মা ইলিশ রক্ষায় সারাদেশে চলছে বিশেষ অভিযান। অন্যদিকে উৎসবের আমেজে পদ্মা নদীতে মা ইলিশ শিকার করছেন গোয়ালন্দের জেলেরা। মা ইলিশ বিক্রির জন্য পদ্মাপাড়ে বসেছে অস্থায়ী বাজার। এছাড়া গ্রামে ফেরি করে বিক্রি করা হচ্ছে ইলিশ।
গতকাল শনিবার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের অন্তত ৩ কিলোমিটার হেঁটে কাদাপানি মারিয়ে দুর্গম চরকর্নেশন কলাবাগানে গিয়ে দেখা যায়, এখানে নিষেধাজ্ঞার সময়ে ইলিশ বেচাকেনার জন্য অস্থায়ী বাজার বসেছে। আরও চোখে পড়ে, পদ্মাপাড়েই নারী-পুরুষ সবাই মিলে ইলিশ শিকারের জাল মেরামত করছেন। শত শত জেলে নৌকা নিয়ে পদ্মায় মা ইলিশ শিকার করছেন। কেউ আবার ইলিশ শিকার করে ফিরে আসছেন এই অস্থায়ী বাজারে। এক কথায় মহাধুমধামে মা ইলিশ বেচাকেনা চলছে।
এখানকার জেলেরা অনেকটাই মারমুখী। সেখানে পৌঁছেই তাদের নানা জেরার মুখে পড়তে হয়। এ সময় তারা ঔদ্ধত্য দেখিয়ে জানান, এখানে কোনো অভিযান দল এলে প্রতিরোধ করবেন তারা।
নিষেধাজ্ঞার সময় ইলিশ ধরা নিয়ে নানা যুক্তি দিচ্ছেন জেলেরা। তারা বলছেন, পদ্মা নদীর এই এলাকায় সারা বছর খুবই কম ইলিশ ধরা পড়ে। শুধু নিষেধাজ্ঞার সময়ে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ে। কেউ কেউ বলেন, এই ইলিশ যদি তারা এখন নাও ধরেন, তবুও এসব ইলিশ পদ্মা নদীতে থাকবে না। এগুলো ভারতে চলে যাবে। এ কারণে তারা এভাবে ডিমওয়ালা ইলিশ শিকার করছেন।
এর আগে শুক্রবার ছোটভাকলা ইউনিয়নের অন্তার মোড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নদীতে অসংখ্য জেলে নৌকা নিয়ে মাছ শিকার করছেন। নৌকাগুলো মা ইলিশ শিকার করার পর তীরে এলেই ক্রেতারা দরদাম করছেন। যেখানে ৮০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এ সময় এক জেলে বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময়ে ভাটি অঞ্চলে অভিযানের কারণে জেলেরা স্বাভাবিকভাবে নদীতে নামতে পারেন না, তাই এই এলাকায় প্রচুর পরিমাণ ইলিশ চলে আসে; যা বছরের অন্য সময় পাওয়া যায় না।’ এ সময় মা ইলিশ কিনতে আসা অনেকেই জানান, এভাবে ডিমওয়ালা ইলিশ শিকার করলে একটা সময় নদীতে আর ইলিশের দেখা মিলবে না। তারপরও তারা কেন ইলিশ কিনতে এসেছেন, এমন প্রশ্নে তারা বলেন, ‘সারা বছর ইলিশের যে দাম তাতে তাদের কিনে খাওয়া প্রায় অসম্ভব। তাই ইলিশের স্বাদ নিতে একটু কম টাকায় বাধ্য হয়ে ইলিশ মাছ কিনছেন।’
কয়েকজন জেলে অভিযোগ করেন, পদ্মা নদীতে হাজার হাজার জেলে মাছ শিকার করলেও বেশির ভাগ জেলেই নিষেধাজ্ঞাকালীন সরকারি অনুদান পান না। যারা জেলে না, তারাই বিভিন্ন উপায়ে জেলে তালিকায় নাম দিয়ে অনুদান পেয়ে থাকেন।
গোয়ালন্দ পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আমজাদ হোসেন বিপুল জানান, ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা শুরুর পর থেকে ভোর বেলায় বিক্রেতাদের হাঁক-ডাকে ঘুম ভাঙে। পাড়া-মহল্লায় অসংখ্য মানুষ ফেরি করে ইলিশ বিক্রি করছে।
দৌলতদিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ত্রীনাথ সাহার দাবি, ডিমওয়ালা ইলিশ রক্ষায় প্রতিনিয়ত অভিযান চলছে। তাদের আভিযানিক দল একদিকে গেলে অন্যদিকে সুযোগ বুঝে মা ইলিশ শিকার শুরু করে দেন জেলেরা।
উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম পাইলটের ভাষ্য, নিষেধাজ্ঞা সময়ে মা ইলিশ রক্ষায় সার্বক্ষণিক নদীতেই অবস্থান করেন তারা। তাদেরও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে, এই সুযোগে জেলেরা বেপরোয়া হয়ে নদীতে নেমে পড়েন।
১১ জেলের কারাদণ্ড
নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পদ্মা নদীতে মা ইলিশ শিকার করায় গোয়ালন্দ উপজেলার অন্তার মোড় এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৭ জেলেকে আটক করা হয়েছে। শনিবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আসাদুজ্জামান। এ ছাড়া গত শুক্রবার বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত রাজবাড়ী সদর উপজেলার পদ্মা নদীর
বিভিন্ন পয়েন্টে অভিযান চালিয়ে চার জেলেকে আটক করা হয়। শনিবার তাদের প্রত্যেককে পাঁচ দিন করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাদ আহম্মেদ।
শরীয়তপুর প্রতিনিধি জানান, গোসাইরহাট উপজেলার কোদালপুর ইউনিয়নের মাউছাখালী এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রায় ৪০০ কেজি ইলিশসহ তিনটি ট্রলার জব্দ করা হয়েছে। শনিবার সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুদীপ্ত ঘোষের নেতৃত্বে এই অভিযান চালানো হয়।