[caption id="attachment_2893" align="alignleft" width="719"]
পোশাক কারখানায় কাজ করছেন শ্রমিকেরা । ফাইল ছবি: সত্যের পথে[/caption]
বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক রপ্তানি গত আগস্টে কমেছে। যদিও ভারতে পণ্যটির রপ্তানি বেড়েছে। এমন সময় ভারতে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে, যখন বিধিনিষেধের কারণে শুধু চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশটিতে পোশাক রপ্তানি করা হচ্ছে।
স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পণ্য রপ্তানিতে গত চার মাসে তিন দফায় বিধিনিষেধ দেয় ভারত। গত ১৭ মে প্রথম দফায় অন্যান্য পণ্যের পাশাপাশি বিধিনিষেধের মুখে পড়ে পোশাক রপ্তানি। ভারতের বিধিনিষেধ অনুযায়ী, ভারতের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশ থেকে স্থলবন্দর দিয়ে পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়। শুধু খোলা রাখা হয় ভারতের মুম্বাইয়ের নভোসেবা ও কলকাতা বন্দর। নভোসেবায় পণ্য পাঠাতে হয় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দর হয়ে। একটি কনটেইনার চার দফায় ওঠানো-নামানো করতে হয়। এর ফলে খরচ ও সময় বেশি লাগে।
রপ্তানিকারকেরা বলছেন, খরচ বাড়লেও অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানিতে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সুবিধা বেশি। কারণ, শুল্কমুক্ত সুবিধায় বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি করতে পারেন ভারতের ব্যবসায়ীরা।
জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম সত্যের পথকে বলেন, ভারতে তৈরি পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধি খুবই ইতিবাচক সংবাদ। দেশটির সরকারের আরোপ করা বিধিনিষেধের ফলে সমুদ্রপথে পণ্য পাঠাতে সময় বেশি লাগে, তবে সাশ্রয়ী। সে কারণে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে খুব বেশি চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়নি।
[caption id="attachment_2894" align="aligncenter" width="548"] ইনফোগ্রাফিকস: সত্যের পথে[/caption]
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যে দেখা যায়, বিধিনিষেধের আড়াই মাস পর গত আগস্টে ভারতে পোশাক রপ্তানি হয়েছে আট কোটি ছয় লাখ ডলারের। গত বছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ৬ কোটি ৯২ লাখ ডলারের। এ হিসাবে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ।
এনবিআরের হিসাবে, নিষেধাজ্ঞার পর গত তিন মাসে (জুন-আগস্ট) ভারতে পোশাক রপ্তানি হয়েছে ১৮ কোটি ৩৫ লাখ ডলারের। গত বছর একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ১৫ কোটি ৯১ লাখ ডলারের। এ হিসাবে নিষেধাজ্ঞার পর পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১৫ শতাংশ।
বর্তমানে পোশাক রপ্তানির পুরোটাই নেওয়া হচ্ছে সমুদ্রপথে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। স্থলবন্দর দিয়ে নিষেধাজ্ঞার আগে চট্টগ্রাম দিয়ে রপ্তানির হার ছিল ৩০ শতাংশ। স্থলবন্দর দিয়ে নেওয়া হতো ৬৯ শতাংশ। প্রায় ১ শতাংশের কাছাকাছি যেত আকাশপথে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাবে, বাংলাদেশ থেকে গত মাসে (আগস্ট) তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ। রপ্তানি হয়েছে প্রায় ৩১৭ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক। গত বছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল প্রায় ৩৩৩ কোটি ডলারের পণ্য। তার মানে মোট পোশাক রপ্তানি কমলেও ভারতে বেড়েছে।
পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধির ওপর ভর করে সামগ্রিকভাবে ভারতে রপ্তানি বাড়ছে। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম ২ মাসে ভারতে মোট রপ্তানি হয় ৩১ কোটি ৪২ লাখ ডলারের পণ্য। গত অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ৩০ কোটি ২৮ লাখ ডলারের পণ্য। এ হিসাবে ভারতে সামগ্রিকভাবে রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ৪ শতাংশ।
ভারত বাংলাদেশের অষ্টম শীর্ষ রপ্তানি গন্তব্য। এশিয়ার মধ্যে ভারতেই সবচেয়ে বেশি পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশটিতে প্রায় ১৮২ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে তৈরি পোশাকের রপ্তানি ৩৬ শতাংশ, পোশাক ছাড়া অন্য পণ্যের রপ্তানি ৬৪ শতাংশ।
এনবিআরের তথ্যে দেখা যায়, বাংলাদেশের পোশাকের ভারতের শীর্ষ ক্রেতা টাটা গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ট্রেন্ট লিমিটেড। গত মাসে ভারতে রপ্তানি হওয়া মোট পোশাকের ১৪ শতাংশ বা ১ কোটি ১৪ লাখ ডলারের পোশাক নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এর বাইরে পোশাকের বৈশ্বিক ক্রেতা এইচঅ্যান্ডএম, লেভি স্ট্রস, এমঅ্যান্ডএস, পুমা, ইউনিক্লো, ডিক্যাথেলন, পেপে জিন্স ও বেস্টসেলারের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোও ভারতের বাজারে বিক্রির জন্য বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি করছে।