
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অংশীজনদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংলাপ শুরু হচ্ছে আজ রোববার। মাসব্যাপী সংলাপের প্রথম দিন সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ-অধ্যাপকদের সঙ্গে বৈঠকে বসবে ইসি।
গতকাল শনিবার ইসির এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে আরও বলা হয়, রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সম্মেলন কক্ষে আজ সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং বেলা আড়াইটা থেকে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ-অধ্যাপকদের সঙ্গে সংলাপে বসবে ইসি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে সংলাপে চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। সংলাপ অনুষ্ঠানটি নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল @BangladeshECS এবং অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ Bangladesh Election Commission Secretariat এ সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।
ইসি সূত্র জানায়, মাঝখানে দুর্গাপূজার ছুটি বাদ দিয়ে প্রায় এক মাস এ সংলাপ হবে। এতে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও শিক্ষাবিদরা ছাড়াও পর্যায়ক্রমে গণমাধ্যম প্রতিনিধি, নারী নেত্রী, পর্যবেক্ষক, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, রাজনৈতিক দল ও জুলাই যোদ্ধাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে।
এরই ধারাবাহিকতায় আগামী মাসের মধ্যভাগে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকেও সংলাপে ডাকবে ইসি। বর্তমানে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৫০টি। কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত রেখেছে ইসি। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের নিবন্ধিত শরিক দলগুলোর বিষয়ে আপত্তি রয়েছে গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর। এসব দলকে সংলাপে ডাকা হবে কিনা, তা এখনও স্পষ্ট করেনি কমিশন। প্রধান উপদেষ্টাসহ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে ডাক পায়নি এসব দল।
এ ছাড়া বর্তমানে নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন কার্যক্রম চলছে। প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণ ২২টি দলের মধ্যে জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) চার-পাঁচটি দল ইসির নিবন্ধন পেতে পারে বলে আভাস মিলেছে। তাদেরও সংলাপে রাখতে চায় ইসি। এজন্য দলগুলোর সঙ্গে নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার পর বসা হবে। সেক্ষেত্রে নতুন দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ মধ্য অক্টোবরের পরে হতে পারে।
এদিকে বর্তমানের নিবন্ধিত দলগুলোকে কয়েকটি গ্রুপে ভাগ করে এবং বড় দলগুলোকে আলাদা আলাদা করে সংলাপ হতে পারে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, সবগুলো দলকেই বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ করলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে। তাই বড় দলগুলোকে আলাদা এবং অন্য দলগুলোকে গ্রুপে ভাগ করে নিয়ে সংলাপে বসার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমানেল মাছউদ জানান, রোডম্যাপ অনুযায়ী সংলাপ ও দল নিবন্ধনের কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। রোডম্যাপে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নতুন দল নিবন্ধনের ঘোষণা দিয়েছে ইসি। এ ছাড়া চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে সংলাপ আয়োজনের কথা বলা হয়েছে।
ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, দলগুলোর ক্ষেত্রে কয়েকটি গ্রুপে সংলাপ হতে পারে। কারণ একটা একটা করে বসতে গেলে অনেক সময় লেগে যাবে। আমরা দেখব যেটি সবচেয়ে ভালো হবে, সেটির দিকে যেতে।
২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে ড. এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন দেশে নির্বাচনী সংলাপ প্রথা চালু করে। সংলাপে দল ও অংশীজনদের কাছ থেকে আইনি সংস্কার, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড, ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতসহ নানা বিষয়ে পরামর্শ নিয়ে থাকে ইসি। পরে কমিশনের জন্য আমলযোগ্য পরামর্শগুলো আইনি কাঠামোয় অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। যদিও এবার আইনি বিভিন্ন ধরনের সংস্কার ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছে ফেলেছে নির্বাচন কমিশন। তবে সংসদ নির্বাচনের মূল আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন এখনও বাকি।