[caption id="attachment_1301" align="alignnone" width="600"]
এশিয়া কাপ ট্রফি[/caption]
এখনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)। তবে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বিসিসিআইয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, এশিয়া কাপ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নাম প্রত্যাহার করে নিতে চলেছে ভারত। বিষয়টি মৌখিকভাবে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলকে (এসিসি) জানিয়েও দেওয়া হয়েছে। এ বছরের এশিয়া কাপ হওয়ার কথাও ভারতেই।
তবে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এর খবর কতটা সত্যি, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। টাইমস অফ ইন্ডিয়া-কে দেওয়া এক বিবৃতিতে বিসিসিআই-এর যুগ্ম সচিব দেবজিত সাইকিয়া বলেছেন, ‘কিছু সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে, বিসিসিআই এশিয়া কাপ এবং মহিলা ইমার্জিং এশিয়া কাপ থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এই খবরগুলো পুরোপুরি ভিত্তিহীন। এখন পর্যন্ত বিসিসিআই এমন কোনো সিদ্ধান্তই নেয়নি, এমনকি এই নিয়ে আলোচনা পর্যন্ত হয়নি। আমরা এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলকে (এএসি) কোনো চিঠিও দেইনি।’
সাইকিয়া এটাও স্পষ্ট করে জানান, ‘যখনই এএসিসি সংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদমাধ্যমে জানানো হবে।’
সুতরাং বাস্তবতা হচ্ছে, এবার এশিয়া কাপ হবে না—এটা এখনই বলে দেওয়া যাচ্ছে না। আবার একই সঙ্গে এটাও সত্য, ভারত-পাকিস্তানের এই রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে এশিয়া কাপ না হওয়ার শঙ্কাও যথেষ্ট।
এটাবোঝা মোটেও কঠিন কিছু নয়। সম্প্রতি ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের সময়ই এই শঙ্কা জেগেছিল। যুদ্ধ পরিস্থিতির সময় ভারতের একাধিক সাবেক ক্রিকেটার পাকিস্তানের সঙ্গে ক্রিকেট সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা বলেছেন। যাঁদের মধ্যে ছিলেন সুনীল গাভাস্কার, সৌরভ গাঙ্গুলী, গৌতম গম্ভীর, বীরেন্দর শেবাগ, শিখর ধাওয়ান, ইরফান পাঠানরা।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস–এর প্রতিবেদনে ভারত কেন এশিয়া কাপে খেলবে না, সেই সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যায় মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। টুর্নামেন্টের আয়োজক যেহেতু এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি), স্বাভাবিকভাবেই এশিয়া কাপেও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকেন এসিসি সভাপতি।
বর্তমানে এসিসির শীর্ষ পদে আছেন মহসিন নকভি, যিনি আবার পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) চেয়ারম্যান, একই সঙ্গে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ফলে সীমান্ত-উত্তেজনার আবহে ভারত চায় না এই টুর্নামেন্টে পাকিস্তানকে আতিথ্য দিতে।
কোনো নির্দিষ্ট দেশের এশিয়া কাপ বর্জনের ঘটনা কিন্তু এবারই প্রথম নয়; ১৯৮৬ সালে এশিয়া কাপের দ্বিতীয় আসর বসেছিল শ্রীলঙ্কায়। কিন্তু ভারত সেই টুর্নামেন্টে অংশ নেয়নি। কারণ, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তখন তাদের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক টানাপোড়েন চলছিল। ভারতের বদলি হিসেবে খেলেছিল বাংলাদেশ, যারা তখন আইসিসির সহযোগী সদস্য।
মহাদেশীয় টুর্নামেন্টে ওইবারই প্রথম অংশ নিয়েছিল বাংলাদেশ। দুই বছর পরে সেই বাংলাদেশই প্রথমবারের মতো আয়োজন করে এশিয়া কাপ। সেই আসরে স্বাগতিকেরা ছাড়াও অংশ নিয়েছিল ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা।
১৯৯০–৯১ সালের আসর বসেছিল ভারতে। কিন্তু সেই আসরে আবার পাকিস্তান অংশগ্রহণ করেনি। কারণ ওই একই; ভারতের সঙ্গে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক টানাপোড়েন।
এরপর অবশ্য আর বর্জনের ঘটনা ঘটেনি। তবে ২০২৩ সালেও দেখা যায় সেই পুরোনো জটিলতা। ভারত পাকিস্তানে খেলতে অস্বীকৃতি জানায়। ফলে এশিয়া কাপ হয় হাইব্রিড মডেলে—আংশিক পাকিস্তানে, বাকিটা শ্রীলঙ্কায়।
দেখা যাচ্ছে, ভারত কিংবা পাকিস্তানকে ছাড়াও এশিয়া কাপ হয়েছে। আর এখন তো অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যাও বেড়েছে। এবারই যেমন এশিয়া কাপে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তানের মতো চেনা দলগুলো ছাড়াও খেলার কথা সংযুক্ত আরব আমিরাত, হংকং ও ওমানের।
[caption id="attachment_1302" align="alignnone" width="600"] পাকিস্তানের বিপক্ষে আর খেলতে চায় না ভারত[/caption]
তবে বাস্তবতা হচ্ছে, স্বাগতিক ভারতই যদি না থাকে, তাহলে টুর্নামেন্ট সরিয়ে নিতে হবে অন্য কোনো দেশে। যেমন শ্রীলঙ্কায় বা সংযুক্ত আরব আমিরাতে। আবার ভারত না থাকলে এশিয়া কাপও পড়বে বিশাল লোকসানের মুখে, যে লোকসান মাথায় নিয়ে এশিয়া কাপ আয়োজন করা হয়তো সম্ভব হবে না এসিসির।
এসিসি এরই মধ্যে ১৭ কোটি মার্কিন ডলারে (২০৭১ কোটি টাকা) আগামী চার এশিয়া কাপের সম্প্রচারস্বত্ব সনি স্পোর্টস নেটওয়ার্কের কাছে বিক্রি করেছে। স্বত্ব বিক্রির সময় একটি অনানুষ্ঠানিক সমঝোতাও হয়েছিল যে প্রতিটি আসরে অন্তত দুটি ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ থাকবে।
দল দুটি যদি ফাইনালে ওঠে, তাহলে তিনবার মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনাও থাকবে। কিন্তু ভারত না খেললে সনি স্পোর্টস নেটওয়ার্ক স্বাভাবিকভাবেই এসিসিকে বিপুল অর্থ দিতে অস্বীকৃতি জানাবে। এতে ক্ষতির মুখে পড়বে সংস্থাটি।
আবার ক্রিকেট-দর্শকের আধিক্যের কারণেই ভারত ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের প্রধান চালিকা শক্তি। সেই ভারত না খেললে স্বাভাবিকভাবেই টুর্নামেন্টের প্রচার কমে যাবে, কমবে স্পনসরশিপ ও ডিজিটাল মাধ্যম থেকে আয়।
এর অর্থ ভারতকে ছাড়া এশিয়া কাপ করা মানে এসিসির কোষাগারে টান পড়া। সেটা এশিয়ান ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা করবে বলে মনে হয় না।