বাংলাদেশের বিপক্ষে টানা তৃতীয় ওয়ানডে সিরিজ জয়ের একদম দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছে আফগানিস্তান। ২০২৩ ও ২০২৪ সালে আগের দুই দ্বিপাক্ষিক সিরিজেও জয় পেয়েছিল তারা। আর গত বুধবারের ৫ উইকেটের জয়টি ছিল আফগানদের জন্য স্বস্তির, কারণ এর আগে তারা টানা পাঁচটি আন্তর্জাতিক ম্যাচে হেরেছিল।
বাংলাদেশের জন্য দৃশ্যপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। সাম্প্রতিক সময়ে এই ফরম্যাটে ধারাবাহিক পারফরমার খুঁজে পাচ্ছে না দলটি। গত এক বছরে তারা ওয়ানডেতে জিতেছে মাত্র দুটি ম্যাচ, যা তাদের বিপর্যয়কে আরও প্রকট করেছে।
বুধবারের ম্যাচেই স্পষ্ট হয়েছে, কেন তারা আর আগের মতো ওয়ানডেতে শক্তিশালী নয়। ভালো শুরুর পর সহজাত ভুলে কয়েকটি উইকেট হারায় বাংলাদেশ, আর যদিও এক পর্যায়ে চতুর্থ উইকেটে ১০১ রানের জুটি গড়েছিল, কিন্তু এরপর রশিদ খানের নিখুঁত বোলিংয়ে ব্যাটাররা ভেঙে পড়ে।
মেহেদী হাসান মিরাজ, জাকের আলি ও নুরুল হাসান—তিনজনই রশিদের বলে এলবিডব্লিউ হন। ফলে কোচ ফিল সিমন্সকে শনিবারের ম্যাচের আগে বোলারদের মোকাবিলার নতুন পরিকল্পনা করতে হবে।
তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে আফগানদের আজমাতউল্লাহ ওমরজাই ছিলেন অলরাউন্ড তারকা—বল হাতে নিয়েছেন তিন উইকেট, আর ব্যাট হাতে দলের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ৪০ রান করেন। গত কয়েক বছরে ওয়ানডে ক্রিকেটে তার পারফরম্যান্স ধারাবাহিকভাবে উন্নতির দিকে।
অন্যদিকে, রশিদ খানও ছিলেন উজ্জ্বল—৩৮ রানে তিন উইকেট নিয়ে তিনি ওয়ানডে ক্রিকেটে ২০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন।
আফগানিস্তানের জয়ে আরও কিছু দারুণ দিক ফুটে ওঠে। রহমানউল্লাহ গুরবাজ চাপের মুহূর্তে পরিণত ব্যাটিংয়ে দলকে স্থিতি দেন, নিজের প্রাকৃতিক আগ্রাসনকে দমন করে দলের প্রয়োজনে খেলেন। রহমত শাহ ও হাশমতুল্লাহ শাহিদিও নিজেদের মতো করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন, ব্যাটিং লাইনআপে ভারসাম্য বজায় রাখেন কঠিন সময়েও।
বাঁহাতি স্পিনার নাঙ্গেয়ালিয়া খারোতেও ছিলেন নিঃশব্দ নায়ক—পুরো ১০ ওভার বোলিংয়ে মাত্র ৩১ রান খরচ করে সাইফ হাসানকে আউট করেন। এ ধরনের ধারাবাহিক ‘টিম প্লেয়ার’-রাই আফগানিস্তানকে ওয়ানডে ফরম্যাটে ধারাবাহিক রাখছে।
আবুধাবির ধীর পিচে আফগানিস্তান চারজন স্পিনার খেলিয়ে সুবিধা পেয়েছে। খারোতে ও গজনফারের ওপর তাদের আত্মবিশ্বাস স্পষ্ট।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ রিশাদ হোসেনকে না খেলিয়ে হয়তো সুযোগ হারিয়েছে। টি-টোয়েন্টি সিরিজে বাংলাদেশ ৩-০ ব্যবধানে জয় পেলেও, ওয়ানডে সিরিজ বাঁচিয়ে রাখতে হলে সেই ছন্দটাই এখন কাজে লাগাতে হবে।
আফগানিস্তানের দলে যেখানে রশিদ, নবী, ওমরজাইদের মতো তারকা অলরাউন্ডার ও রহস্য স্পিনাররা দৃষ্টি কাড়েন, সেখানে রহমত শাহ নীরবে দলের মূলভিত্তি হয়ে আছেন। ব্যাটিং অর্ডারের মাঝখানে থেকে তিনি বহু জয়গাঁথার নায়ক।
বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচেও তার অমূল্য অর্ধশতক ও গুরবাজের সঙ্গে ৭৮ রানের জুটি দলকে জয়ের ভিত গড়ে দেয়। ওমরজাই পরে সেই ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে জয়ের কাজ সম্পন্ন করেন।
রহমতই দলের “অ্যাকুমুলেটর”—যিনি চুপচাপ রান যোগ করেন, আর তার এই স্থিরতা ছাড়া রশিদ, নবী কিংবা ওমরজাইদের ঝলকও সম্ভব নয়।
বাংলাদেশের সাবেক তিন ফরম্যাটের অধিনায়ক নজমুল হোসেন শান্তর ব্যাট থেকে সম্প্রতি রান আসছে না। গত ওয়ানডে সিরিজে শ্রীলংকার বিপক্ষে তিন ম্যাচে তার মোট রান ছিল মাত্র ৩৭।
ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে রাজশাহীর হয়ে চার ম্যাচে মাত্র একটি ফিফটি করেই তিনি আফগানিস্তান সিরিজে এসেছেন।
ফরম্যাট আলাদা হলেও, বাংলাদেশের ৩ নম্বর ব্যাটার হিসেবে দলের এখন তার কাছ থেকে আরও বেশি অবদান দরকার।
আবুধাবির পিচ ধীরগতিরই থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ব্যাটারদের তাই রান তোলার নতুন কৌশল খুঁজে বের করতে হবে। সন্ধ্যা জুড়েই গরম আবহাওয়া বিরাজ করবে।
# গত ১২ মাসে বাংলাদেশ জিতেছে মাত্র দুটি ওয়ানডে, ফলে তারা এখন আইসিসি ওয়ানডে র্যাংকিংয়ে ১০ নম্বরে।
# রহমত শাহ আফগানিস্তানের ইতিহাসে প্রথম ব্যাটার যিনি ১১৯ ইনিংসে ৪০০০ ওয়ানডে রান পূর্ণ করেছেন। এখন তিনি সব ফরম্যাটে ৫০০০ আন্তর্জাতিক রানের থেকে মাত্র দুই রান দূরে।
# প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশ খেলেছিল ১৬৮টি ডট বল, যা মোট বলের ৫৭.৩৪%। বিপরীতে আফগানিস্তান খেলেছিল ৫৩.৩৬% ডট বল।
আফগানিস্তানের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে অপরিবর্তিত একাদশ নামানোর সম্ভাবনা। আর বাংলাদেশের স্পিন আক্রমণ শক্তিশালী করতে রিশাদ হোসেনকে দলে আনার সম্ভাবনা।
সম্ভাব্য একাদশ আফগানিস্তান: রহমানউল্লাহ গুরবাজ (উইকেটকিপার), ইব্রাহিম জাদরান, সেদিকুল্লাহ আতাল, রহমত শাহ, হাশমতুল্লাহ শাহিদি (অধিনায়ক), আজমাতুল্লাহ ওমরজাই, মোহাম্মদ নবী, রশিদ খান, গজনফার, নাঙ্গেয়ালিয়া খারোতে, বশির আহমদ।
সম্ভাব্য একাদশ বাংলাদেশ: তানজিদ হাসান, সাইফ হাসান, নজমুল হোসেন শান্ত, তাওহিদ হৃদয়, মেহেদী হাসান মিরাজ (অধিনায়ক), জাকের আলি, নুরুল হাসান (উইকেটকিপার), তানজিম হাসান সাকিব, রিশাদ হোসেন, তানভির ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান।