

নেপালে অন্তর্বর্তী সরকারের নতুন প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কারকি প্রথমবারের মতো তাঁর মন্ত্রিসভার তিন সদস্যের নাম ঘোষণা করেছে। আজ সোমবার তিনজন মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন। তরুণদের নেতৃত্বে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে উত্তাল দেশটিতে এখন শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।
বিক্ষোভকারীদের আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত প্রেসিডেন্ট ভবনের সামনে খোলা আকাশের নিচে অস্থায়ী মঞ্চে শপথ নেন অন্তর্বর্তী সরকারের মন্ত্রিসভার নতুন তিন সদস্য। টেলিভিশনে তা সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পাওদেল তাঁদের শপথবাক্য পাঠ করান।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন আইনজীবী ওম প্রকাশ আর্যাল। পাশাপাশি তিনি আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ও সামলাবেন। দুর্নীতি, সুশাসন ও মানবাধিকারবিষয়ক মামলা পরিচালনার জন্য বেশ পরিচিতি তাঁর।
নেপাল বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের সাবেক পরিচালক কুলমান ঘিসিংকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জ্বালানি, অবকাঠামো, পরিবহন ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের। দেশটির দীর্ঘদিনের সমস্যা লোডশেডিং দূর করতে তাঁর ব্যাপক ভূমিকা ছিল।
আর সাবেক অর্থসচিব ও অর্থনীতিবিদ রমেশ্বর খানাল অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন। দেশের বেকারত্ব সমস্যার মোকাবিলায় তাঁর সামনে বিরাট চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, নেপালে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণদের এক–পঞ্চমাংশ বেকার। সেখানে তাঁদের মাথাপিছু জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) মাত্র ১ হাজার ৪৪৭ ডলার।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করাকে কেন্দ্র করে ৮ ও ৯ সেপ্টেম্বর নেপালের বিক্ষোভ ও ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। রাজধানী কাঠমান্ডুসহ দেশটির বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। এতে নিহত হন অন্তত ৭২ জন। ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয় পার্লামেন্ট ভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ বিভিন্ন অবকাঠামোয়। এর জেরে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি পদত্যাগ করেন। এরপর গত শুক্রবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে সুশীলা কারকিকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে দুর্নীতির প্রতি জিরো টলারেন্সের (শূন্য সহনশীলতা) নীতি দেখিয়েছিলেন সুশীলা কারকি। এর মধ্য দিয়ে বেশ পরিচিতি পেয়েছিলেন তিনি। সুশীলা প্রভাবশালী গোষ্ঠীর স্বার্থের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। আর এটাই হয়তো তাঁর সর্বোচ্চ বিচারিক পদ হারানোর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার এক বছরের কম সময়ের মধ্যে সরকার কারকিকে অভিশংসনের উদ্যোগ নেয়। জনগণের চাপে সেই প্রস্তাব শেষ পর্যন্ত বাতিল হলেও হতাশ হয়ে সুশীলা কারকি নিজেই পদত্যাগ করেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর গতকাল রোববার প্রথম বক্তৃতা করেন সুশীলা কারকি। বলেছেন, তিনি এই পদে ছয় মাসের বেশি থাকবেন না। আগামী বছরের ৫ মার্চ দেশটির জাতীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আসা সরকারের হাতে তিনি ক্ষমতা তুলে দেবেন।
বর্তমান পরিস্থিতিতে সুশীলা কারকি ও তাঁর মন্ত্রিসভার সামনে আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার, ক্ষতিগ্রস্ত পার্লামেন্ট ভবন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সংস্কারসহ বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। পাশাপাশি পরিবর্তনের দাবি তোলা জেন-জি প্রজন্ম এবং যাঁরা নেপালের গণতান্ত্রিক যাত্রা ও সাংবিধানিক শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন, তাঁদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনাও এখন তাঁর বড় দায়িত্ব।
