অবশেষে স্বপ্নজয় করলেন সন হিউং-মিন। কত রাত হয়তো নির্ঘুম কাটিয়েছেন একটি অধরা শিরোপার আশায়। সেসব অতীত হয়ে গিয়েছে গত রাতে। ইউরোপা লীগের ফাইনালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে হারিয়ে ট্রফি হাতে উল্লাসে মেতেছে টটেনহ্যাম হটস্পার। শেষ বাঁশি বাজার পর সনের চোখ-মুখের অবয়বই বলে দিচ্ছিল, কতটা প্রতীক্ষার পর এই রাত দেখছেন তিনি। স্বপ্নজয়ের দিন তাই বুক ফুলিয়েই বললেন, ‘আমি আজ কিংবদন্তি।’
ইউরোপে চলতি মৌসুমে দেখাও গেলো তাই। ২০১৩তে স্পার্সদের ডেরায় আসা হ্যারি কেইন গত মৌসুমে একটি ট্রফির আশায় গেলেন জার্মান জায়ান্ট ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখে। সেবার বায়ার লেভারকুসেনের কাছে বুন্দেসলিগা শিরোপা হারিয়ে খালি হাতে থাকতে হলো এই ইংলিশ স্ট্রাইকারকে। নিজের ১৫ বছরের ফুটবলীয় ক্যারিয়ারেও ছিলেন শিরোপাহীন। চলতি মৌসুমে শাপমোচন করেন লীগ শিরোপা দিয়েই। একই মৌসুমে নিজেদের ১৭ বছরের শিরোপা খরা কাটালো তার সাবেক ক্লাব স্পার্সও। ১০ বছর আগে ইংলিশ জায়ান্টদের দলে নাম লেখানো সনও জিতলেন নিজের ক্লাব ক্যারিয়ারের অভিষেক শিরোপা। চলতি মৌসুমের শুরুতে একবার এই প্রসঙ্গে দক্ষিণ কোরীয় ফরোয়ার্ড বলেছিলেন, অন্তত একটি ট্রফি না জেতা পর্যন্ত তিনি কিংবদন্তি হওয়ার যোগ্য নয়। গতকাল ফাইনালের আগে বলেন, ‘এটি আমার জীবনের সেরা দিন হতে পারে.. ইতিহাস গড়তে চাই।’ বিলবাওয়ের সান মামেসে হলোও তাই। ৪৩তম মিনিটে ব্রেনান জনসনের করা একমাত্র গোলে শিরোপা নিশ্চিত হয় স্পার্সের। প্রথম দক্ষিণ কোরিয়ান ফুটবলার হিসেবে কোনো ক্লাবের অধিনায়ক হয়ে সন জিতলেন বড় কোনো ইউরোপিয়ান ট্রফি। ফাইনালের পর সেই ‘কিংবদন্তি’ প্রসঙ্গে সনও মনে করিয়ে দিলেন, ‘ঠিক আছে, আমি কিংবদন্তি। কেন নয়? শুধু আজকের জন্য তো! ১৭ বছর ধরে কেউ এটি করতে পারেনি। অসাধারণ কিছু খেলোয়াড়দের কল্যানে আজ (গতকাল) সেই দিনটি চলেই এলো। আজ বলতে পারি যে আমি এই ক্লাবের কিংবদন্তি।’
টটেহন্যামের কোচ আঞ্জে পোসতেকোগলু স্পার্সদের হয়ে দ্বিতীয় মৌসুমে জিতলেনে ইউরোপিয়ান শিরোপা। ২০১৫তে এশিয়ান কাপ ফাইনালে নিজের দেশের জাতীয় দলের দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন এই অস্ট্রেলিয়ান কোচ। সেবার ফাইনালে ওশানিয়ার দলটির কাছে ২-১ গোলে হেরে শিরোপার স্বপ্ন ভাঙে দক্ষিণ কোরিয়ার। ম্যাচের পর মাঠেই কান্নায় ভেঙে পড়া সনকে স্বান্তনা দিয়েছিলেন পোসতেকোগুলু। ভাগ্যের খেলা বুঝি একেই বলে! সেই পোসতেকোগলুর হাত ধরেই ক্লাব ক্যারিয়ারের প্রথম শিরোপা জিতলেন সন। এর আগে ২০১৮তে দক্ষিণ কোরিয়া অনূর্ধ্ব-২৩ দলের হয়ে এশিয়ান গেমস জেতেন তিনি। এতদিন সেটিই ছিল সনের ক্যারিয়ারের একমাত্র শিরোপা। সেই উল্লাস এখনই থামাতে চান না এই ৩২ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড। এই এক ট্রফির স্বপ্নে এতটাই মগ্ন হয়ে গিয়েছিলেন যে রাতের ঘুমই হারাম হয়ে গিয়েছিল তার। সেসব মনে করে সন বলেন, ‘এত তীব্রভাবে জিততে চাইছিলাম! গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিটি দিন শুধু এই সময়টার স্বপ্ন দেখেছি। অবশেষে এটি সত্যি হলো। এখন শান্তিতে ঘুমাতে পারব ও উপভোগ করতে পারব।’