায় শিশু ইভান সবসময়ই চোখে তীব্র ব্যথা অনুভব করত, তার চোখ ধীরে ধীরে ছোট হতে হতে প্রায় বন্ধ হয়ে যায়, চোখ দিয়ে অনবরত ফ্লইড বের হতে থাকে।

নোটিশে বলা হয়, ছেলের কষ্ট দেখতে না পেরে বাবা গত ৪ মার্চ ডা. আইরিন সাথে দেখা করলে তিনি ডা. সাব্বিরের কাছে রেফার করেন। পরদিনই ৫ মার্চ ডা. সাব্বিরেরে সাথে দেখা করলে তিনি কোনো ট্রিটমেন্ট না দিয়ে ঈদুল ফিতরের পর ফের ডা. আইরিনের কাছে যাওয়ার জন্য রেফার করেন।ঈদুল ফিতরের পর শিশু ইভানকে নিয়ে ডা. আইরিনের সাথে দেখা করলে তিনি গত ১৬ এপ্রিল তৃতীয় দফা এবং সম্মিলিতভাবে চতুর্থ দফা অপারেশন করেন এবং ১ মাস পর দেখা করতে বলেন। চতুর্থ দফা অপারেশনের ১ মাস পর গত ১৯ মে শিশু ইভানকে নিয়ে ডা. আইরিনের কাছে ফলোআপ ভিজিটে আসলে তিনি ইভানের চোখে পঞ্চম দফা অপারেশনের পরামর্শ দিলে শিশুর বাবা চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে সন্দিহান হয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে পরদিনই হিকমাহ আই হসপিটালের একজন ফ্যাকো, ল্যাসিক ও রেটিনা সার্জনের সাথে দেখা করেন।

ওই চিকিৎসক বলেন, বারবার অপারেশন করায় তার ছেলের চোখ চিরতরে নষ্ট হয়ে গেছে। এটি আর ভালো হবার নয়। অহেতুক আরও অপারেশন করে জটিলতা না বাড়াতে পরামর্শ দেন।

নোটিশে আরও বলা হয়, সর্বশেষ গত ২ জুলাই শিশু ইভানকে ডা. আইরিনের কাছে নিয়ে যাওয়া হলে তিনি পুরাতন কৌশল অবলম্বন করে ডা. নিয়াজ আব্দুর রহমানের কাছে রেফার করেন। এভাবে একজন অসহায় শিশু রোগীর অতি মূল্যবান সম্পদ চোখের চিকিৎসা নিয়ে ছিনিমিনি খেলেন।

এতে বলা হয়, চোখের ছানি অপারেশন করতে গিয়ে অবহেলাভরে আনাড়ি হাতে ডা. কাজী সাব্বির ৪ বছরের শিশু সন্তান ইভানের চোখের রেটিনা কেটে ফেলেন। পরবর্তীতে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ডা. আইরিন চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা করে তার চোখে আরও তিনটি অপারেশন করে উদ্দেশ্য-প্রণোদিতভাবে কালক্ষেপণ করেন। দীর্ঘ ১ বৎসরকাল চিকিৎসায় শিশুর পরিবার আর্থিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। তার ছেলের চোখের আলো চিরতরে নিভে যায়।

দীর্ঘ ১ বছর অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট ও ব্যথা বেদনা সহ্য করে সর্বোপরি দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে চরমভাবে মানসিক হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। তার এই দৃষ্টিশক্তি হারানোর ক্ষতি টাকার অঙ্কে নিরূপণ করা সম্ভব নয়। তবু এ ক্ষতি এক কোটি টাকা নিরূপন করা হলো। তাই নোটিশপ্রাপ্তির ১৫ দিনের মধ্যে শিশুর পরিবারের সাথে বসে শিশু ইভানের বিদেশে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন নতুবা অথবা শিশু ইভানকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান করবেন অন্যথায় চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে দেশের দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Leave a Reply

Scroll to Top