

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে অভিযোগের বিষয়গুলো নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন কয়েকজন প্রার্থী। তাঁরা অভিযোগগুলো প্রশাসনকে জানিয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা শেষে রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান প্রার্থীরা। তাঁদের প্রশ্ন, নির্বাচনের দুদিন আগে নীলক্ষেতের গাউসুল আজম মার্কেটে ব্যালট পেপার অরক্ষিত অবস্থায় থাকার অভিযোগের বিষয়টি কেন এখনো নির্বাচন কমিশন বা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে পরিষ্কার করা হচ্ছে না? নির্বাচনের এত দিন পরও তাঁদের অভিযোগগুলোর বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গড়িমসি লক্ষ করা যাচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা প্রার্থীদের মধ্যে ছিলেন ডাকসুর স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের সহসভাপতি প্রার্থী উমামা ফাতেমা, ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেলের সহসভাপতি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান, বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেলের সহসভাপতি প্রার্থী আবদুল কাদের প্রমুখ।
আবদুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ডাকসু নির্বাচনের আগে-পরে তাঁরা নানা সংশয়ের কথা বলেছেন। প্রার্থীরা, প্যানেল সদস্যরা, সাধারণ শিক্ষার্থীরা—সবাই তাঁদের সংশয় প্রকাশ করেছেন। নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। নির্বাচনের পরেও তাঁরা উদ্বেগ জানিয়েছেন। তাঁরা স্পষ্ট করে বলেছেন, নির্বাচিত প্রার্থীদের নিয়ে তাঁদের কোনো সমস্যা নেই। তাঁদের উদ্বেগ নির্বাচন কমিশন ও তাদের কার্যক্রম নিয়ে।
প্রার্থীরা কয়েকটি বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে চেয়েছেন বলে উল্লেখ করেন আবদুল কাদের। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যেমন—ব্যালট পেপার গাউসুল আজম মার্কেটে অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে ছিল। এটা ভয়াবহ উদ্বেগজনক। ভোটার উপস্থিতির তালিকা তাঁরা দেখতে চেয়েছেন। কিন্তু এ বিষয়গুলো নিয়ে প্রশাসনের অনীহা সন্দেহ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তাঁরা চান না, বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্ন হোক। তবে প্রশাসন গড়িমসি করলে শিক্ষার্থীদের মনে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, ভবিষ্যতে তা আরও সমস্যা তৈরি করবে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা না হলে এই নির্বাচন ইতিহাসে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকবে।
উমামা ফাতেমা সাংবাদিকদের বলেন, ভবিষ্যতে বাংলাদেশের ইতিহাসে যখন বিচার-বিশ্লেষণ হবে, তখন এই ৯ সেপ্টেম্বরের ডাকসু নির্বাচন নিয়ে নানা বিশ্লেষণ হবে। এই নির্বাচনে যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদের অনেকে নানা উদ্বেগ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বিভিন্ন সময় জানিয়েছেন। বিভিন্ন প্যানেল থেকেও আবেদন করা হয়েছে। লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। কিন্তু এসব বিষয়ে পরিষ্কার করতে প্রশাসনের গড়িমসি তাঁরা লক্ষ করছেন।
উমামা ফাতেমা বলেন, প্রথমত, ব্যালট পেপার গাউসুল আজম মার্কেটে পাওয়া গেছে। দ্বিতীয়ত, ভোটার উপস্থিতির তালিকার বিষয়ে একাধিকবার লিখিতভাবে বলা হলেও তা দেওয়া হয়নি। তাঁরা উপাচার্য ও প্রক্টরের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন। নির্বাচন হয়ে গেছে ১৫ দিন। তবু প্রশাসন আন্তরিকভাবে এসব বিষয়ে সমাধান না করে গড়িমসি করছে।
ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেলের সহসভাপতি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা সবাই রাষ্ট্রের স্বার্থে বেড়ে উঠেছি। আমাদের কাছে জয়-পরাজয় বলতে কিছু নেই। আমরা লড়াই করেছি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য। আমরা সুস্থ রাজনৈতিক প্রক্রিয়া চর্চা করতে চেয়েছি। তাই নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে অনিয়ম–অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও আমরা কোনো আন্দোলন, অবরোধ বা মিছিলে যাইনি। বরং নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই অভিযোগগুলোর বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য পাইনি।’
আবিদুল ইসলাম খান উল্লেখ করেন, তাঁদের উদ্বেগ হলো, গাউসুল আজমের নিচতলায় ব্যালট পেপার অরক্ষিত অবস্থায় পাওয়া গেছে নির্বাচনে দুদিন আগে। এ ছাড়া গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে তাঁরা অনেকগুলো অভিযোগ দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের উচিত অবিলম্বে এগুলোর জবাব দেওয়া।