

হজের সম্পাদন এলাকাকে হারাম শরিফ বলে। হারাম শব্দটি অতি পবিত্র স্থান নির্দেশ করতে ব্যবহৃত হয়। হারাম শরিফের সীমা বায়তুল্লাহর পূর্বে জেরুজালেমের পথে ৯ মাইল, পশ্চিমে জেদ্দার পথে শুআইদিয়া পর্যন্ত ১০ মাইল, উত্তরে মদিনা শরিফের পথে ৫ মাইল এবং দক্ষিণে তায়েফের পথে ৭ মাইল। হারামের প্রাণকেন্দ্র হলো মাসজিদুল হারাম। এর কেন্দ্রস্থলে কাবা শরিফ অবস্থিত। হজরত আদম (আ.)–এর সৃষ্টির পরপরই কাবাগৃহের সৃষ্টি। এযাবৎ কাবা শরিফ ১২ বার সংস্কার হয়েছে।
কাবা শরিফের উত্তর পাশের অর্ধবৃত্তাকার দেয়ালঘেরা স্থানকে ‘হাতিম’ বলা হয়। এই স্থানটুকু পূর্বে কাবাঘরের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এখানে নামাজ পড়া মানে কাবাঘরের ভেতরে নামাজ পড়া। দোয়া কবুলের জন্য হাতিম সর্বোত্তম স্থান। হাতিমের ঠিক ওপরে কাবা শরিফে ঘরের ছাদের সঙ্গে একটা সোনার পরনালা আছে। বৃষ্টির সময় এই পরনালা দিয়ে ছাদের পানি পড়ে। সে জন্য এর নাম মিজাবে রহমত। মিজাবে রহমতের নিচে নামাজ পড়ে দোয়া করলে তা কবুল হয়।
হাজরে আসওয়াদ মানে কালো পাথর, এটি একটি জান্নাতি পাথর। হজরত আদম (আ.)–এর সময় পাথরটি আনীত হয়। এটি মাটি থেকে চার ফুট উচ্চে কাবাঘরের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে দেয়ালের বহির্ভাগে প্রোথিত। এই পবিত্র প্রস্তরখণ্ডকে নবী করিম (সা.) অত্যন্ত বিনয় ও মহব্বতের সঙ্গে চুম্বন করতেন। হাজরে আসওয়াদ ও কাবাঘরের দরজার মধ্যবর্তী স্থানটুকু মুলতাজিম নামে পরিচিত। এখানে দোয়া কবুল হয়। কাবা শরিফের পূর্ব দিকে মাকামে ইব্রাহিমে যে প্রস্তরখণ্ড রক্ষিত আছে, তার ওপর দাঁড়িয়ে হজরত ইব্রাহিম (আ.) কাবাঘরের প্রাচীর গাঁথতেন। হজরত ওমর (রা.) প্রথম এখানে নামাজ পড়ার অনুমতি প্রার্থনা করেন। এই পবিত্র স্থানের পেছনে দাঁড়িয়ে প্রতিবার তাওয়াফের পর দুই রাকাত নামাজ আদায় করতে হয়। এই নামাজ ওয়াজিব। (সুরা বাকারা, আয়াত: ১২৫)
কাবা শরিফের উত্তর পাশের অর্ধবৃত্তাকার দেয়ালঘেরা স্থানকে ‘হাতিম’ বলা হয়। এই স্থানটুকু পূর্বে কাবাঘরের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এখানে নামাজ পড়া মানে কাবাঘরের ভেতরে নামাজ পড়া
কাবাঘরের পূর্ব দিকে মাসজিদুল হারাম চত্বরেই জমজম কূপ অবস্থিত। এর গভীরতা ৬০ গজ ও এর মুখের প্রসার ৪ গজ। বর্তমানে তাওয়াফের জায়গা সম্প্রসারণের কারণে জমজম কূপ ঢাকা পড়েছে। তবে হারাম শরিফের সবখানেই জমজমের পানি রক্ষিত থাকে। শিশু হজরত ইসমাইল (আ.)–এর পদাঘাতে আল্লাহর কুদরতে মরুভূমিতে এই কূপের সৃষ্টি হয়েছিল। মাসজিদুল হারাম শরিফসংলগ্ন পূর্ব দিকে সাফা ও মারওয়া পাহাড় অবস্থিত। এই দুই পাহাড়ের মধ্যস্থলে বিবি হাজেরা (আ.) শিশুপুত্র ইসমাইল (আ.)–এর পানীয়র অনুসন্ধানে অতি ব্যস্ততাসহকারে ছোটাছুটি করেছিলেন। সেই স্মৃতি রক্ষার্থে হাজিদের এই দুই পাহাড়ের মধ্যে সাত চক্কর দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। একে সাঈ বলা হয়। সাঈ করা ওয়াজিব। (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৮)
আরাফাত একটি প্রশস্ত ময়দান। ৯ জিলহজ হাজিদের আরাফাত ময়দানে অবস্থান করতে হয়। আরাফাত মানে পরিচয়। আরাফাত ময়দানে হজরত বাবা আদম (আ.)–এর সঙ্গে হজরত মা হাওয়া (আ.)–এর পুনর্মিলন হয় এবং তাঁরা স্বীয় ভুলের জন্য সেখানে আল্লাহ তাআলার দরবারে মোনাজাত করেন এবং তাঁদের মোনাজাত কবুল হয়। (সুরা বাকারা, আয়াত: ৩৭; সুরা আরাফ, আয়াত: ২৩)
‘জাবালে রহমত’ বা করুণার পাহাড় আরাফাত ময়দানে অবস্থিত। এর উচ্চতা ৩০০ ফুট। এর উপরিভাগে একটি সাদা স্তম্ভ আছে, যেখান থেকে হজরত মুহাম্মদ (সা.) বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন। এই পাহাড় দৃষ্টিগোচর হওয়ামাত্র লাব্বাইক ও দরুদ শরিফ পড়তে হয়। আল্লাহ তাআলার আদেশে হজরত ইব্রাহিম (আ.) পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)–কে যে স্থানে কোরবানির জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন, সেই স্থানের নাম মিনা। মক্কা শরিফ থেকে মিনার দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটার। মিনা প্রান্তরে হজের আগের দিন এবং হজের পর তিন দিন তাঁবুতে অবস্থান করতে হয়। এখানেই কোরবানি করতে হয়। (সুরা ছফফাত, আয়াত: ৯৯-১১১)
মিনার পাশেই তিনটি জুমরা বা স্তম্ভ (বহুবচন জামারাত) অবস্থিত। এগুলো ছোট শয়তান (জুমরায়ে উলা), মেজ শয়তান (জুমরায়ে উস্তা), বড় শয়তান (জুমরায়ে আকাবা) নামে পরিচিত। হজরত ইসমাইল (আ.)–কে কোরবানি করতে নেওয়ার পথে এই স্থানে শয়তান বাধা সৃষ্টি করেছিল এবং তিনি পাথর মেরে শয়তানকে তাড়িয়েছিলেন। এর স্মরণে এখানে কঙ্কর মারতে হয়।