জার্মান বিশ্ববিদ্যালয় ভারতীয় শিক্ষার্থীদের কাছে এত জনপ্রিয় কেন

ইউরোপের দেশগুলোর মধ্য জার্মানিতে বিদেশি শিক্ষার্থীরা বেশি পড়তে যান ছবি: সংগৃহীত সত্যের পথে

বিদেশে উচ্চশিক্ষার গন্তব্য হিসেবে ভারতীয় শিক্ষার্থীদের প্রথম পছন্দের তালিকার শীর্ষ দেশ এখন জার্মানি। ‘আপগ্রেড ট্রান্সন্যাশনাল এডুকেশন (টিএনই) রিপোর্ট ২০২৪-২৫’ অনুযায়ী, ক্যারিয়ারকেন্দ্রিক লক্ষ্য, সাশ্রয়ী খরচ ও ভিসানীতির পরিবর্তনের কারণে দেশটির শিক্ষার্থীদের পছন্দে বড় রকমের পরিবর্তন এসেছে। দেশটির গণমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে এ–সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাকে পেছনে ফেলে শীর্ষে জার্মানি

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন বছরে ১৩ শতাংশ কমেছে। কানাডায় শিক্ষার্থী পড়তে যাওয়ার হার ১৭.৮৫ থেকে নেমে ৯.৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। বিপরীত চিত্র জার্মানির ক্ষেত্রে। দেশটিতে ভারতীয় শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ২০২২ সালের ১৩.২ থেকে বেড়ে ২০২৪-২৫ সালে ৩২.৬ শতাংশে পৌঁছেছে।

অন্য ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রতিও ভারতীয় শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বেড়েছে, যেমন আয়ারল্যান্ডে ৩.৯ শতাংশ এবং ফ্রান্সে ৩.৩ শতাংশ, যা ক্রমে বাড়ছে। পিছিয়ে কিন্তু নেই মধ্যপ্রাচ্যের সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। দেশটির অবস্থান এখন শক্তিশালী, যেখানে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ৪২ শতাংশ ভারতীয়।

জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন অনেক ভারতীয় শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন ছবি: সংগৃহীত সত্যের পথে

স্থায়ী নাগরিকত্ব নয়, আগ্রহ বেশি ক্যারিয়ার গঠনে

১ লাখ শিক্ষার্থীর ওপর করা এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বিদেশে পড়াশোনার উদ্দেশ্যে বড় রকমের পরিবর্তন এসেছে। মাত্র ১৯ দশমিক ৯ শতাংশ শিক্ষার্থী বলেছেন, তাঁদের প্রধান লক্ষ্য বিদেশে স্থায়ী নাগরিকত্ব। অপর দিকে ৪৫ দশমিক ৭ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তাঁদের অগ্রাধিকার ক্যারিয়ার গড়ার প্রতি।

এর মানে, শিক্ষার্থীরা এখন নাগরিকত্বের চেয়ে পেশাগত সুযোগ ও দক্ষতা অর্জনকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। জার্মানির শক্তিশালী অর্থনীতি এবং প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও ব্যবস্থাপনা খাতে দক্ষ জনবলের চাহিদা এই পরিবর্তনের অন্যতম বড় কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।

সাশ্রয়ী খরচে পড়াশোনার সুযোগের একটি নিয়ামক

পড়াশোনার খরচ শিক্ষার্থীদের অন্যতম প্রধান চিন্তার বিষয়। সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৩৩ শতাংশ শিক্ষার্থী পড়াশোনার জন্য শিক্ষা ঋণ নেন এবং ২৮ শতাংশ শিক্ষার্থী শিক্ষাবৃত্তির ওপর নির্ভর করেন। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার তুলনায় জার্মানির টিউশন ফিমুক্ত বা কম খরচের শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের জন্য বড় সুবিধা দিচ্ছে।

পোস্টগ্র্যাজুয়েট ও ম্যানেজমেন্ট কোর্সের চাহিদা বেড়েছে

ভারতীয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে পোস্টগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম সবচেয়ে জনপ্রিয়। সমীক্ষা বলছে, ৮৬ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী মাস্টার্স ডিগ্রি বেছে নিয়েছেন। গত তিন বছরে ম্যানেজমেন্ট ও এমবিএ কোর্সের জনপ্রিয়তা ৩০ থেকে বেড়ে ৫৫ দশমিক ৬ শতাংশে পৌঁছেছে। পাশাপাশি এসটিইএম (বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত) ক্ষেত্রেও শক্তিশালী চাহিদা আছে, যা বর্তমানে ৩৮ দশমিক ৯ শতাংশ।

বিদেশে পড়াশোনার এই পরিবর্তন বৈশ্বিক প্রবণতার প্রতিফলন। ভারতীয় শিক্ষার্থীরা এখন সাশ্রয়ী শিক্ষা, ক্যারিয়ারভিত্তিক সুযোগ ও বিশ্বব্যাপী চাকরির সম্ভাবনাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার জটিল ভিসানীতি ও ক্রমবর্ধমান খরচের কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগ্রহ কমছে দেশ দুটির প্রতি। অন্যদিকে জার্মানির কম খরচে পড়াশোনার সুযোগ, শক্তিশালী চাকরির বাজার ও সহজ নীতি দেশটিকে উচ্চশিক্ষার জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত করেছে।

এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে গিয়ে আপগ্রেড স্টাডি অ্যাব্রোডের ইউনিভার্সিটি পার্টনারশিপের অ্যাসোসিয়েট ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রাণিত সিং বলছেন, আজ ভারতীয় শিক্ষার্থীরা তাঁদের শিক্ষার পছন্দ সম্পর্কে অনেক বেশি সচেতন। তাঁরা ভূরাজনৈতিক বিষয়ে সচেতন, ব্যয়ের ক্ষেত্রে সচেতন, কঠোর ভিসাব্যবস্থা ও অনিশ্চিত শিক্ষা-পরবর্তী বাস্তবতা সম্পর্কে সচেতন। তিনি আরও বলেন, ঐতিহ্যবাহী ‘বিগ ফোর’–এ (অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র) গন্তব্য আর গুরুত্বের বিবেচনায় ওপরের দিকে নয়, এর পরিবর্তে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ভবিষ্যতের জন্য বিকল্প হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। বিদেশে পড়াশোনার ক্ষেত্রে উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও সাশ্রয়ী মূল্যের কারণে ভারতীয় শিক্ষার্থীরা পরবর্তী প্রজন্মের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন।

ঐতিহ্যবাহী ‘বিগ ফোর’–এ গন্তব্য আর গুরুত্বের বিবেচনায় ওপরের দিকে নয়, এর পরিবর্তে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ভবিষ্যতের জন্য বিকল্প হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে ভারতীয়দের কাছে।
Scroll to Top