

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়েছে। বিচারপতি গোলাম মোর্তজা মজুমদারের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ আজ রোববার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এদিন এ মামলার বিভিন্ন প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন চিফ প্রসিকিউটর।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সাল থেকে গত বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের ফ্যাসিবাদী শাসন তথা হত্যা, নির্যাতন, ঘুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, ক্রসফায়ারসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন। পাশাপাশি ২০০৮ সালের পাতানো নির্বাচন, ওয়ান ইলেভেন আসার নেপথ্যের কারণ, বিডিআর হত্যাকাণ্ড, বিচার বিভাগ ধ্বংস, ব্যাংক লুটপাট, ২০১৩, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের তামাশার নির্বাচনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়। এ সময় বিচার বিভাগকে দানবীয় শাসন হিসেবে অভিহিত করা হয়।
ট্রাইব্যুনাল বলেন, বিচারকদের অ্যাকাউন্টিবিলিটির কোনো ব্যবস্থা নেই। অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলা পড়ে আছে, আমরা বিচার করতে পারছি না। জনগুরুত্বপূর্ণ মামলা রেখে সরকারের অথরিটি পালন করছেন। তাদের একটা সিস্টেমের মধ্যে আসতে হবে। বিচারের নামে স্বাধীনতা মানে তো আপনি যা খুশি তা করবেন। এটার নাম স্বাধীনতা না। জুডিশিয়াল কাউন্সিলেরও যদি কেউ অফেন্স (অপরাধ) করে তাদেরও জবাবদিহিতা বা বিচারের আওতায় আনার একটা সিস্টেম থাকতে হবে।
পরে প্রেস ব্রিফিংয়ে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, বিগত সরকারের সময় বিচারের নামে বিচারকরা স্বেচ্ছাচারিতার আশ্রয় নিয়েছেন। আমরা আজ সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের প্রতারণার কথা তুলে ধরেছি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারপদ্ধতি বাতিলের সময় যে জাজমেন্ট (রায়) প্রথমে ওপেন কোর্টে দেওয়া হয়েছিল, পরে চূড়ান্ত রায়ের সময় সেই রায়ের অংশটুকু বাতিল করে দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন তিনি। প্রধান বিচারপতির মতো আসনে অধিষ্ঠিত থেকে খায়রুল হক এই স্বেচ্ছাচারী কাজ করেছেন।
তাজুল ইসলাম আরও বলেন, এই বিচারকরা গুরুত্বপূর্ণ মামলা ফেলে রেখে সরকারের ইচ্ছা অনুযায়ী অগুরুত্বপূর্ণ মামলাকে বিচারের জন্য নিয়ে আসতেন। কাউকে ফাঁসি দেওয়ার প্রয়োজনে সেই মামলাকে আগে নিয়ে আসা, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অন্য মামলাকে পেছনে ফেলে দেওয়া এটা বিচারকদের স্বেচ্ছাচারিতা। এটা রোধ করতে সাংবিধানিক অথবা আইনিব্যবস্থা থাকা উচিত বলে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান অভিমত প্রকাশ করেছেন।
তিনি আরও বলেছেন, বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশনের কাছেও তিনি অভিমত পাঠিয়েছিলেন। আমরা যখন সাবমিশন (দাখিল) রাখছিলাম যে বিচারব্যবস্থাকে এভাবে ধ্বংস করা হয়েছিল এবং বিচারব্যবস্থাকে ব্যবহার করেই বাংলাদেশের স্বৈরশাসন পাকাপোক্ত হয়েছিল, তখন তিনি এই কথাটা বলেছেন যে, এই বিচারপতিদের অথবা বিচারকদের ব্যাপারেও সুনির্দিষ্ট বিধান থাকা উচিত। যেন ভবিষ্যতে তারা আর কখনও এমন হতে না পারেন।