ঘুরতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। শুটিংয়ের কাজে হোক বা ব্যক্তিগত সময়ে, সুযোগ পেলেই ছুটে যাই নতুন কোথাও। জীবনে প্রথম দেশের বাইরে গিয়েছিলাম থাইল্যান্ডে, ২০১৩ সালে। একটি রিয়েলিটি শো থেকে শোবিজে আমার যাত্রা। আর সেই শোর আয়োজকদের মাধ্যমেই প্রথম বিদেশ ভ্রমণ। প্রথম বিদেশ ভ্রমণের স্মৃতি যে কতটা গভীর হতে পারে, তা আজও টের পাই। প্রথমবার বিদেশের মাটিতে পা রেখেই অন্য রকম একটা অনুভূতি হয়েছিল, যা বলে বোঝাতে পারব না। তখন বাংলাদেশে প্রচণ্ড শীত। ভেবেছিলাম, থাইল্যান্ড দুই ঘণ্টার পথ; আবহাওয়াও নিশ্চয়ই কাছাকাছি!
তাই গরম কাপড় গুছিয়ে নিয়ে রওনা দিলাম। গিয়ে দেখি উল্টো রোদ ঝলমলে গ্রীষ্ম! জীবনের প্রথম বিদেশযাত্রাতেই এমন বোকামি, ভাবলেই এখন হেসে দিই। বিদেশে গিয়ে অনেকেরই মাথায় থাকে শপিংয়ের চিন্তা। আমার থাকে শহরটাকে চোখ ভরে দেখার ইচ্ছা। নতুন দেশে গেলে আমি বরং সেখানকার খাবারগুলো ট্রাই করি। সি-ফুড তো পছন্দেরই; সঙ্গে অর্ডার করি স্পেশাল ডিশগুলোও। ফ্রান্স, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, সুইজারল্যান্ড, থাইল্যান্ড, ভারত কিংবা নেপাল– অনেক দেশেই গিয়েছি। কিন্তু সুইজারল্যান্ডের কথা আলাদা করে বলতেই হয়। পুরো পৃথিবীর সৌন্দর্য যদি এক পালে ধরা যায়, তবে সুইজারল্যান্ড অন্য পালে একাই দাঁড়িয়ে থাকবে। মনে হয় যেন সৃষ্টিকর্তা নিজ হাতে দেশটিকে সাজিয়ে দিয়েছেন। সবুজ উপত্যকা, তুষারে মোড়া পাহাড়, ঝর্ণা আর স্বচ্ছ হ্রদ– প্রতিটি দৃশ্য যেন পোস্টকার্ডে আঁকা ছবির মতো। আশ্চর্য লাগে, কীভাবে মানুষ এতটা পরিপাটি করে একটি দেশকে আপন করে রাখে! সেখানে দাঁড়িয়ে মনে হয়েছিল, সময় যদি থেমে যেত! ইট-কাঠের শহর ছেড়ে মাঝেমধ্যে সেখানে যেতে খুব মন চায়।
বছরের পুরোটা সময় শুটিং নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। মন চাইলেই তো নিজের প্রিয় কোনো জায়গায় যাওয়ার জন্য সময় বের করা মুশকিল। সমুদ্র আমার ভালো লাগে, পাহাড়ও ভালো লাগে; তবু পাহাড়ই আমাকে সবচেয়ে কাছে টানে। অনেকে ভাবেন, বিদেশেই বুঝি সব সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে। মোটেই তা নয়। দেশের মধ্যেও সৌন্দর্যমণ্ডিত বেশ কিছু জায়গা আছে। বান্দরবান আমার প্রিয় জায়গা। যেন স্বর্গের এক টুকরো সবুজ চাদর! পাহাড়, ঝর্ণা, নদী আর মেঘের রাজ্য– সব মিলিয়ে এর সৌন্দর্য চোখে দেখলে মন ভরে যায়। সবচেয়ে মুগ্ধকর হলো এর পাহাড়ি পথ। আঁকাবাঁকা সড়ক ধরে যখন গাড়ি উপরের দিকে উঠে, চারপাশে যেন সবুজের ঢেউ। দূরে দূরে নীলাভ পাহাড়ের সারি, মাঝেমধ্যে মেঘ এসে জড়িয়ে ধরে পথিককে। নীলগিরি, নীলাচল, চিম্বুক– এসব জায়গায় দাঁড়ালে মনে হবে আপনি আকাশের খুব কাছাকাছি। কখনও রোদ, কখনও কুয়াশা, আবার কখনও হঠাৎ মেঘ এসে গায়ে জড়িয়ে ধরে– অদ্ভুত এক অনুভূতি।