

এখন কিছু কিছু ইংলিশ বলতে পারেন তিনি, কোচ নাসিরউদ্দিন ফারুকই তাঁর ইংলিশ স্যার। স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, ‘তোমাকে এখন বিশ্বক্রিকেট চিনেছে, অনুশীলনের সময় কিছু বলতে চাইলে ইংলিশে বলবে।’
মারুফা চেষ্টা করছেন, কোচও তাঁকে ইংলিশেই উত্তর দিচ্ছেন। নারী বিশ্বকাপে দুটি ম্যাচে মারুফা আক্তার তাঁর বোলিংয়ের সুইং দেখিয়ে বিশ্বক্রিকেটকে মুগ্ধ করেছেন। তাঁর জীবনগল্প ক্রিকেট বিশ্বের কাছে পৌঁছে দিতে আইসিসিও সাক্ষাৎকার নিয়েছে। তবে সেখানে ইংলিশ নয়, মাতৃভাষাতেই উত্তর দিয়েছেন মারুফা। তখনই জীবনের কঠিন অধ্যায় পেরিয়ে আসার কথা বলতে গিয়ে চোখের পানি আটকাতে পারেননি তিনি। ‘কোথাও যদি বিয়ে বা কোনো কিছু (অনুষ্ঠান) হয়, দাওয়াত দেয় না? আমাদের সেটিও দিত না। বলত ওদের ড্রেস নেই, ওইখানে গেলে আমাদের মানসম্মান থাকবে না। এরকম বলত অনেকে। একটা সময় ছিল যখন আমরা ঈদেও নতুন জামা কিনতে পারিনি।’
কৃষক বাবার সেই লক্ষ্মী কন্যাকেই এখন নারী ক্রিকেটের ‘কুইন অব সুইং’ বলে থাকেন অনেকে। নীলফামারীর সৈয়দপুরের দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান মারুফা। ছয় সদস্যের পরিবারে অভাব ছিল। করোনার সময় বাবার সঙ্গে জমিতে জোয়ালও টানতে হয়েছে তাঁর। যে ছবি এখনও সামাজিক মাধ্যমে হৃদয় ছুঁয়ে যায়। সেই মারুফাকেই এখন পুরস্কার মঞ্চে ডাকা হয়। জীবনের কঠিন এই পথচলার পথে মাঝে কত তাচ্ছিল্য, কত ক্ষুরধার হৃদয়ের ক্ষত ছিল।
কৃষক বাবার লক্ষ্মীকন্যা বিশ্বাস করতেন একদিন এই ক্রিকেটই তাঁকে তাঁর লক্ষ্যে পৌঁছে দেবে। ‘এখন আমি যেভাবে পরিবারকে সাপোর্ট করছি, অনেক ছেলেও হয়তো সেভাবে পারছে না। এটি অন্যরকম একটা শান্তি। ছোটবেলায় ভেবেছি মানুষ কবে আমাদের এভাবে দেখবে, হাততালি দেবে। এখন টিভিতে (নিজেকে) দেখলে লজ্জা লাগে (হাসি)।’
গল্প হলেও সত্যি, মারুফার এই জীবনকাহিনি। ‘আমার বাবা একজন কৃষক। আমাদের ওই রকম টাকা-পয়সা ছিল না। আব্বা যখন বাসায় থাকত না, বাজারে যেত। তখন মাকে এসে অনেকে অনেক কথা বলত। অনেক খারাপ খারাপ কথা বলত, যেগুলো মেনে নেওয়ার মতো ছিল না। আমার মা রুমে গিয়ে কান্না করত। আমি আবার গিয়ে এক কোণে কান্না করতাম। যে আমার জন্য এতকিছু হচ্ছে।’
মেয়ে ক্রিকেট খেলে এই ব্যাপারটি মেনে নিতে পারত না তাঁর প্রতিবেশী অনেকেই। তাঁর ক্রিকেট প্রতিভার আলো দরিদ্রতার সব অন্ধকার দূর করে দিয়েছে। বিসিবির সহায়তায় বিকেএসপিতে ভর্তি হয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। ২৩ নভেম্বর নারী আইপিএলের নিলাম, সেখানেও আকর্ষণের কেন্দ্রে থাকতে পারেন তিনি। কেননা নারী বিশ্বকাপে এরই মধ্যে তিন ম্যাচ ৫ উইকেট শিকার করেছেন তিনি।