অন্ধকার মঞ্চে একা দাঁড়িয়ে এক নারী। ধীরে ধীরে তার মুখে আলো পড়তেই শুরু হয় মনের গভীর কণ্ঠস্বরÑ ‘আমি পারমিতা... একা হয়েছি, কিন্তু ভেতরে আমি দ্বিখণ্ডিত।’ প্রযোজনাটির গল্পে পারমিতার দ্বৈত সত্তা যেন সমসাময়িক সমাজের প্রতীক হয়ে ওঠে। একদিকে প্রতিবাদী কণ্ঠÑ যে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে চায়, অন্যদিকে আপসকামী কণ্ঠÑ যে বলে, ‘বাঁচতে হলে মানতে হয়, মুখ বুজে সহ্য করতে হয়।’
পারমিতার স্বামী রাফি, কেবল নামেই জীবনের সঙ্গী। কর্মক্ষেত্রে অপমানিত হয়ে প্রতিবাদ করতে চাইলে রাফি তাকে শান্ত করেÑ ‘চাকরিতে এগুলো হয়ই তো, অত সিরিয়াস হওয়ার কী আছে?’ এই উত্তর শুনে যেন পুরো সমাজের কণ্ঠস্বর শোনা যায়Ñ যেখানে নারীর প্রতিবাদকে আজও ‘অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া’ বলে খাটো করা হয়। মঞ্চে হঠাৎ আলোর খেলাÑ এক পাশে প্রতিবাদী পারমিতা, অন্য পাশে আপসকামী পারমিতা। দুজনেই একই মানুষ, কিন্তু দুজন দুমুখো জীবন। দর্শক দেখতে পান, কীভাবে এক নারী নিজের ভেতরেই নিজের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। এই যুদ্ধ ক্রমে রূপ নেয় সহিংসতায়। পারমিতা চিৎকার করে ওঠেÑ ‘না, আমি মানতে পারব না!’ এবং শেষ দৃশ্যে নিজের ভেতরের আপসকামিতাকে গলা টিপে হত্যা করে।
শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার স্টুডিও থিয়েটার হলে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় মঞ্চস্থ হলো দেশ নাটকের প্রযোজনা ‘পারো’। নাটকটি রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন মাসুম রেজা। পারমিতা চরিত্রে একক অভিনয় করেছেন সুষমা সরকার। নাটকে এক নারীর মানসিক টানাপড়েনের মধ্য দিয়ে সমাজে হয়রানি, পারিবারিক উদাসীনতা ও আপসকামী মানসিকতার প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে।
বাংলাদেশের ছাত্র বিপ্লব নিয়ে বই প্রকাশ : বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ছয়টি জাতীয় ছাত্র-শিক্ষক আন্দোলন নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ‘বাংলাদেশের ছাত্র বিপ্লব : নো ভ্যাট অন এডুকেশন থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ বইটি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. রোবায়েত ফেরদৌস ও নো ভ্যাট আন্দোলনের মুখপাত্র ফারুক আহমাদ আরিফ লিখিত ও সম্পাদিত গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে ব্রাইট ফিউচার পাবলিকেশন। বইটিতে স্থান পেয়েছে ২০১৫ সালের নো ভ্যাট অন এডুকেশন আন্দোলন, ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন, একই বছরের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এ ছাড়া স্থান পেয়েছে ২০১৫ সালের স্বতন্ত্র পে-স্কেল দাবি ও ২০২৪ সালের সর্বজনীন পেনশন প্রত্যয় স্কিম বাতিলের আন্দোলন। এসব আন্দোলন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক সাড়া তোলে এবং দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বাস্তবতায় নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।
বইটিতে সংযোজিত হয়েছে সংবাদ প্রতিবেদন, কলাম, সাক্ষাৎকার, স্মৃতিচারণ ও ছবি। সম্পাদক রোবায়েত ফেরদৌসের মতে, ইতিহাস সংরক্ষণের অভাব কাটিয়ে নতুন প্রজন্মকে সঠিক তথ্য দেওয়ার লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ। সহ-লেখক ফারুক আহমাদ আরিফ বলেন, বইটি ছাত্র-শিক্ষক আন্দোলনের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততার চিত্র তুলে ধরেছে।