

জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনসহ ৫ দফা দাবিতে তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এদিকে খেলাফত মজলিসও রাজপথে কিছুটা অভিন্ন ৬ দফা দাবিতে ৩ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। তিন দলের এই কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ, ১৯ সেপ্টেম্বর সব বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভ এবং ২৬ সেপ্টেম্বর সব জেলা-উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল। পৃথক সংবাদ সম্মেলনে সোমবার এসব অভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। ৫ দফার মধ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন পিআর পদ্ধতিতে ফেব্রুয়ারিতেই সংসদ নির্বাচন চায়। যদিও খেলাফত মজলিস সংসদের উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চাচ্ছে। অভিন্ন তারিখে কর্মসূচি ঘোষণা করা হলেও এখনই তারা যুগপৎ আন্দোলন কর্মসূচিতে যাওয়ার সিদ্ধান্তে যাচ্ছে না।
পাঁচ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে-জুলাই সনদের ভিত্তিতে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের আয়োজন; সংসদের উভয়কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু করা; অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা; ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।
রাজধানীর মগবাজারে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ১৬৬টি প্রস্তাবের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় মিলিত হয়। এর মধ্যে ৮৪টি প্রস্তাব সিদ্ধান্ত আকারে গৃহীত হয়। অনেক প্রস্তাবের সঙ্গে ২/১টি রাজনৈতিক দল ভিন্নমত পোষণ করায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। এতে বলা হয়, ‘আমরা মনে করি, জুলাই জাতীয় সনদের আইনগত ভিত্তি প্রদান ব্যতীত ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত অভ্যুত্থান ও তার অর্জন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে।’ জামায়াত নির্বাচন কমিশন ঘোষিত রোডম্যাপ (পথনকশা) অনুযায়ী অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও ভয়ভীতিমুক্ত গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে আসছে। এতে বলা হয়, ‘আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা অনুযায়ী কালোটাকার ব্যবহার বন্ধ, ভোটকেন্দ্র দখল, পেশিশক্তি প্রদর্শন ও ভোটের বিভিন্ন অনিয়ম ও অপতৎপরতা বন্ধ, কোয়ালিটিসম্পন্ন পার্লামেন্ট এবং দক্ষ আইনপ্রণেতা তৈরিসহ প্রতিটি ভোট মূল্যায়নের লক্ষ্যে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের জন্য জোর দাবি জানিয়ে আসছি। বাংলাদেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, কলামিস্ট, লেখক, গবেষক, শিক্ষাবিদ ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন।’ জনগণের দাবিগুলো কার্যকর করার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, এমন অবস্থায় জনগণের দাবি আদায়ের জন্য গণ-আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই।
তাই জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এবং জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশকে ন্যায়ভিত্তিক ও জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্ররূপে গড়ে তোলার লক্ষ্যে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আন্দোলনের পাঁচ দফা গণদাবি জাতির সামনে তুলে ধরা হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখনো যুগপৎ আন্দোলনের সিদ্ধান্ত হয়নি। জামায়াতের মিডিয়া ও প্রচার বিভাগের প্রধান অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়েরের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম ও হামিদুর রহমান আযাদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য সাইফুল আলম খান প্রমুখ।
দেশের ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলো জোটবদ্ধ হওয়ার কাছাকাছি-চরমোনাই পীর : এদিকে পুরানা পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে পাঁচ দাবিতে তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাইর পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম। তিনি বলেন, আমরা ৫ আগস্টের পর বলেছিলাম, ইসলামি দলগুলো একটি বাক্সে যাওয়ার ব্যাপারে আমরা একটা ঘোষণা দিয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ, এটা অনেকটাই কাছাকাছি। এরকম একটা পরিবেশ আল্লাহর রহমতে তৈরি হয়েছে।’ চরমোনাই পীর বলেন, ‘দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ধারাবাহিক আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।’ জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এই আন্দোলনের সঙ্গে রয়েছে উল্লেখ করে চরমোনাই পীর বলেন, ‘আন্দোলন থেকে সরেননি। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির ব্যাপারে তারা কিন্তু একমত হয়েছেন।’ যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি একই প্ল্যাটফর্মে হবে কি না, তা সময় হলে জানা যাবে উল্লেখ করে চরমোনাই পীর জানান, এই আন্দোলনের মাধ্যমে তারা সরকারকে চাপে রাখতে চান। চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে যারা অংশীজন ছিল, তাদের নিয়ে এই আন্দোলন চলবে। ইসলামী আন্দোলনের অবস্থা তুলে ধরে চরমোনাই পীর জানান, তারা জুলাই সনদের বাস্তবায়ন ও এর আইনি ভিত্তি চান। জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতেই তারা আগামী জাতীয় নির্বাচন চান। সংবাদ সম্মেলনে দলটির যুগ্মমহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমানের সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন মহাসচিব প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী ও অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, যুগ্ম মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম প্রমুখ।
খেলাফত মজলিসের ৬ দফা : জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে (পিআর) নির্বাচনসহ দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে ছয় দফা দাবি জানিয়েছে খেলাফত মজলিস। এসব দাবি পূরণে ৩ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন মহাসচিব ডা. আহমদ আবদুল কাদের। সোমবার দুপুরে রাজধানীর পল্টনে খেলাফত মজলিসের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ছয় দফা দাবি তুলে ধরেন তিনি। এ সময় কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
শেয়ার করুন:
- Click to share on Facebook (Opens in new window) Facebook
- Click to share on WhatsApp (Opens in new window) WhatsApp
- Click to share on Telegram (Opens in new window) Telegram
- Click to email a link to a friend (Opens in new window) Email
- Click to share on LinkedIn (Opens in new window) LinkedIn
- Click to share on Threads (Opens in new window) Threads