নতুন ‘কারাতে কিড’ ছবিতে কী থাকছে?

‘কারাতে কিড: লিজেন্ডস’–এর পোস্টার থেকে। গুগল ফাইল

চার দশকের বেশি সময় ধরে ‘কারাতে কিড’ সিরিজের সিনেমা ছোট-বড় সবার কাছে জনপ্রিয়। ‘কারাতে কিড’ মুক্তি পায় ১৯৮৪ সালে। এতে অভিনয় করেছিলেন প্যাট মোরিটা ও কিশোর রালফ ম্যাকিও। শক্তিশালী চিত্রনাট্য, দারুণ অভিনয় আর দুর্দান্ত নির্মাণ মিলিয়ে তৈরি করেছিল সেই বছরের অন্যতম ব্যবসাসফল সিনেমাটি।

একনজরে
সিনেমা: ‘কারাতে কিড: লিজেন্ডস’
ধরন: অ্যাকশন–ড্রামা
স্ট্রিমিং: নেটফ্লিক্স
রানটাইম: ৯৪ মিনিট
পরিচালক: জনাথন এন্টউইসল
অভিনয়: বেন ওয়াং, জ্যাকি চ্যান, রালফ ম্যাকিও, সেডি স্ট্যানলি, আরামিস নাইট

জনপ্রিয়তা মানেই একের পর এক সিকুয়েল কিংবা স্পিন অফ। সেই ধারাবাহিকতায় ‘কারাতে কিডে’র  সিকুয়েল এসেছে, এসেছে ‘কোবরা কাই’–এর মতো স্পিন-অফ সিরিজও। কয়েক মাস আগে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘কারাতে কিড’ ফ্র্যাঞ্চাইজির ষষ্ঠ সিনেমা ‘কারাতে কিড: লিজেন্ডস’। গত বছরের শেষদিকে সিনেমাটি মুক্তি পাওয়ার কথা থাকলেও এ সময়ে একাধিক সিনেমা মুক্তির তালিকায় থাকায় তা পিছিয়ে দেন নির্মাতারা। ৩০ আগস্ট নেটফ্লিক্সে আসা এ সিনেমা দুই সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশের ‘নেটফ্লিক্সের শীর্ষ দশ’ তালিকায় রয়েছে। কেমন হলো ‘কারাতে কিড’-এর নতুন এই সিনেমা?

‘কারাতে কিড: লিজেন্ডস’–এর দৃশ্য। গুগল ফাইল

যুক্তরাষ্ট্রে এসে লি ফং নতুন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করেন। পাশের পিৎজা শপের মিয়া-র (সেইডি স্ট্যানলি) সঙ্গে পরিচয় তাঁর এ যাত্রা আরেকটু সহজ করে দেয়। তবে এই পরিচয় থেকে আসে নানা সমস্যা। মায়ের বারণ সত্ত্বেও লি ফং জড়িয়ে পড়েন মারামারিতে। কিন্তু সেখানেও তাঁকে তাড়া করে বেড়ায় তাঁর অতীত। অতীত থেকে পালিয়ে বাঁচতে পারেন না তিনি। সিদ্ধান্ত নেন মোকাবিলা করার। কেমন করে লি ফং আবার নিজেকে খুঁজে পান, ‘কারাতে কিড: লিজেন্ডস’–এ এ গল্পই দেখানো হয়েছে।

যাঁরা ‘কারাতে কিড’ ফ্র্যাঞ্চাইজির সিনেমা কিংবা সিরিজ দেখেছেন তাঁদের কাছে ‘কারাতে কিড: লিজেন্ডস’–এর গল্প খুব একটা নতুন লাগবে না। কিন্তু এ সিনেমায় রয়েছে কিছু চমক। এখানে কারাতের সঙ্গে মিল ঘটেছে কুংফুর। এ ছবির আসল আকর্ষণ হলো মূল ড্যানিয়েল-সান রালফ ম্যাকিওকে ফিরিয়ে আনা, আর তাঁর সঙ্গে কিংবদন্তি জ্যাকি চ্যানকে যুক্ত করা। অর্থাৎ এখানে  জাপানের কারাতের সঙ্গে চীনের কুংফুর মিল দেখানো হয়েছে। এটি যেন ছিল পুরোনোর সঙ্গে নতুনের এক মেলবন্ধন।

এ সিনেমায় বেন ওয়াং অনবদ্য অভিনয় করেছেন। বলা যায়, তিনি একাই ছিলেন এ সিনেমার প্রাণ। জ্যাকি চ্যানের অভিনয় নিয়ে নতুন কিছু বলার নেই। তিনি অভিনেতা হিসেবে যেমন ভালো ছিলেন, মার্শাল আর্টসের শিক্ষক হিসেবেও ভালো ছিলেন। ড্যানিয়েল লারুসোর চরিত্রে রালফ ম্যাকিও ভালো ছিলেন। যদিও পর্দায় তিনি খুব কম সময় ছিলেন। প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আরামিস নাইটেও অভিনয় ও কারাতের মুভগুলো ভালো ছিল।

‘কারাতে কিড: লিজেন্ডস’–এর দৃশ্য। গুগল ফাইল

রব লাইবারের চিত্রনাট্যে, জনাথন এন্টউইসল পরিচালিত ছবিটি যথেষ্ট চিত্তাকর্ষক। কিন্তু এটি একই সঙ্গে বিরক্তিরও উদ্রেক করে। সিনেমার গল্প রবার্ট মার্ক কামেনের ক্লাসিক ‘দ্য কারাতে কিড’ অবলম্বনে বানানো হলেও এতে অনেক নতুন কিছু যোগ করা যেত। নির্মাতারা হয়তো জ্যাকি চ্যান ও রালফ ম্যাকিওর দ্বৈত সৃষ্টি করে নতুন কিছু দেখাতেও চেয়েছিলেন। কিন্তু ক্লিশে গল্প, টুইস্টহীন প্লট ও খুব দ্রুত পটপরিবর্তনের কারণে শেষ পর্যন্ত যেন কোনো কিছুই ঠিকমতো দেখাতে পারেননি।

‘কারাতে কিড: লিজেন্ডস’–এর দৃশ্য। গুগল ফাইল

গল্পে লি ফং অর্থাৎ মূল চরিত্র ছাড়া আর কোনো চরিত্রের বিকাশ ঘটেনি। গল্প ঠিকঠাক শুরু হওয়ার আগেই একের পর এক অ্যাকশন দৃশ্য গল্পের গতিতে বাদ সাধছিল। মূল চরিত্র ছাড়া কোনো চরিত্র বা সাবপ্লটই মনোযোগ পায়নি। লি ফং ও মিয়ার রসায়ন এত কম সময় দেখানো হয়েছে যে তা রীতিমতো অবাস্তব লাগে। এমনকি ফাইনাল টুর্নামেন্টের আগে লি ফং হঠাৎ কেন খেলার সিদ্ধান্ত নেন, এ ব্যাপারে তাঁর মনস্তাত্ত্বিক দিক ঠিকঠাক ফুটে ওঠেনি। দুই শিক্ষকের সংঙ্গে লি ফংয়ের অনুশীলন দেখানো হয়েছে, কিন্তু মূল খেলায় সেটা কেন প্রয়োজন ছিল, সেটাও বোঝা যায়নি। অথচ তাঁদের অনুশীলন, খুনসুটি, কিংবা প্রশিক্ষণের চিত্র পর্দায় এত সুন্দরভাবে ফুটে উঠছিল যে চোখ ফেরানো যাচ্ছিল না। এখানে সিনেমাটোগ্রাফার জাস্টিন ব্রাউনকে ধন্যবাদ দিতেই হয়।

কিন্তু এক দৃশ্য থেকে অন্য দৃশ্যের পরিবর্তন এত দ্রুত হচ্ছিল, গল্পে শ্বাস নেওয়ার সময় পাওয়া যায়নি। বারবার মনে হচ্ছিল, এটি যদি দেড় ঘণ্টার সিনেমা না হয়ে দুই ঘণ্টার হতো, তাহলে অনেক চরিত্র পরিপূর্ণতা পেত।

‘কারাতে কিড: লিজেন্ডস’–এর দৃশ্য। গুগল ফাইল

তবে পুরো সিনেমায় পুরোনো দিনের একটা আবহ ছিল। আশির দশকের গান, ব্যস্ত নিউইয়র্ক শহর ফুটে উঠেছে সুন্দরভাবে। চ্যান ও ম্যাকিওর রসিকতা এবং প্রশিক্ষণ, দাপুটে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নাইটের সঙ্গে বেনের ফাইট দেখতে ভালোই লাগে। আর ‘কারাতে কিড’–এর ঐতিহ্য মেনে এ সিনেমাতেও রয়েছে জটিল এক ফিনিশিং মুভ, শেষে গিয়ে যা দেখে আপনিও বাধ্য হবেন দাঁড়িয়ে তালি দিতে।

Scroll to Top