

রোড সেফটি ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত সেপ্টেম্বরেই দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪৪৬টি। এসব দুর্ঘটনায় ৪১৭ জন নিহত এবং ৬৮২ জন আহত হয়েছেন।
আজ শনিবার রোড সেফটি ফাউন্ডেশন গত সেপ্টেম্বর মাসের দুর্ঘটনার প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এই সংগঠনটি ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টালসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, একই মাসে ১৫১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৪৩ জন, যা মোট নিহতের ৩৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এছাড়া দুর্ঘটনায় ১১২ জন পথচারী নিহত হয়েছে, যা মোট নিহতের ২৬ দশমিক ৮৫ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৫৬ জন, অর্থাৎ নিহতের ১৩ শতাংশেরও বেশি।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, সেপ্টেম্বর মাসে সংঘটিত দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘটেছে জাতীয় মহাসড়কে। মোট দুর্ঘটনার ৩৬ শতাংশ বা ১৬১টি ঘটেছে জাতীয় মহাসড়কে। এছাড়া আঞ্চলিক সড়কে ৩১ শতাংশ (১৩৯টি), গ্রামীণ সড়কে ১৩ শতাংশ (৫৭টি) এবং শহরের সড়কে প্রায় ২০ শতাংশ (৮৯টি) দুর্ঘটনা ঘটেছে।
দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে চালকদের নিয়ন্ত্রণ হারানোর কারণে। এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে ১৭১টি, যা মোট দুর্ঘটনার ৩৮ শতাংশ। মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটেছে ৯২টি (২১ শতাংশ), পথচারীকে চাপা বা ধাক্কা দেওয়ার ঘটনায় ১১৯টি (২৭ শতাংশ), যানবাহনের পেছনে আঘাতের ঘটনায় ৫৮টি (১৩ শতাংশ) এবং অন্যান্য কারণে ছয়টি (১ শতাংশ) দুর্ঘটনা ঘটেছে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্যে দেখা যায়, দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, পিকআপ, ট্রাক্টরসহ ভারী যানবাহন, যার হার ২৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ। আর পাশাপাশি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ছিল ২৪ দশমিক ০৫ শতাংশ । আর যাত্রীবাহী বাস ছিল ১৮ শতাংশ দুর্ঘটনায়। থ্রি-হুইলারের মধ্যে ইজিবাইক, সিএনজি অটোরিকশা, অটোভ্যান ও লেগুনা সম্পৃক্ত ছিল ১৫ দশমিক ২৭ শতাংশ দুর্ঘটনায়।
এছাড়া স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের মধ্যে নসিমন, ভটভটি, টমটম, মাহিন্দ্রা ইত্যাদি ৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল। মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার ও জিপ গাড়ির সম্পৃক্ততা ছিল ৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ। বাইসাইকেল ও রিকশা ২ দশমিক ৮৭ শতাংশ এবং অজ্ঞাত যানবাহন ৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল।
এদিকে সময়ভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সেপ্টেম্বর মাসে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে সকালে, মোট ৩০ শতাংশ। রাতে ঘটেছে ২৩ শতাংশ দুর্ঘটনা, দুপুরে ২১ শতাংশ, বিকেলে ১১ শতাংশ, সন্ধ্যায় ৭ শতাংশ এবং ভোরে প্রায় ৮ শতাংশ দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।
বিভাগভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। এই বিভাগে ১২৮টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১২৪ জন। এরপর চট্টগ্রাম বিভাগে ২৪ শতাংশ দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ৪৫ জনের। রাজশাহী ও সিলেট বিভাগেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক দুর্ঘটনা ঘটেছে। অপরদিকে বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা ঘটেছে, ওই বিভাগে ১৬টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৪ জন।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের মতে, সড়ক দুর্ঘটনার মূল কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকদের অদক্ষতা ও মানসিক অস্থিরতা, ট্রাফিক আইন না মানা, দুর্বল তদারকি, মহাসড়কে স্বল্প গতির যান চলাচল এবং যানবাহনের চাঁদাবাজি। এছাড়া চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা। এছাড়া দীর্ঘ সময় কাজের চাপও দুর্ঘটনা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলে উল্লেখ করা হয়।
দুর্ঘটনা রোধে সংস্থাটি ১০টি সুপারিশ দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি, চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্ধারণ, বিআরটিএর সক্ষমতা বৃদ্ধি, ট্রাফিক আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন, মহাসড়কে স্বল্প গতির যান বন্ধ এবং বিকল্প সার্ভিস রোড নির্মাণ, গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ, রেল ও নৌপথে যাত্রী পরিবহন বৃদ্ধি এবং টেকসই পরিবহন কৌশল বাস্তবায়ন।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, ‘অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটছে অতিরিক্ত গতিতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে। তাই প্রযুক্তির মাধ্যমে যানবাহনের গতি পর্যবেক্ষণ এবং চালকদের মানসিক প্রশিক্ষণ জোরদার করা জরুরি। পাশাপাশি সরকারি উদ্যোগে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সচেতনতা কার্যক্রম চালানো প্রয়োজন।’