[caption id="attachment_6176" align="aligncenter" width="600"]
চট্টগ্রামের নারায়ণহাট এলাকায় ন্যাড়া পাহাড়ে এখন নানা জাতের গাছ ছবি: সত্যের পথে[/caption]
ইটভাটা ও চোরের দল গাছ চুরি করতে করতে ২০ হেক্টর পাহাড় ন্যাড়া করে ফেলে। সবুজ বলতে ঘাস ছাড়া কিছুই ছিল না পাহাড়ে। কিন্তু সেই পাহাড়ে এখন সবুজ ফিরতে শুরু করেছে। এক বছরে দেশীয় প্রজাতির ৫০ হাজার গামারি, চিকরাশি, শিলকড়ই, আমলকী, হরীতকী, বহেড়া, শিমুল, কদম, অর্জুন, ঢাকিজাম, ছাতিয়ান, ইপিল ইপিল ও তুন গাছে ভরপুর। ডাল গজিয়ে সবুজের হাতছানি দিচ্ছে লালমাটির পাহাড়ে।
এই দৃশ্য চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার করেরহাট বিট বনাঞ্চলের। একইভাবে সীতাকুণ্ডের বারৈয়ারঢালা জাতীয় উদ্যানের ন্যাড়া এক হাজার ৫০০ হেক্টর পাহাড়ে এক লাখ গাছও মাথা উঁচু করে বেড়ে উঠছে।
শুধু মিরসরাই-সীতাকুণ্ডে নয়; বন বিনাশ করে কক্সবাজারের রামু সংরক্ষিত বনভূমিতে টেকনিক্যাল স্কুলের নামে দখল করা সরকারি ১৫৬ একর ভূমি উদ্ধার করে সেই ন্যাড়া পাহাড়ে দুই লাখ গাছ লাগিয়েছে বন বিভাগ। বনখেকোরা স্কুলের নামে দখল করা বনভূমিতে থাকা এক লাখ গাছ কেটে হাতিয়ে নেয় বিপুল অর্থ। বিনষ্ট হয় জীববৈচিত্র্য। যদিও বনভূমিতে বনায়ন ছাড়া যে কোনো কাজে ব্যবহার নিষিদ্ধ ছিল। বৃষ্টি, জলবায়ু অনুকূলে থাকায় বনকর্মীদের নিরন্তর পরিচর্যায় তরতর করে বেড়ে উঠছে গাছগুলো। বিপন্ন পশুপাখি, হাতির বিচরণ এবং প্রজনন প্রাকৃতিক খাদ্যের উৎস ও নিরাপদ আবাসস্থল ছিল এ বনাঞ্চলটি।
চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ-বন সংরক্ষক এম এ হাসান বলেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলের ১০টি বিভাগীয় বনাঞ্চলের মধ্যে ন্যাড়া পাহাড়ে গত তিন বছরে প্রায় অর্ধকোটি গাছ লাগানো হয়েছে। উর্বর মাটি হওয়ায় অনেক বনাঞ্চলে ডালপালা গজিয়ে সবুজে ভরে উঠছে পাহাড়ের পর পাহাড়। বন বিভাগ ন্যাড়া পাহাড়ে সবুজ ফিরিয়ে আনতে বনকর্মীরা কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। যার সুফলও মিলছে।
চট্টগ্রাম উত্তর বনের বিভাগীয় কর্মকর্তা সফিকুল ইসলাম বলেন, উত্তর বন বিভাগের হাটহাজারী, নারায়ণ হাট, করের হাট, কুমিরা এবং ইছামতী রেঞ্জের ৩০টি বন বিটে এক হাজার ৫০০ হেক্টর ন্যাড়া পাহাড়ে প্রায় চার লাখ গাছ লাগানো হয়েছে। দুই বছর পর লালমাটির পাহাড় সবুজ আর সবুজের সমারোহে ভরপুর হয়ে উঠবে। প্রাণ-প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণীরা ফিরে পাবে তাদের পুরোনো আবাসস্থল।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে উদ্ধার করা ন্যাড়া পাহাড়ে সবুজায়ন চলছে। ২০২৪ সালের আগস্টের পর রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় ২২০ একর বনভূমি উদ্ধার করে সেখানে নতুন করে বনায়ন করে চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ বন বিভাগ। পাহাড়ে লাগানো হয়েছে ৪৫ লাখ গাছ।
চট্টগ্রাম উত্তর বনাঞ্চলের হাটহাজারী, নারায়ণহাট, করেরহাট, কুমিরা এবং ইছামতী রেঞ্জের ৩০টি বন বিটে এক হাজার ৫০০ হেক্টর পাহাড়ে বনায়ন করা হয়েছে। চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের আওতায় দুই বছরে ১৯৯০ হেক্টর পাহাড়ে, কক্সবাজার দক্ষিণ বনাঞ্চলে ১১ হাজার ৬৬৮ হেক্টর পাহাড়ে পশুখাদ্যের বন বাগান তৈরি করা হয়েছে। উখিয়া রেঞ্জাধীন থাইংখালী বিটে ৩২০ হেক্টর পাহাড়, রামুর জোয়ারিয়ানালা রেঞ্জে দুই বছরে ৮৭২ হেক্টর এবং উখিয়ারঘোনা দোয়ালের ঝিড়ি ব্যাংডেপা বিটের টিটিলাঘাট এলাকার ৫১২ হেক্টর পাহাড়ে ১২ লাখ ৮০ হাজার বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ডালপালা মেলেছে।
কক্সবাজার দক্ষিণ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম সত্যের পথকে বলেন, কক্সবাজারে ন্যাড়া পাহাড়ে দু-তিন বছরে বিপন্ন বা বিলুপ্ত প্রায় দেশীয় প্রজাতির লাখ লাখ গাছ লাগানো হয়েছে। এত পুনরায় প্রকৃতিতে প্রাণ ফিরে এসেছে। ন্যাড়া পাহাড়ে সবুজায়ন করায় বনাঞ্চলে শিয়াল, বানর, হনুমান, বন মোরগসহ বন্যপ্রাণীর বিচরণও বাড়ছে।