নবীর বাণীতে প্রকৃত মুসলমানের জীবনধারা

সংগৃহীত ছবি: সত্যের পথে


অধিকাংশ অনৈক্য, বিবাদ-বিসংবাদ এবং সংঘাতের মূল উৎস হলো মানুষের কটুকথা ও হাতের অপব্যবহার। ইসলাম এ বাস্তবতাকে অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে উপলব্ধি করেছে এবং মুসলমানের পরিচয়কে কেবল নাম বা আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ না রেখে বাস্তব আচরণে প্রতিফলিত করার শিক্ষা দিয়েছে। এজন্যই আল্লাহর রাসুল (সা.) তাঁর বাণীতে একজন প্রকৃত মুসলিমের পরিচয় তুলে ধরেছেন-

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو ـ رضى الله عنهما ـ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ الْمُسْلِمُ مَنْ سَلِمَ الْمُسْلِمُونَ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ، وَالْمُهَاجِرُ مَنْ هَجَرَ مَا نَهَى اللَّهُ عَنْهُ ‏”‏‏.‏

অনুবাদ 
আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নে আমর (রা.) হতে বর্ণিত: আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, সে-ই প্রকৃত মুসলিম, যার জিহবা ও হাত হতে সব মুসলিম নিরাপদ এবং সে-ই প্রকৃত মুহাজির, যে আল্লাহ যা নিষেধ করেছেন তা ত্যাগ করে। (বুখারি, হাদিস : ১০)
সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা
১. মুসলিমের প্রকৃত পরিচয় : এখানে রাসুল (সা.) মুসলমান হওয়ার মৌলিক বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন।
মুসলমান মানে শুধু নাম বা পরিচয় নয়, বরং তাঁর আচরণে যেন অন্য কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। নিজ জিহবা দিয়ে কটূক্তি, গালমন্দ, পরনিন্দা, অপবাদ কিংবা মিথ্যা বলা—এসব অন্যের ওপর আঘাত হানে। হাত দিয়ে অন্যকে আঘাত করা, জুলুম করা, সম্পদ হরণ করা—এসবও ইসলামবিরোধী। একজন মুসলিম এসব অপকর্মে নিজেকে কিছুতেই সম্পৃক্ত করতে পারে না।
 ২. মুহাজির হওয়ার প্রকৃত মানে : আরবী পরিভাষায়  “মুহাজির” মানে হিজরতকারী। সাহাবায়ে কেরাম মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেছিলেন আল্লাহর দ্বীনের জন্য। তবে রাসুল (সা.) শিখালেন—সময় ও স্থানের সীমার বাইরে হিজরতের আরেকটি অর্থও আছে। প্রকৃত মুহাজির হলো সে ব্যক্তি, যে আল্লাহ যেসব কাজকে হারাম করেছেন সেগুলো থেকে সরে আসে, অর্থাৎ গুনাহের জীবন থেকে আনুগত্যের জীবনে হিজরত করে।
হাদিস থেকে আমাদের জন্য শিক্ষা
* মুসলিম হওয়ার মানে হলো—আমাদের আচার-আচরণে অন্যরা শান্তি ও নিরাপত্তা পাবে। যদি আমার কথা ও কাজের কারণে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে আমার ইসলাম দুর্বল ও ত্রুটিপূর্ণ।
* শুধু নামের মুসলিম হওয়া যথেষ্ট নয়; বাস্তবে আচরণে মুসলিম হতে হবে।
* ইসলামে প্রকৃত উন্নতি হলো—পাপ থেকে দূরে থাকা, হারামকে ত্যাগ করা, এবং আল্লাহর হুকুম মানা।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে হাদিসটির প্রয়োগ
১. সামাজিক জীবন: পরিবার, প্রতিবেশী, সহকর্মী; সবার সঙ্গে এমন ব্যবহার করা উচিত যাতে আমাদের জিহবা ও হাতের কারণে তারা ক্ষতিগ্রস্ত না হন।
ফেসবুক, সোশ্যাল মিডিয়াতেও এ হাদিস প্রযোজ্য। সেখানে মিথ্যা, গালাগালি বা কটুক্তি করা জিহবার অপব্যবহারের শামিল।

২. রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জীবন : নেতা, ব্যবসায়ী বা প্রভাবশালী কেউ যেন তার হাতে বা ক্ষমতায় মানুষের অধিকার হরণ না করে। সততা, ন্যায়পরায়ণতা ও দায়িত্বশীলতা ইসলামের অপরিহার্য দাবি।
৩. ব্যক্তিগত জীবন: প্রকৃত হিজরত মানে হলো নিজের ভেতরের বদঅভ্যাস থেকে বের হয়ে আসা। যেমন—মিথ্যা, সুদ, ঘুষ, অবৈধ সম্পর্ক, মাদক; এসব ছেড়ে দিলে আমরা আজও মুহাজির হতে পারি।
এই হাদিস আমাদের শিখাচ্ছে যে, ইসলামের আসল সৌন্দর্য বাহ্যিক নয়, বরং মানুষের সঙ্গে নিরাপদ আচরণ ও আল্লাহর নিষেধ থেকে বিরত থাকা। তাই মুসলিমের প্রকৃত রূপ হবে শান্তিপ্রিয়, সদাচারী ও গুনাহ থেকে দূরে থাকা এক মানবিক জীবন।
Scroll to Top