এরা জলাশয়ের তলদেশে থাকা পাথরময় স্বচ্ছ পানিতে বসবাস করতে পছন্দ করে। এটা সর্বভুক শ্রেণির মাছ; তবে শেওলাই (পেরিফাইটন) এদের প্রধান খাদ্য। জলাশয়ে পাথরের গায়ে লেগে থাকা শেওলা খেয়ে এরা বেঁচে থাকে। নেত্রকোনা, সিলেট ও দিনাজপুর অঞ্চলে একসময় মহাশোল মাছ পাওয়া যেত। বর্তমানে কেবল নেত্রকোনার কংস এবং সোমেশ্বরী নদীতে Tor tor প্রজাতির এ মাছের কদাচিত দেখা মেলে। কচিৎ নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার পাহাড়সংলগ্ন নদীতে বন্যার পানিতে ভেসে আসা মহাশোল ধরা পড়ে। জলাশয় শুকিয়ে সংকুচিত হওয়ায় এবং ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে আবাসস্থল ও প্রজনন ক্ষেত্র বিনষ্ট হওয়ায় সঠিকভাবে বংশ বিস্তার করতে না পারায় মাছটি এখন বিলুপ্তপ্রায়। কোনো কোনো সময় স্থানীয় লোকজন নদী থেকে পোনা সংগ্রহ করে পুকুরে দুই-তিন বছর প্রতিপালন করে। পরে তারা বড় আকৃতির মহাশোল বাজারে তুলে চড়া দামে বেচে।
বিএফআরআই নেপাল থেকে আনা Tor putitora প্রজাতির প্রজনন ও চাষাবাদ প্রযুক্তি ২০১০ সালে প্রথম উদ্ভাবন করে। মাঠ পর্যায়ে এই প্রজাতির মহাশোল বর্তমানে সীমিত আকারে চাষাবাদ হচ্ছে। পুকুরে মহাশোলের দৈহিক বৃদ্ধি অপেক্ষাকৃত কম। কিন্তু চা গার্ডেনের লেকে এবং সাগরসংলগ্ন বড় জলাশয়ে মহাশোল চাষের অভিজ্ঞতা তুলনামূলকভাবে ভালো। চাষে সম্পূরক খাদ্য হিসেবে খৈল, কুঁড়া, ভুষি, গুঁড়া চিংড়ি ও ছোট কীটপতঙ্গ মহাশোল খেয়ে থাকে। মিঠা পানির অন্যান্য মাছের মতো এই মাছ শীতকালেই প্রজনন করে। নভেম্বর থেকে জানুয়ারি এদের সর্বানুকূল প্রজননকাল। কার্প জাতীয় মাছের তুলনায় এর ডিম ধারণক্ষমতা কম। প্রতি কেজি দৈহিক ওজনে মাত্র ছয় থেকে ১০ হাজার ডিম থাকে। ঞড়ৎ ঃড়ৎ প্রজাতির মহাশোল মাছের প্রজনন নিয়ে বিএফআরআইয়ে বর্তমানে গবেষণা চলমান।
মহাশোল ‘স্পোর্টস ফিশ’ হিসেবেও সমাদৃত। বড়শি ফেললে সহজেই ধরা দেয়। এটা ভুটানের জাতীয় মাছ। এটি Cyprinidae পরিবারভুক্ত কার্প জাতীয় মাছ। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশে মহাশোল পাওয়া যায়। যদিও প্রজাতির বৈচিত্র্য ভিন্ন। বিভিন্ন দেশে মহাশোলের Tor গনের মোট প্রজাতির সংখ্যা ১৬টি। পাখনা ও লেজ প্রজাতিভেদে হলদে বা রক্তিম বর্ণের হয়। প্রজাতিভেদে ওজনও ভিন্ন হয়। বিশ্বে এ যাবৎ মহাশোলের ওজন সর্বোচ্চ ৫৪ কেজি পর্যন্ত রেকর্ড করা হয়েছে। আমাদের দেশের Tor tor প্রজাতির মহাশোল ১৬ থেকে ১৭ কেজি পর্যন্ত হতে দেখা গেছে। মহাশোলের দেহ সুগঠিত এবং মাথা ও মুখ তুলনামূলক ছোট। মুখে গোঁফ আছে। Tor putitora প্রজাতির মহাশোল আকারে অপেক্ষাকৃত বড়।
ইদানীং বাজারে গ্রাস কার্প কিংবা ব্ল্যাক কার্পকে মহাশোল বলে ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি করে ক্রেতা সাধারণের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। গ্রাস কার্প কিংবা ব্ল্যাক কার্পের আঁইশ ও রং মহাশোল থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। মহাশোলের দেহের রং সোনালি; এটা যত বেশি বড় হবে সোনালি রং তত গাঢ় হয়। আঁইশ বড় আকৃতির ও পাখনার রং হলদে বা রক্তিম, যা অন্য মাছে নেই।