গুমের সঙ্গে জড়িত দুই পা কাটা মরদেহের রহস্য ফাঁস

ফতুল্লা মডেল থানা। ছবি: সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জে ড্রামের ভেতর থেকে দুই পা বিচ্ছিন্ন অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধারের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। মূলত আর্থিক ও পরকীয়া প্রেমের কারণেই এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় বলে জানায় পুলিশ।

এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ গতকাল মঙ্গলবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ৭ জনকে আটক করেছে।

আটককৃতরা হলেন নিহতের দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিনা (৪০), তার দুই মেয়ে সুমনা (২০), সানজিদা (১৮), পরকিয়া প্রেমিক রাসেল ওরফে ঠোঙ্গা রাসেল (৪৫), চয়ন (৩৮), মানিক (৩২) ও জুয়েল (৩০)।

আটককৃতদের মধ্যে নিহতের দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিনা দুই মেয়ে সুমনা-সানজিদা ও চয়নকে সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি এলাকা থেকে আটক করে পুলিশ।

এদিকে ফতুল্লার পিলকুনির যে স্থান থেকে নয়নের খন্ডিত পা উদ্ধার করা হয়েছে সেখান থেকেই মানিককে আটক করা হয়। এছাড়া জুয়েলকে ফতুল্লা তার নিজ এলাকা থেকে আটক করা হয়।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ঘটনার সঙ্গে আরও কয়েকজনের নাম সন্দেহভাজনের তালিকায় রয়েছে। তাদেরকেও আটকের চেষ্টা চলছে।

এর আগে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার উত্তর শিয়ারচর এলাকার একটি নির্জন স্থানে ড্রামের ভেতর থেকে দুই পা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় অর্ধগলিত অবস্থায় নয়নের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে পুলিশ অল্প সময়ের মধ্যে তার পরিচয় শনাক্ত করে কয়েক ঘন্টার মধ্যে সন্দেহজনক দুইজনকে আটক করে। আটককৃতরা হলেন নয়নের স্ত্রী সাবিনা ও তার পরকীয়া প্রেমিক রাসেল। এরপর তাদের দেওয়া তথ্য মতে পুলিশ এদিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে পিলকুনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে হামিদা বেগমের বাড়ির সামনে থেকে খন্ডিত ওই দুইটি পা উদ্ধার করে।

এদিকে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) তারেক আল মেহেদী  জানান, নিহত নয়ন মাদক মামলায় ৩ বছর জেলখানায় ছিলেন। তিনি পেশায় একজন প্রাইভেটকার চালক। পাশাপাশি মাদক ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন তিনি। তার বিরুদ্ধে হত্যা ও মাদকসহ একাধিক মামলাও ছিল। এদিকে নয়নের সঞ্চিত প্রায় ৩ লাখ টাকা ছিল তার স্ত্রী সাবিনার কাছে। ১০/১২ দিন আগে নয়ন জেল থেকে বের হয়ে স্ত্রীর কাছে সেই টাকা চান। জেলে থাকায় তার মামলা চালাতে সেই টাকা খরচ হয়েছে বললে নয়ন সেটি বিশ্বাস করেননি। এদিকে দীর্ঘদিন জেলে থাকায় সাবিনার সঙ্গে রাসেলের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

রাসেলও একজন মাদক ব্যবসায়ী বলে জানায় পুলিশের এই কর্মকর্তা।

তিনি আরও জানান, রাসেলের সঙ্গে সাবিনার সম্পর্কের বিষয়টি নয়ন জানতে পারেন। এসকল বিষয় নিয়ে নয়নের সঙ্গে সাবিনার ঝগড়া হয়। পরবর্তীতে এসব বিষয় নিয়ে আরও তিক্ততা শুরু হয় তাদের মধ্যে। এর রেশ ধরেই গত রোববার নয়নকে হত্যা করা হয়। হত্যার পর একদিন নয়নের মরদেহ বাসাতেই ছিল। এরপর গত সোমবার রাতে নয়নের পা দুইটি বিচ্ছিন্ন করা হয় এবং দেহের উপরিভাগ ড্রামে ভরে শিয়ারচর এলাকার নির্জন স্থানে ফেলে রাখা হয়। বিচ্ছিন্ন করা পা দুইটি পিলকুনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে হামিদা বেগমের বাড়ির সামনে বস্তায় ভরে ফেলে রাখা হয়। পরে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে দুর্গন্ধ ছড়ালে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দিলে পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে।

পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও জানান, হত্যাকাণ্ডটি নয়নের স্ত্রীই ঘটিয়েছে। তবে তার সঙ্গে আর কারা জড়িত আছে, সেটি জানার চেষ্টা চলছে।

Leave a Reply

Scroll to Top