জাবি প্রাধ্যক্ষের বাসায় কাজ না করায় ৩ কর্মী চাকরিচ্যুত অভিযোগ।


জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ফজিলাতুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নজরুল ইসলামের বাসায় কাজ না করায় তিনজন কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করে অন্য তিনজনকে একইপদে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগ অনুযায়ী, হলে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া তিন কর্মচারীকে নিজ বাসায় কাজের আদেশ দেন। এই আদেশ মানতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের বরখাস্ত করে অন্য তিন কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা দেড় বছর ধরে হলে কর্মরত ছিলেন। তবে বাসায় কাজ করতে চাপ দেওয়ার অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেছেন প্রাধ্যক্ষ।

চাকরিচ্যুত তিন কর্মচারী হলেন- ফজিলাতুন্নেছা হলের ডাইনিং অ্যাটেনডেন্ট মিরা রানী রায়, চম্পা ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী মোছা. সোমা। গত রবিবার তাদের চাকরিচ্যুত করে নতুন করে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সিতা রানী, রহিমা আক্তার ও সুমা বেগমকে।

আজ মঙ্গলবার ভুক্তভোগী তিন কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানায়, কোনো কারণ না জানিয়েই তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়। প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নজরুলের বাসায় কাজ করতে অস্বীকৃতি জানানোয় তাদের বাদ দিয়ে নিজ বাসার কর্মচারীদের হলের কাজে নিয়োগ দিয়েছেন।

ভুক্তভোগী কর্মচারীরা অভিযোগ করে বলেন, ‘হলে আমরা মোট ১২ জন কাজ করি। হঠাৎ করেই আমাদের জানানো হয়, আমরা যেন হলে আর না আসি। কোনো কারণ জানতে চাইলেও কোনো উত্তর পাইনি। পরে জানতে পারি—আমাদের বাদ দিয়ে হলে প্রাধ্যক্ষ স্যারের বাসার কর্মচারীদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। আমরা দেড় বছরের বেশি সময় ধরে কোনো অভিযোগ ছাড়াই কাজ করেছি। কিন্তু এখন আমাদের পেটে লাথি মারা হলো। দুইজন ডাইনিংয়ে আর একজন ক্লিনার হিসেবে কাজ করতাম। আমরা ওয়ার্ল্ড সিকিউরিটি কোম্পানির মাধ্যমে আউটসোর্সিং কর্মচারী হিসেবে চাকরি করছিলাম।’

তারা আরও বলেন, ‘২০২৩ সালে নিয়োগের পর থেকে আমরা স্বাভাবিকভাবে কাজ করে আসছিলাম। তবে গণঅভ্যুত্থানের পর হলটিতে অধ্যাপক নজরুল ইসলাম দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই হলের কাজের পাশাপাশি তার বাসায় গিয়েও আনুষঙ্গিক কাজ করার জন্য বলা হয়। তবে কর্মচারীদের অনেকেই প্রাধ্যক্ষের বাসায় কাজ করতে গেলেও আমরা তিনজন অস্বীকৃতি জানাই। গত এপ্রিল মাসে প্রাধ্যক্ষের বাসায় কাজ করতে না গেলে চাকরিচ্যুত করা হবে বলেও আমাদেরকে হল প্রশাসন থেকে হুমকি দেওয়া হয়। একপর্যায়ে বিষয়টি ক্যাম্পাসের সাংবাদিকদের মধ্যে জানাজানি হলে বিষয়টি হলের এক ম্যাডামের মাধ্যমে সমাধান হয়। তবে হঠাৎ করে আমাদেরকে গত রবিবার চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।’

এই বিষয়ে ফজিলতুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘কোম্পানি বিষয়টি পরিচালনা করেছে, আমাদের এখতিয়ার ছিল না। আমরা ক্লিনার ও সুইপার চেয়েছিলাম। কিন্তু কর্মচারীরা কাজ করতে রাজি হননি। বারবার অনুরোধের পরও কোম্পানি জানায় আগামী ১ তারিখ থেকে নতুন ক্লিনার আসবে।’

বরখাস্তের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কর্মচারীরা কখনো বাসায় কাজ করেননি এবং আমি বলিনি। কোম্পানি সকল কর্মচারিদের জিজ্ঞাসা করেছিল—সুইপারের কাজ করবেন কিনা, যারা অস্বীকার করেছেন তাদের পরিবর্তন করা হয়েছে। কোম্পানি যেভাবে কাজ দেবে সেভাবেই করতে হবে। হলে ডাইনিং নেই, তাই নতুন নিয়োগপ্রাপ্তরা লিখিতভাবে জানিয়েছে—তারা সুইপারের কাজও করবে। কিন্তু যারা চাকরিচ্যুত হয়েছেন তারা রাজি না থাকায় বাদ পড়েছেন।’

Leave a Reply

Scroll to Top